খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ দল। সেই জয়ের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে আজ (শুক্রবার) সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের শুরু থেকেই জ্বলে উঠেছে স্বাগতিকরা। লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ৩০৬ রানের পাহাড়সম পুঁজি পেয়েছে টাইগাররা। এই রানের মধ্যে আফগানদের আটকাতে পারলে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলবে তারা।

দর্শক নাকি খেলাধুলার প্রাণ। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সে কথা আরো বেশি প্রচলিত। তবে বলাই যায়, করোনার প্রকোপ কমার পর আস্তে আস্তে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে দেশের ক্রিকেট। প্রথম ম্যাচের তুলনায় আজ দ্বিতীয় ম্যাচে দ্বিগুণ দর্শক ফিরিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড। গ্যালারির এক পাশ পূর্ণ দর্শক দিয়ে। সমর্থকদের শুক্রবারের ছুটির দিনটি আরো রোমাঞ্চকর আর উপভোগ্য করেছেন লিটন আর মুশফিকুর রহিম। ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান আফগান বোলিংয়ের ওপর।

লিটন দাসের ১২৬ বলে ১৬টি চার ও ২টি ছয়ে সাজানো ১৩৬ রানের ইনিংসের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের ৯৩ বলে ৮৬ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এ ম্যাচ জিতলে ১ ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি আইসিসি সুপার লিগে আরো ১০ পয়েন্ট পাবে টাইগাররা। এতে ইংল্যান্ডকে (৯৫) টপকে আইসিসি সুপার লিগে শীর্ষে ওঠার সঙ্গে প্রথম দল হিসেবে ১০০ পয়েন্ট পাবে বাংলাদেশ।

সাগরিয়ার পাড়ে এ ম্যাচে শুরুটা খুব ভালো হয়নি বাংলাদেশ দলের। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৮ বলে ৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তামিম-লিটন। যদিও সে জুটির অর্ধেকের বেশি রান যোগান হয়েছে অতিরিক্ত খাত থেকে। ১২ রানে থাকা ফজল হক তামিমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আউট করে ভাঙেন এই জুটি। তামিমের সঙ্গে এ ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। রাশিদ খানের বলে সাজঘরে ফেরেন ৩৬ বলে ২০ রান করে।

এরপরের গল্পটা লিটন আর মুশফিকের। অনবদ্য ব্যাটিংয়ে রেকর্ড বই ওলটপালট করেন এই দুই জন। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে ফরিদ আহমেদের টানা দুই দলে তারা আউট হওয়ার আগে রশিদ, মুজিব, নাবিদের মতো স্পিন ত্রয়ীকে রীতিমতো পাড়ার বোলার বানিয়েছেন লিটন-মুশফিক। তাদের ৮৩ রানে শুরু করা তৃতীয় উইকেট জুটি থামে ২৮৫ রানে। ২০২ রানের এই জুটি তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ।

১৮৬ বলের এই জুটির পথে নান্দনিক সব শটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। ইনিংসের ৪১তম ওভারে রাশিদকে ডিপ এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে শতকের স্বাদ পান তিনি। পরে আরো আগ্রাসী রূপ নেন লিটন। যখন থামলেন, তখন নামের পাশে ১৩৬ রান। ১২৬ বলের ইনিংসে ১৬টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকান ২টি। লিটনের সঙ্গে সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন মুশফিক। তবে শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

ফরিদকে আপার কাট করতে গিয়ে ৮৬ রানে আউট হন মুশফিক। ৯৩ বলের ইনিংসটি সাজান ৯টি চারের মারে। যদিও সেঞ্চুরি মিসের দিনে সতীর্থ সাকিবকে টপকে গেছেন মুশফিক। একদিনের ক্রিকেটে ৬৬৩০ রান নিয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সাকিব। আজ এই ইনিংসটি খেলে ৬৬৭০ রান নিয়ে সাকিবকে টপকে গেছেন মুশফিক।

শেষদিকে আফিফ হোসেনের ১২ বলে ১৩ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৯ বলে অপরাজিত ৬ রানে নির্ধাতির ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এ ম্যাচ জিতলে ১ ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি আইসিসি সুপার লিগে আরো ১০ পয়েন্ট পাবে টাইগাররা। এতে ইংল্যান্ডকে (৯৫) টপকে আইসিসি সুপার লিগে শীর্ষে ওঠার সঙ্গে প্রথম দল হিসেবে ১০০ পয়েন্ট পাবে বাংলাদেশ।

টিআইএস/এনইউ/এমএইচ