প্রতীকী ছবি

অনেকেই অন্য কাউকে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে দেওয়ার কাজ করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য বা অন্য কারও জন্য রিপোর্ট ও অ্যাসাইনমেন্ট লিখে দেওয়া কিংবা ইন্টারনেট থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে দেওয়া কি জায়েজ?

ছাত্রদের যে রিপোর্ট কিংবা অ্যাসাইনমেন্টগুলো তৈরি করতে বলা হয়— এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের গবেষণার প্রশিক্ষণ দেওয়া, এক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা পরীক্ষা করা, তাদের রেফারেন্স গ্রন্থগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলা ইত্যাদি। তাই এ গবেষণাগুলো ছাত্ররা নিজে তৈরি করা আবশ্যকীয়। অর্থের বিনিময়ে কিংবা অর্থ ছাড়া এগুলো তাদের তৈরি করে দেওয়া নাজায়েজ। যেহেতু এটি জালিয়াতি, মিথ্যা ও প্রজন্ম নষ্ট করা এবং এমন কিছু দুর্বল শিক্ষার্থী তৈরি করার নামান্তর— যারা এ রেফারেন্স গ্রন্থগুলো ব্যবহার করতেও জানে না।

অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে দেওয়া নাজায়েজ কেন?

আর অ্যাসাইনমেন্ট সাধারণত শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়। তাই অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তৈরি করা নিয়ম। ফলে কারও সাহায্য নেওয়া ও গাইড দেখে লেখা— এটি ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত। আর কাউকে ধোঁকা দেওয়া জায়েজ নেই। 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৩১৪৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৪; সুনানে দারেমি, হাদিস : ২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২২৫, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৯০৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৯৪; সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ২৮৯০; শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৪০৩৯)

আরও পড়ুন : ফেক আইল্যাস লাগানো কি জায়েজ?

ভালো কাজে সহযোগিতা করা চাই

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে নেকির কাজে সাহায্য- সহযোগিতা করা হবে। অন্যায়-ধোঁকা তথা গোনাহের কোনো কাজে কাউকে সহযোগিতা করা যাবে না।

তাই অন্য কেউ যদি সেটা করে দেয়,তাহলে এই কাজটি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না। কারণ, এটার মাধ্যমে স্টুডেন্টের মেধা যাচাইয় করা হয়, তার যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আর মেধা নির্ণিত হবে স্টুডেন্ট নিজ থেকে এ কাজ করলে। সুতরাং যার যে মেধা— সেটি সত্যিকার যাচাই হবে তখন; যখন তার নিজস্ব যোগ্যতায় অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা হবে। 

কারও কাছ থেকে দেখে লিখলে বা বলে লিখলে ধোঁকার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। কারণ, সে যা জানে না— তবুও সে জানে বলে প্রকাশ করছে। ফলে কর্তৃপক্ষ এটা দেখে ভাববে— ওই শিক্ষার্থী আসলেই মেধাবী। কিন্তু আসলেতো মেধাবী নয়। এ ধোঁকাবাজীর কারণে উক্ত পদ্ধতিটি জায়েজ নয়।

পাপ ও অন্যায়ের কাজে সহযোগিতা নয়

তাছাড়া স্টুডেন্টকে  এ শর্তে সেটা লিখতে বলা হয় যে, সে কারও কাছ থেকে দেখে বা বলে লিখবে না, অন্যের মাধ্যমেও লিখে নেবেন না। এ জায়েজ শর্ত পালন করা উক্ত স্টুডেন্টের ওপর আবশ্যক। কিন্তু নিজে দেখে লেখা কিংবা বলে নেওয়া, অন্যের মাধ্যমে লিখে নেওয়ার মাধ্যমে উক্ত শর্তটি লঙ্ঘিত হয়— যা জায়েজ হবে না।

আর অন্যায় কাজ নিজে করা যেমন বৈধ নয়, তেমনি সহযোগিতা করাও বৈধ নয়। তাই অন্যকে এই অ্যাসাইনমেন্ট লিখে দিলেও গোনাহগার হতে হবে। তা থেকে উপার্জিত অর্থও হালাল হবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০২)

সহপাঠীদের সহযোগিতা ও নেটের সাহায্য

প্রসঙ্গত, ছাত্রের জন্য অন্যদের গবেষণাগুলো থেকে উপকৃত হওয়া, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা, ও সাধারণ সব গবেষকদের মত কোনো কোনো পয়েন্টে সহপাঠীদের সহযোগিতা নেওয়া জায়েজ। কিন্তু গোটা গবেষণাপত্র অন্যের কাছ থেকে নিয়ে সেটি পেশ করা জালিয়াতি ও মিথ্যা; চাই ছাত্র এটি অন্য ছাত্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করুক কিংবা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করুক। যে শিক্ষক এ বিষয়টির স্বীকৃতি দেয় কিংবা এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে তিনিও গুনাহতে অংশীদার হবেন।