প্রতীকী ছবি

ভালোবাসা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন বিষয়। ভালোবাসা আমরা আল্লাহু তাআলার কাছ থেকে রহমত হিসেবে পেয়েছি। ইসলামে ভালোবাসা শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহু রাব্বুল আলামিন তার বান্দারদের ইতিবাচক দিক সবসময় পছন্দ করেন।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ নিষ্ঠাবানদের ভালবাসেন।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক ও দ্বৈত বিষয়। এটি মূলত বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার ফল। মানুষ ভালোবাসার ক্ষেত্রে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। বিষয়টির ওপর মানুষের হাত না থাকায় রাসুল (সা.)-ও আপন স্ত্রীদের পালা বণ্টন করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার যতটুকু সাধ্য ছিল আমি ইনসাফ করার চেষ্টা করেছি— আর যে বিষয়টি আমার সাধ্যে নেই (অর্থাৎ কোনো স্ত্রীর প্রতি বেশি ভালোবাসা), সে বিষয়ে আমাকে ভর্ৎসনা করবেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, ৩/১৮৫, হাদিস : ১১৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৪/৪১৪)

তবে ভালোবাসা মানেই অবৈধ নয়। কিছু কিছু ভালোবাসা শরিয়তে কাম্য। সেটার প্রতি শরিয়ত উৎসাহ দিয়েছে। ভালোবাসার প্রকারভেদ জানা থাকলে— বিষয়টি আরও স্পষ্ট ও বোধধগম্য হয়ে উঠবে।

এক. বৈধ ভালোবাসা

বৈধ ভালোবাসা হলো স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝের ভালোবাসা হচ্ছে পবিত্র ও কাঙ্ক্ষিত। ইসলাম এই ভালোবাসার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের ভালোবাসতেন। তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তাদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। তাদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতেন।

হাদিস শরিফে আছে, ‘রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-এর সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতা করেছেন।’ আয়েশাকে নিয়ে মসজিদে তিনি আবিসিনীয়দের খেলা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন, যার চরিত্র সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস : ১/১৯৭)

বিয়ের আসল উদ্দেশ্য হলো- শান্তি, ভালোবাসা ও দয়া। হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো স্বামী স্ত্রীর দিকে দয়া ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায় তাহলে আল্লাহ তাআলা তার দিকে দয়া ও রহমতের দৃষ্টি নিয়ে তাকান।’ এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, তাদের প্রতি রহম করা ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেক স্ত্রীই তার স্বামীর কাছে ভালোবাসা চায়। স্বামীদের উচিত, স্ত্রীদের ভালোবাসা ও তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।

বিয়ের দ্বারা অনেক জৈবিক চাহিদা পূরণ হয়। তবে তা শুধু বৈষয়িক ব্যাপারের মধ্যে সীমিত নয়। বরং বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসাপূর্ণ ও আবেগময় পারিবারিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

দুই. অবৈধ ভালোবাসা

আজ আমাদের সমাজে যুবক-যুবতীদের মাঝে বিয়েপূর্ব যে অনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এবং ভালোবাসা সৃষ্টি হচ্ছে— ইসলামের দৃষ্টিতে তা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলাম কখনো এ ধরনের ভালোবাসা সমর্থন করে না। এটি মূলত যৌন তাড়নাপ্রসূত একটি বিষয়। যুবক-যুবতীরা বেলাল্লাপনা চরিতার্থ করার জন্য ভালোবাসায় আবদ্ধ হন। যখন যৌন তাড়না নিঃশেষ হয়ে যায় তখন ভালোবাসায় ভাটা পড়ে। তবে একে-অপরের ভালোবাসা যদি শুধু তাদের মনে লুকায়িত থাকে, ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে শরিয়ত লঙ্ঘন না করে, তাহলে সে ভালোবাসায় কোনো ক্ষতি নেই।

হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, তা লুকিয়ে রাখে, নিজেকে পবিত্র রাখে এবং এই অবস্থায় মারা যায়— সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৩০/৭৪)

সবচেয়ে বড় কথা হলো- নিজেকে পবিত্র রাখার জন্য তিনি তো আল্লাহর কাছে অবশ্যই বিনিময় পাবেন। তবে ভালোবাসার কারণে যদি অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে তা অবশ্যই হারাম। এটি একটি মানসিক রোগ— যার আশু চিকিৎসা প্রয়োজন।

মুফতি আসিম নাজিব।। ফতওয়া-গবেষক ও আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষক