হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, শ্রেষ্ঠ মানুষ সে-ই যার আয়ু দীর্ঘ হয় এবং কর্ম হয় উত্তম। তিরমিযী, হাদীস ২৩২৯

দীর্ঘায়ু যদি অসৎকর্মে ব্যবহার হয়, তবে তা অশেষ ক্ষতিকর। মানুষের শ্রষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নিহিত সৎকর্মের মধ্যে, অন্য কিছুতে নয়।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, বনূ খুযা'আ গোত্রের শাখা বনূ বালীর দুজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাদের একজন শহীদ হয়ে যায়। অপরজন আরও একবছর জীবিত থাকে। তারপর সেও মারা যায়। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রাযি. বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, যে ব্যক্তি পরে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে সে শহীদ ব্যক্তির আগে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আমি অবাক হলাম। ভোরবেলা আমি বিষয়টা নবীজি (সা.)কে জানালাম। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি কি শহীদ ব্যক্তির পর রোযা রাখেনি এবং একবছর নামায পড়েনি। মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৩৮৯.

হাদিসে দীর্ঘজীবি নেক আমলকারীকে শ্রেষ্ঠ মানুষ বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি বেশি দিন বাঁচবে, সে আমলের জন্য বেশি সময় পাবে। সে হিসেবে দীর্ঘ আয়ু আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট নেয়ামত। নেক আমলের মাধ্যমে এ নেয়ামতের কদর করা উচিত।

রাসূলুল্লাহ (সা.) জ্ঞানী ও কল্যাণী বৃদ্ধদের নিয়ে আশাব্যঞ্জক বাণী রেখে গেছেন। জ্ঞানী বৃদ্ধদের নিজ নৈকট্য দানে ধন্য করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যকার বৃদ্ধ  ও জ্ঞানী লোকেরা যেন আমার কাছাকাছি দাঁড়ায়। তারপর পর্যায়ক্রমে দাঁড়াবে যারা তাদের কাছাকাছি, তারপর দাঁড়াবে যারা তাদের কাছাকাছি তারা। সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪৩২

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রবীণদের সঙ্গেই তোমাদের কল্যাণ, বরকত আছে।’ সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫৫৯

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, যে মুসলিম সাদা চুল বিশিষ্ট হবে, কিয়ামতের দিন এটা তার জন্য নূর হবে। তিরমিযী, হাদীস ১৬৩৪.

কারও যখন বার্ধক্য এসে যায়, তখন যেন তার মৃত্যু ঘন্টা বেজে যায়। বার্ধক্য যার এসে গেল, সে যেন পাকা ফসল। সুতরাং কর্তব্য যতবেশি সম্ভব তাওবা ইস্তিগফারে লিপ্ত হয়ে পড়া।

কুরআন ও হাদীসে মানুষকে বৃদ্ধকালে বেশি বেশি নেক আমলে রত হওয়ার প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন - "আমি কি তোমাদেরকে এমন দীর্ঘ আয়ু দেইনি যে, তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত?  এবং তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসেছিল।" সূরা ফাতির, আয়াত ৩৭.

এ উম্মতের গড়পড়তা বয়স ৬০ বছর। যদি কেউ এর বেশি কাল বাঁচে, তবে সে আরও বেশি সুযোগ পেল। তার ক্ষেত্রে এ আয়াতের বক্তব্য আরও বেশি প্রযোজ্য হবে।

সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনে পরিবর্তন আনা এবং ইবাদত বন্দেগীর প্রতিও বেশি মনোযোগী হওয়া।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা ওই ব্যক্তির ওজর কবুল করবেন না, যার মৃত্যু বিলম্বিত করেছেন, এমনকি সে ষাট বছর বয়সে উপনীত হয়েছে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪১৯.

বয়স যখন বার্ধক্যের দিকে অগ্রসর হয়, বিশেষত ৬০ বছর যদি হয়ে যায়। তখন কোনওক্রমেই গাফলতির জীবন কাটানো উচিত নয়, যেহেতু তখনকার গাফলতির জন্য কোনও অজুহাত চলবে না। তখন উচিত সম্পূর্ণরূপে আখেরাতমুখী হয়ে যাওয়া এবং বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফারে রত হয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক বান্দাকে কবর থেকে ওঠানো হবে ওই অবস্হায়, যে অবস্হায় তার মৃত্যু হয়েছে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৭৮.

এ হাদীস জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উত্তম অবস্হায় তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর সুন্নত মোতাবেক কাটানোর প্রতি উৎসাহ দান করে। সেই সাথে বার্ধক্যে পৌঁছে গেলে যেহেতু মৃত্যু অতি কাছে এসে যায়, তাই এ সময়ে সৎকর্মে অধিকতর ব্যস্ত থাকার অনুপ্রেরণাও এর দ্বারা লাভ হয়।

আল্লাহ তা'আলা আমাদের বয়সের মর্যাদা রক্ষা করে জীবন যাপন ও মৃত্যুকে বরণ করার তাওফিক দান করুন।