পরীক্ষায় নকল করা এবং নকলে সহযোগিতার বিধান কী? পরীক্ষার হলে কেউ যদি আমাকে কোনও প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করে আমি তখন কী করব? এমন প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন।

এর উত্তর হলো-  নকল করা, জালিয়াতি করা ইত্যাদি নাজায়েজ ও হারাম। অনেক ফিকাহবিদ পরীক্ষায় নকল করাকে হারাম ও কবিরা গুনাহ বলেছেন। চাই তা অন্য কারো দেখে লেখা হোক বা কারো কাছে শুনে লেখা হোক বা গোপনে দেখে দেখে লেখা হোক অথবা এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো অসদুপায়ে করা হোক। কেননা, এটা প্রতারণা। আর ইসলামে প্রতারণা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়; আর যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০১/১৮৯)

হাদিস বিশারদগণ বলেছেন, যেকোনো কাজে-কর্মে প্রতারণা করা— এই হাদিসের আওতাভুক্ত। ফলে পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টিও সেগুলোর মধ্যে একটি।

নকল করা সম্পর্কে শায়খ বিন বাজ

পরীক্ষায় নকলের ব্যাপারে শাইখ বিন বাজ (রহ.) বলেন, ‘পরীক্ষায় নকল করা মানুষের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার মতোই হারাম ও ন্যাক্কারজনক। বরং সাধারণ লেনদেনের চেয়ে পরীক্ষায় নকল করা— বেশি ভয়ানক হতে পারে। কারণ, নকলের মাধ্যমে সে হয়ত বড় বড় চাকুরি লাভ করবে। সুতরাং পড়াশোনার সকল ক্ষেত্রে নকলের আশ্রয় নেওয়া হারাম। কেননা, সহিহ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” 

তাছাড়া এটি একটি খেয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা জেনে-শুনে খেয়ানত করো না আল্লাহ ও রসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতের ক্ষেত্রে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৭)

সুতরাং শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যক হলো- তারা যেন কোনো পাঠ্য বিষয়েই নকলের আশ্রয় না নেয়। বরং তারা যেন প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অধ্যবসা ও পরিশ্রম করে যেন তারা বৈধভাবে উত্তীর্ণ হয়।’ (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)

নকলের কাজে সহযোগিতার বিধান

নকল করা যেমন হারাম তেমনি নকলে সহযোগিতা করাও হারাম। ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন নকল করলে গুনাহগার হবে— তেমনি পরীক্ষা হলে নিয়োজিত গার্ড, শিক্ষক, পরিদর্শক অথবা তৃতীয় কোনো পক্ষ যদি নকল করতে সহায়তা করে বা নকলের পরিবেশ সৃষ্টি করে— তাহলে তারাও গুনাহগার হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তি দাতা।’ (সুরা মায়িদা: ০২)

কেউ যদি খাতা দেখে লিখতে চায়

সুতরাং পরীক্ষার হলে কেউ যদি আপনার নিকট উত্তর জানতে চায় বা আপনার খাতা দেখে লিখতে চায়; তাহলে তাকে সে সুযোগ দেয়া যাবে না। অন্যথায় অন্যায় কাজে সহায়তার কারণে আপনিও গুনাহগার হবেন। তাছাড়া পরীক্ষায় নকলে সহায়তা করা আইনত: দণ্ডনীয় অপরাধ। [পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন-১৯৮০ অনুযায়ী, পরীক্ষার হলে নকলের সুনির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে।]

অতএব পরীক্ষার হলে, কেউ যদি আপনার খাতা দেখে লিখতে চায় বা কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় তাহলে আপনার জন্য আবশ্যক হল, তাকে সহযোগিতা না করা। কারণ তা প্রতারণায় সহযোগিতার শামিল-যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম এবং প্রচলিত আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ।