বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার গায়ে লেগেছে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ এর তকমা। দেশের জার্সিতে প্রতি ম্যাচে রান করা তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অথচ সম্প্রতি ব্যাট হাতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন মুশফিকুর রহিম। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরির আগ পর্যন্ত চারিদিকের সমালোচনা তাকে গ্রাস করছিল। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হতে হয়েছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ‘অযাচিত’ সুইপ আর রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার জন্য। তবে এসব সমালোচনা গায়ে মাখছেন না তিনি।

চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। সাদা পোশাক গায়ে এই শতক এসেছে ২৭ মাস পর। এই সেঞ্চুরি করতে ২৭০ বল খেলেছেন তিনি। এই ইনিংসে ঝুঁকিপূর্ণ সুইপ খেলেননি। কিন্তু যে বলে তিনি আউট হলেন, সেটি সুইপ করতে গিয়েই বিপদ ডেকে এনেছেন। তবু অবিচল মুশফিক জানালেন, সুইপ খেলেই এর আগে দুটি ডাবল হান্ড্রেড করেছেন তিনি। মনে না থাকলে প্রয়োজনে ভিডিও দেখে নিতে বললেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম প্রথম প্রশ্নই এটা হবে যে সুইপ শট খেলেই আউট হয়ে গেলেন? উইকেট কেমন এর ওপর নির্ভর করে। এটা অনেক ভালো, ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট। এখানে থিতু হলে অন্যান্য শট খেলা যায়, সোজা ব্যাটে খেলা যায়।’

সঙ্গে যোগ করেন মুশফিক, ‘আরেকটা জিনিস- আমি কিন্তু রিভার্স সুইপ খেলে দুইটা ডাবল সেঞ্চুরিও করেছি। এটা আমি একটু বলে রাখতে চাই। শুধু একটা না, দুইটা ডাবল সেঞ্চুরি। যাদের কাছে ভিডিও আছে দেখলে বুঝতে পারবেন। প্রতি ইনিংসে ৩-৪টা রিভার্স সুইপ আছে। এটা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ শট। কিন্তু আমি ভবিষ্যতেও এটা খেলতে ভয় পাব না।’

সেঞ্চুরির পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসা বন্যায় ভাসছেন মুশফিক। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। সমর্থকরা এ নিয়ে তাকে সাধুবাদ জানালেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আনন্দে ভেসে যাওয়ার মতো কারণ দেখছেন না তিনি।

কারণ ব্যাখ্যায় মুশফিকের জবাব, ‘একমাত্র বাংলাদেশেই দেখেছি একটা সেঞ্চুরি করলে ব্র্যাডম্যানের চেয়ে বড় কিছু হয়ে যায়। আবার দুই-তিনটা ম্যাচ রান না করলে গর্তের মধ্যে ঢুকে যায় (সমর্থকরা)। এটা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়। জানি না এটা কারা করে, এটা তাদের সমস্যা। আমার মনে হয় তারা যদি আরও ভালোভাবে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জোগান তাহলে খেলোয়াড়দের জন্য এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আরও ভালো।’ 

শূলে চড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে জুনিয়র ক্রিকেটারদের সমর্থন করার আহ্বান মুশফিকের, ‘আমরা তো সিনিয়র ক্রিকেটার, আমরা হয়তো বেশিদিন খেলব না। আমি মনে করি জুনিয়র ক্রিকেটারদের যদি সমর্থনটা দেওয়া যায় তাহলে তারা আরও অনুপ্রাণিত হবে। কারণ, অন দ্য ফিল্ড আমাদের এতকিছু করতে হয় এখন অফ দ্য ফিল্ডে যদি এগুলো করতে হয় তবে মাঠের কাজগুলো কঠিন হয়ে যায়।’

টিআইএস/এনইউ