মসজিদে নববী, মদিনা মুনাওয়ারা। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব মানবতার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হলে আল্লাহর রাসুল (সা.)। তার প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ ও সালাম পাঠ করে, সে প্রভূত কল্যাণ লাভ করে। শরিয়ত কিছু সময় ও স্থানে দরুদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছে।

মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠের অন্যতম সময় হলো নামাজের মধ্যে। নামাজ অবস্থায় নিম্নোক্ত স্থানে দরুদ ও সালাম পাঠ করতে হয়—

তাশাহহুদের সময় দরুদ পড়া

প্রত্যেক মুসল্লি তাশাহহুদের মধ্যে নবী করিম (সা.)-এর প্রতি সালাম প্রদান করবে। (বুখারি, হাদিস : ৮৩৫, ১২০২)

তাশাহহুদের পর দরুদ পাঠ

নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ পড়তে হয়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করবে, তখন সে প্রথমে আল্লাহর গুণগান করবে, তারপর নবী করিম (সা.)-এর ওপর সালাম পাঠ করবে, তারপর স্বীয় পছন্দমতো দোয়া পাঠ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪১৮)

জানাজার নামাজে দরুদ পড়া লাগে

জানাজার নামাজের দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পাঠ করবে। এক সাহাবি বলেন, ‘জানাজা সালাতের সুন্নতি পদ্ধতি হলো, ইমাম তাকবির দেবে, অতঃপর মনে মনে প্রথম তাকবিরের পর সুরা ফাতেহা পাঠ করবে (অথবা সানা পড়বে)। অতঃপর নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করবে। (ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২৩৯-২৪০; বায়হাকি ৪/৩৯)

আজানের পর দরুদ পড়তে হয়

রাসুল (সা.) বলেন, “যখন তোমরা আজান দিতে শোনো, তখন তার পুনরাবৃত্তি করো যা মুয়াজ্জিন বলে। তারপর আমার প্রতি দরুদ পাঠ করো। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘অসিলা’ প্রার্থনা করবে। ‘অসিলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে শুধু একজন লাভ করতে পারবে। আর আমার আশা যে আমিই হব সেই ব্যক্তি। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘অসিলা’র দোয়া করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে।” (মুসলিম, হাদিস : ৩৮৪)

দোয়ার সময় দরুদ পড়া জরুরি

রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিছে এসেছে, ‘নবী (সা.) ও তার পরিবারবর্গের প্রতি দরুদ পেশ করা না হলে সব দোয়া কবুল হওয়া থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।’ (তাবারানি, আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৭২১)

মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭১৩)

রাসুল (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে

কথা বলা ও লেখার সময় যখন রাসুল (সা.)-এর নাম আসবে তখনই দরুদ পাঠ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে যারা রাসুল (সা.)-এর নাম শুনবে তারাও তার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে-ই হচ্ছে কৃপণ, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়েনি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৬)

জুমার দিন দরুদ পাঠ

আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জুমার দিন ও জুমার রাতে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ যে আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করেন।’ (আল জামে, হাদিস : ১২০৯)

যেকোনো মজলিসে দরুদ পড়া

যেকোনো ইসলামী মজলিসে রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ জরুরি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে সমস্ত লোক কোনো মজলিসে বসেছে অথচ তারা আল্লাহর জিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরুদও পাঠ করেনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮০)