‘পিচ ফাউন্ডেশন’ এর একটি অনুষ্ঠানে রাজ্জাককে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি : ঢাকা পোস্ট

ছোটোখাটো একটি ইতিহাসই তো বটে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনার ঘটেনি এর আগে। মাঠের ক্রিকেট থেকে বিদায় বলার সংস্কৃতি নেই এদেশের ক্রিকেট ঐতিহ্যে। মাঠ তো দূর, এর আগে বোর্ড থেকে সংবর্ধনাও জোটেনি কারও ভাগ্যে। সেদিন বিবেচনায় আব্দুর রাজ্জাক, শাহরিয়ার নাফীসরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতেই পারেন। এভাবে বিদায়ে খুশি হলেও তৃপ্ত নন রাজ্জাক। মাঠ থেকে বিদায়ের সংস্কৃতি দেখতে চান তিনি।

আগের দুই নির্বাচকের সঙ্গে নতুন নির্বাচক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সেই আসনে বসেছেন রাজ্জাক। নতুন দায়িত্ব বুঝে পেতে মাঠের ক্রিকেটকে বিদায় বলতে হবে তাকে, শর্ত ছিল এটিই। সেই শর্ত পূরণে প্রায় দুই যুগের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টার সংলগ্ন ১ নং প্লাজায় ‘পিচ ফাউন্ডেশন’ এর একটি অনুষ্ঠানে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর মাধ্যমে সব ধরণের ক্রিকেট খেলা থেকে বিদায় নেন রাজ্জাক।

বিদায়ী সংবর্ধনা পেলেও মাঠ থেকে বিদায় নিতে না পারার আক্ষেপ কিছুটা পোড়ালো রাজ্জাককে। ভবিষ্যতে মাঠ থেকে বিদায়ের সংস্কৃতিটা দেখতে চান বলেন জানালেন তিনি, ‘আমাদের দেশে অনেক টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন। অনেকে এই সুযোগটাও পাননি। আমরা আশা করব এ রকম প্রচলন আস্তে আস্তে তৈরি হবে যেন, আমরা মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারি। দেশের জন্য যে এতকিছু করছে। জাতীয় দলে খেলা কিন্তু বিশাল ত্যাগের ব্যাপার। এরপর থেকে আমাদের আশা থাকবে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার প্রত্যাশা যেন থাকে।’

বলা চলে রাজ্জাক বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাঁহাতি স্পিনের রাজা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এ দেশের কোনও স্পিনারই তার আশেপাশেও নেই। বাংলাদেশের জার্সিতে রাজ্জাক খেলা ১৩ টেস্ট, ১৫৩ ওয়ানডে ও ৩৪ টি-টোয়েন্টি উইকেট সংখ্যা যথাক্রমে ২৮, ২০৭ ও ৪৪টি। বেশ কিছু রেকর্ডও আছে তার দখলে। বাঁহাতি স্পিনে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি পাঁচ উইকেট, বাংলাদেশের প্রথম ও দ্রুততম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট, বিশ্বের দ্বিতীয় স্পিনার ও বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিকের মালিক তিনি।

এই সবকিছুই এখন তার কাছে অতীত। মাঠের পাঠ চোকানো রাজ্জাক বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত বলতে পেরেছি আমি ক্রিকেট খেলোয়াড়। এখন থেকে বলতে হবে অন্যকিছু, যা আমার পেশা। হয়তো জিনিসটা সহজে বলতে পারছি তবে, আমার জন্য এত সহজ না। ঘোরের মধ্যে আছি এখনো। ১৯৯৪ সাল থেকে ক্রিকেটের মধ্যে, তখন বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছি। সেই জিনিসটাকে বিদায় বলা (কষ্টকর) খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা সময় আসলে প্রত্যেক মানুষকেই এক কাজ থেকে অন্য ভূমিকায় যেতে হয়। তারপরও আবেগ বলে যেহেতু একটা কথা আছে, আমার মাঝে সেটা খুব কঠিনভাবে কাজ করছে। খুব ভালোভাবে কিছু বলা, গুছিয়ে বলা আমার জন্য একটু কঠিন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আশা করব আমার চেয়েও বেশি অভিজ্ঞ হয়ে কেউ খেলবে। পারফর্ম করবে, জাতীয় দলে আসবে। এটা না হলে ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু হবে না। আশা করব যেন ওরকম হয়। মিস করার কথা যদি বলেন, আমার এই ক্যারিয়ার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ জিনিস। এটা আসলে ভোলার মত না। প্রত্যেক ধাপে ধাপে মনে পড়বে। মিস করব না ঠিক, স্মরণীয় থাকবে। মিস তখন করতাম যদি জোরপূর্বক হয়ে যেত। এটা জোরপূর্বক না, আমারই সিদ্ধান্ত। আমার পুরো ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো হতাশা নেই।’

টিআইএস/এমএইচ/এটি