মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এর মধ্যে সাদা আলো জ্বলে উঠছে প্রায়ই। কিন্তু অন্ধকারের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না কিছুতেই। শোকের ছায়া যেন ফুটে উঠছে আলো-আঁধারির মায়াতেও। দুই পাশে সারি সারি চেয়ার, মাঝখানটা ফাঁকা। ওই জায়গাটুকুতে বানানো হয়েছে শেন ওয়ার্নের প্রিয় ২২ গজ। সামনে স্টাম্প, জাদুকর থাকলে নিশ্চয়ই লেগ স্পিনে আরেকবার ভেঙে দিতে চাইতেন!
 
সাদা লম্বা গোঁফ, মাথায় টাক, চোখে চশমা পরে মার্ভ হিউজ বসে আছেন। তার ঠিক পাশেই ব্রায়ান লারা, নাসির হোসেন, অ্যালান বোর্ডাররা। তারা গল্পে মেতে উঠছেন। ওয়ার্নকে নিয়ে কোনো মজার ঘটনা মনে করে হেসে খুন হচ্ছেন, পরক্ষণেই গা ভাসাচ্ছেন আবেগের সমুদ্রে। কারো কারো চোখের কোণে জমা হচ্ছে জল; প্রিয় প্রতিপক্ষ কিংবা সতীর্থকে হারানোর বেদনায়।

কিছুক্ষণ পরপর বেজে উঠছে ওয়ার্নের প্রিয় কোনো গান। আয়োজনে ওয়ার্নি নিজেও যেন আছেন বেশ সরব! তাঁর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে প্রামাণ্যচিত্র অথবা পুরোনো কোনো সাক্ষাৎকারে। প্রিয় বন্ধু, সতীর্থ, প্রতিপক্ষের এমন মিলন মেলায় ওয়ার্ন আছেন, আবার নেই! পুরো ক্রিকেট দুনিয়া মাতিয়ে রাখা জাদুকর যে এখন নিভৃতে, অনন্তলোকে।

শচীন টেন্ডুলকার বলেন, ‘সে সবসময় আউট করার উপায় ‍খুঁজে বেড়াতো।’ ইউনিস খানের মতে, নেতা হতে ওয়ার্নের অধিনায়কত্বের দরকার ছিল না। বল অব দ্য সেঞ্চুরিতে বোকা বনে যাওয়া ইয়ান বেলের বিশ্বাস, ‘ওয়ার্নের চেয়ে অসাধারণ ও পাওয়ারফুল উপস্থিতি আর কারো নেই।’

এমসিজির বড় পর্দায় ভিডিওতে হাজির হচ্ছেন সুনীল গাভাস্কার-রাহুল দ্রাবিড়রা। পর্দায় ভেসে ওঠে ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’। এমসিজি কাঁপছে ‘ওয়ার্নি’, ‘ওয়ার্নি’ চিৎকারে। অনুষ্ঠান এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আবেগের মাত্রা। মাইকেল ক্লার্কের গলা ধরে আসে কয়েক সেকেন্ডের ভিডিওতেই। তিনি বলেন, ‘আমি যখন জাতীয় দলে আসি, ছেলের মতো আগলে রেখেছো।’

ওয়ার্ন সবসময় বলতেন, বাবা হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গর্বিত তিনি। সন্তানদের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই ব্যাপারটা একই। ওয়ার্নের দুই মেয়ে, এক ছেলে আসেন, বাবাকে নিয়ে স্মৃতিকাতর হন। মেয়ে সামার কান্না আটকে রাখতে পারেন না কিছুতেই। বলেন, ‘বাবা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তোমাকেই মিস করি।’ আরেক মেয়ে ব্রুক খুঁজে ফিরবেন বাবাকে জড়িয়ে ধরার মুহূর্ত, জানান সেটি। 

উপস্থাপক শেষদিকে বলেন, ‘ওয়ার্ন সবদিক থেকে চ্যাম্পিয়ন। যতবার আমরা সাউদার্ন স্ট্যান্ডের দিকে তাকাব, ওয়ার্নকে মনে পড়বে।’ তিনি চাইলে একটু বাড়িয়ে বলতেই পারতেন, ক্রিকেট যতদিন থাকবে, লিগ স্পিনে মুগ্ধতা ছড়াবেন কেউ, ফিরে ফিরে আসবেন শেন ওয়ার্নও। জাদুকররা মন থেকে কখনোই মুছে যেতে পারেন না, ওয়ার্নের চেয়ে বড় জাদুকর ক্রিকেটে আর কে আছেন?

উত্তরটা দিয়ে দেন টিভি পর্দার পেছনের কেউ, ‘ওয়ার্ন ছিলেন পার্ট-টাইম ক্রিকেটার, ফুল-টাইম জাদুকর।’