চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের দৃশ্যপট আরেকবার সামনে আনলেন আফিফ হোসেন আর মেহেদী হাসান মিরাজ। ২১৬ রানের জবাব দিতে নেমে সেদিন ৪৫ রান তুলতেই নেই হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ৬ উইকেট। সপ্তম উইকেটে আফিফ-মিরাজের অবিচ্ছেদ্য ১৭৪ রানের জুটিতে ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। সেই আফিফ-মিরাজের ব্যাটেই আজ রোববার ‘মান’ বাঁচল টাইগারদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ শেষ অবধি পেয়েছে ১৯৪ রানের পুঁজি।

জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ দলের শুরুটা হয় ভূতুড়ে। টস জিতে আগে ব্যাট করতে চেয়ে স্বাগতিক পেসারদের হাতে যেন যুদ্ধের মূল অস্ত্রটাই তুলে দিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তাতে কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, ওয়েইন পার্নেলদের করা ডেলিভারিগুলো আগুনের গোলা হয়ে ছুটে আসে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দিকে। নিখুঁত লাইন-লেংথের সঙ্গে সুইং আর বাউন্সের সামনে নিজেদের সঁপে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না তামিম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসানদের।

শুরুতেই সফরকারীদের টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন ভেঙে দেন প্রোটিয়া পেসাররা। ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে যা একটু লড়ল আফিফ-মিরাজের ব্যাটে। আফিফের ১০৭ বলে ৭২ রানের ইনিংসের সঙ্গে মিরাজের ৪৯ বলে ৩৮ রান ২শ পার করার ইঙ্গিত দিলেও বাকিদের ব্যর্থতায় ৫০ ওভার পুরোটা খেলে ১৯৪ রান তুলতে পারে টাইগাররা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো পিংক ডে ওয়ানডে খেলতে নামে বাংলাদেশ। এই পিংক ডে ওয়ানডেতে প্রোটিয়ারা গোলাপি জার্সি গায়ে মাঠে নামে। এর মাহাত্ম্য হলো স্তন ক্যানসার বিষয়ক সচেতনতা। প্রতিবছর স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি ওয়ানডে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। গোলাপি জার্সি গায়ে চাপালে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে তারা। তার উত্তাপ এবার টের পেল বাংলাদেশ। যার শুরুটা তামিমকে দিয়ে।

লিটনকে নিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামা তামিম আজও চেয়েছিলেন ধীরে খেলার নীতিতে শুরুর কয়েকটা ওভার কাটিয়ে দিতে। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ফিরতে হলো তাকে। বাড়তি বাউন্সের জন‍্য লুঙ্গি এনগিডির ডেলিভারি ঠিক মতো খেলতে পারলেন না তামিম। ব‍্যাটের উপরিভাগে লেগে উঠে গেল সহজ ক‍্যাচ। ৪ বলে ১ রান করে আউট হন তামিম।

৭৭ রান করে আগের ম্যাচের নায়ক বনে যাওয়া সাকিব আল হাসান এ ম্যাচে রানের খাতা খুলতে পারলেন না। রাবাদার বাড়তি বাউন্সের বলটি লেগ সাইডে ঘোরানোর চেষ্টা করেন সাকিব। ঠিক মতো খেলতে পারেননি, ব‍্যাটের কানায় লেগে ক‍্যাচ যায় কাভারে। একটু সরে গিয়ে সেটি মুঠোয় জমান কাইল ভেরেইনা। ৬ বলে শূন্য হাতে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। লিটনকে নিয়ে আশার বেলুন ফোলানোর আগেই তিনিও ধরলেন সাজঘরের পথ। রাবাদার বল অনেকটা লাফিয়ে লিটনের গ্লাভস ছুঁয়ে জমা পড়ল কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসে। ১৫ রানে ফিরলেন তিনি।

২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটিকে টেনে তোলার দায়িত্ব পড়ে মুশফিকুর রহিম আর ইয়াসির আলি রাব্বির কাঁধে। তবে এই ভার নিজেদের কাঁধে রাখতে পারলেন না তারা। রানের খাতা খোলার আগে একবার জীবন পাওয়া রাব্বি রাবাদার লাফিয়ে ওঠা বল অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তাড়া করতে তিনি। ব‍্যাটের কানায় লেগে সহজ ক‍্যাচ যায় ব‍্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। ১৪ বলে ২ রান করে আউট হন তিনি।

সতীর্থদের দেখানো পথে হাঁটলেন মুশফিকুর রহিমও। অসংখ‍্য ম‍্যাচে ইনিংস মেরামত করে বাংলাদেশকে বাঁচানো মুশফিকুর রহিম ব‍্যর্থ এবার। বাঁহাতি পেসার পার্নেলের বল লেগ স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া সময় বাড়তি সুইং আশা করেছিলেন মুশফিক। কিন্তু তার প্রত‍্যাশার চেয়ে সুইং ছিল বেশ কম। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ না নিয়ে ৩১ বলে ১১ করে ফেরেন মুশফিক।

মুশফিকের আউটের পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৬০ রানের জুটি। তবে সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের ২৮তম ওভারের প্রথম বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে লেগ স্লিপে মালানের হাতে ক্যাচ দেন এই ব্যাটসমান। তার ব্যাট থেকে আসে ৪৪ বলে ২৫ রান।

মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর দলীয় একশ রানের কোটা পূর্ণ করে বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে জুটি গড়ে অর্ধশতক তুলে নেন আফিফ। ৭৯ বলে ৭টি দারুণ চারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান তিনি। অন্যদিকে মিরাজও অন্যপ্রান্ত থেকে রান করছিলেন। আফিফ যখন শতকের দিকে এগোচ্ছিলেন তখনই রাবাদার চতুর্থ শিকার হন তিনি। ১০৭ বলে ৭২ রান করে আউট হন আফিফ।

সেই ওভারেই রাবাদার পঞ্চম শিকার হন মিরাজ। দারুণ খেলতে থাকা মিরাজ থামেন ৪৯ বলে ৩৮ রান করে। তাদের বিদায়ে ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১৯৪ রান। রাবাদা ৫টি এবং ১টি করে উইকেট নেন এনগিডি, শামসি ও ডুসেন।

টিআইএস/এনইউ/জেএস