প্রতীকী ছবি

ট্রল বা ব্যঙ্গ করা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দেয়। হাসাহাসি করা, ব্যঙ্গ করে মজা নেওয়া ও অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা— ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় দেয়। এটা মুমিনের কাজ নয়। কারণ একজন মুমিন কখনো তার অপর ভাইকে বিদ্রুপ করতে পারে না। কারো দোষচর্চা করতে পারে না। কারো ওপর মিথ্যা অপবাদ দিতে পারে না।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবা করে না তারাই তো জালিম।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

মুমিনের জন্য ভালো কামনা করতে হয়

উল্লিখিত আয়াতে কোনো সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে নিয়ে বিদ্রুপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকার মানুষ নিয়ে, এক জেলা অন্য জেলা নিয়ে, এক দল অন্য দলকে নিয়ে হরহামেশাই ট্রল করে থাকি। কারও কারও অবস্থা দেখে মনে হয়, এরা ট্রল করা ইবাদত মনে করে। নাউজুবিল্লাহ। কারও অসুস্থতা নিয়ে, কারও মৃত্যু নিয়েতো ট্রল করার প্রশ্নই ওঠে না। এমনও হতে পারে, আপনি যার অসুস্থতা নিয়ে ট্রল করছেন, তাকে মরার আগেই জাহান্নামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অথচ তার আগেই আল্লাহ আপনাকেই মৃত্যু দিয়ে উঠিয়ে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন : খারাপ ধারণা মিথ্যার মতো গুনাহ

জারির ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার থেকে তিনটি বিষয়ে ‘বাইআত’ নিয়েছেন। ‘এক. সালাত কায়েম করব। দুই. জাকাত আদায় করতে থাকব। তিন. প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনা করব।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫)

অসুস্থতা ও মৃত্যু নিয়ে ট্রল করতে নেই

মানুষ যেকোনো সময় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হতে পারে। কেউ জানে না, কখন, কোথায়, কীভাবে আল্লাহ তাকে তলব করবেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কেউ জানে না, আগামীকাল সে কী অর্জন করবে, আর কেউ জানে না, কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সম্যক।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ৩৪)

একারণে কারো অসুস্থতা ও মৃত্যু নিয়ে ট্রল করতে নেই। সে কাফের হলেও না। একদিন আমাদের রাসুল (সা.) এর পাশ দিয়ে একটি জানাজা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। এসময় তাঁকে বলা হয়েছিল, জানাজাটি একজন ইহুদির। তিনি বলেছিলেন, ‘সেকি মানুষ নয়?’ (বুখারি, হাদিস : ১৩১২)

খারপ ধারণা করলে যে গুনাহ হয়

দেখুন, মহানবী (সা.) একজন অমুসলিমের মৃত্যুতেও কিভাবে সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আর আমরা নোংরা রাজনীতি করতে গিয়ে হিংসার বশীভূত হয়ে অপর মুসলিমকে নিয়ে  কুৎসা রটনা করছি প্রতিনিয়ত।

রাসুল (সা.) ইরশাদ বলেন, ‘তোমরা কারো প্রতি (খারাপ) ধারণা থেকে বিরত থাকো। কেননা কারো প্রতি (খারাপ) ধারণা করা, সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করো না, গোয়েন্দাগিরী করো না, পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষন করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না। বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)

প্রিয় বন্ধু! আসুন কোনো ব্যক্তি, জেলা বা দেশকে নিয়ে ট্রল করা থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।