ছবি : সংগৃহীত

প্রোটিয়া মুসলিম মেজর ফাতিমা আইজ্যাকসকে ইউনিফর্মসহ হিজাব পরিধানের অধিকার দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সামরিক বাহিনীতে দায়িত্বরত বহু সংখ্যক মুসলমানদের জন্য এটি যুগপৎ ও যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

ফাতিমা আইজ্যাকস (ইসহাক) প্রোটিয়াস সংবাদমাধ্যম কেপটাইমসকে বলেন, ‘আমি মামলার সফল ফলাফল নিয়ে খুশি। আমাকে সহায়তা করার জন্য আমার আইনী দলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি। ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে এর কোনো বৈষম্য হওয়া উচিত নয়। আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম একটি নৈতিক রাষ্ট্র-দেশের ভিত্তি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

সিদ্ধান্তটি পেতে ফাতিমাকে তিন বছর লড়াই করতে হয়েছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন। এরপর থেকে সামরিক বাহিনীর নিয়ম-রীতি মেনে তিনি নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে তাঁর চুল ও মাথা ঢেকে রাখতেন।

২০১৮ সালের জুনে তাকে জানানো হয়েছিল, তার হিজাব দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিরক্ষা বাহিনীর (এসএএনডিএফ) পোশাক নীতির পরিপন্থী। পাশাপাশি তাকে সামরিক শৃঙ্খলা সংস্থার ১৯ (১) ধারা লঙ্ঘনকারী হিসেবে তিনটি গণনা দিয়ে চার্জ করা হয়েছিল।

যদিও সামরিক আদালত গত বছরের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ফাতিমাকে প্রতিনিধিত্বকারী আইনী রিসোর্সেস সেন্টার (এলআরসি) এরপরে সমতা আদালতের সামরিক বাহিনির ধর্মীয় পোষাককোড নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানায়।

এলআরসি মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা তখন থেকে এসএএনডিএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ফলস্বরূপ, এসএএনডিএফ মুসলিমদের সামরিক ইউনিফর্মের সঙ্গে হিজাব পরতে দেওয়ার নীতিটি সংশোধন করেছে। সুতরাং আমরা সমতা আদালতে প্রত্যাহারের নোটিশ দায়ের করেছি। নীতিটি সেনাবাহিনীতে আর কার্যকর হবে না, যাতে মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (এমজেসি) হিজাবের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানিয়েছে। এমজেসির নির্বাহী প্রেসিডেন্ট আবদুল খালিক অ্যালি বলেন, আমরা মেজর ফাতিমা আইজ্যাকসকে তার এই অর্জনের জন্য সালাম জানাই। তার পক্ষে এই ফলাফলটি এসএএনডিএফের সব মুসলিম নারীদের অর্জন।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১০ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার এক দশমিক পাঁচ শতাংশ মুসলিম। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অশ্বেতাঙ্গ ও এশিয়ান।

বিভিন্ন দেশে নারী পুলিশের হিজাব
মুসলিম নারী পুলিশরা তাদের হিজাব পরা অধিকার অর্জনে সফল হয়েছেন, এমন আরো কয়েকটি মামলার ঘটনা রয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ত্রিনিদাদ মুসলিম স্পেশাল রিজার্ভ পুলিশ অফিসারকে ডিউটিতে হিজাব পরতে নিষেধ করায় এবং তিনি বৈষম্যমূলক নীতির শিকার হওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লাখ ৮৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল।

এরও আগে ২০১৬ সালে, তুরস্ক পুলিশ নারী অফিসারদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়। পুলিশ স্কটল্যান্ডও এই পদক্ষেপে হিজাবকে তাদের ইউনিফর্মের একটি ঐচ্ছিক অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। যাতে মুসলিম নারীদেল ক্যারিয়ার হিসাবে পুলিশ-ব্যবস্থাকে বিবেচনা করতে উত্সাহিত করা যায়।

একইভাবে ২০১৬ সালে কানাডা সরকার ঘোষণা করেছিল যে- রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ মুসলিম নারী নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইউনিফর্মের অংশ হিসেবে অফিসারদের হিজাব পরার অনুমতি দেবে।