চতুর্থ দিন শেষে বেন ফোকস বলছিলেন, লক্ষ্যটা ৩০০’র নিচে হলে সেটা ’চেজেবল’। তবে সেক্ষেত্রে একটা শর্তও বেধে দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন ‘দারুণ ভালো’ ব্যাট করতে হবে। দিনের প্রথম ১৬ ওভারে ৬০ রান খরচায় নিউজিল্যান্ডের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশ বোলাররা ফোকসের শর্তের প্রথম অংশটা পূরণ করেই দিয়েছিলেন। তবে ব্যাট করার পালা যখন এলো, ইংলিশরা আরেকটু হলেই ব্যর্থ হওয়ার পথ ধরেছিল। ১০০ রান না পেরোতেই হারিয়ে বসেছিল ৪ উইকেট। ম্যাচটা জেতা তখন অসম্ভবই মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডের। 

সেই ম্যাচটা শেষে ইংল্যান্ডই হাসল বিজয়ীর হাসি। কারণ জনি বেয়ারস্টো নামের একজন যে ছিলেন তাদের দলে। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে গেলেন সঙ্গী বেন স্টোকসকে নিয়ে। ৯২ বলে ১৩৬ রানের এক ‘তাণ্ডব’ বইয়ে দিলেন নটিংহ্যামের টেন্ট ব্রিজে। তাতে ভর করেই ইংলিশরা পেল ৫ উইকেটের ‘অবিশ্বাস্য’ এক জয়।

২২৭ রান আর হাতে তিন উইকেট নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছিল নিউজিল্যান্ড। তখনই ফোকস জানিয়েছিলেন দলের ৩০০’র নিচে লক্ষ্য পেলে জয়ের সম্ভাবনার কথা। পঞ্চম দিনের শুরুতে প্রথম সাফল্যটা পেতে ইংল্যান্ডকে অপেক্ষা করতে হলো ৯ ওভার। স্টুয়ার্ট ব্রড ফেরালেন ম্যাট হেনরিকে। এক ওভার পর কাইল জেমিসনকেও যখন ফেরালেন ব্রড, ইংলিশদের সম্ভাব্য লক্ষ্যটা তখন ২৬০ এর আশেপাশেই হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল।

তবে শেষ উইকেটে বাগড়া দিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। আগের দিন অপরাজিত ড্যারিল মিচেল হার মানেননি তখনো। দুজন মিলে শেষ উইকেটে যোগ করলেন ৩৫ রান। তাতে স্বাগতিকদের লক্ষ্যটা গিয়ে ঠেকল ২৯৯ রানে। দিনের বাকি ছিল ৭২ ওভার। এই পরিস্থিতিতে নিউজিল্যান্ডের জয়, ইংল্যান্ডের জয়, ড্র কিংবা টাই, চারটা ফলাফলেরই সম্ভাবনা ছিল বেশ।

ইংলিশদের ইনিংস শুরু হতেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করল। ওপাশে অ্যালেক্স লিস শুরু করেছিলেন ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই, প্রথম ওভারেই তুলে বসেছিলেন ১২ রান। তবে দ্বিতীয় ওভারে জ্যাক ক্রলি শিকার হলেন ট্রেন্ট বোল্টের, ক্যাচ দিলেন দ্বিতীয় স্লিপে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগ পর্যন্ত আর উইকেট খোয়ায়নি ইংলিশরা।

বিপত্তিটা বাধল বিরতি থেকে ফিরে। পরপর দুই ওভারে ওলি পোপ আর জো রুটকে হারাল ইংল্যান্ড। তখনই উইকেটে এলেন বেয়ারস্টো। তখনো তিনি ‘শোরগোল’ শুরু করেননি। ওপাশে দেখলেন ইতিবাচক শুরু এনে দেওয়া লিস বিদায় নিয়েছেন চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৯৩ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে ইংল্যান্ড তখন খাদের কিনারে।

এরপরই শুরু বেয়ারস্টো গল্পের। তাণ্ডবের শুরু অবশ্য আরও পর, শুরুতে তিনি খেলছিলেন দেখেশুনে। সঙ্গী স্টোকসও পালটা আক্রমণের আভাস দিচ্ছিলেন তখন। দু’জন মিলে সেই সেশনটা পার করে দিলেন নির্বিঘ্নে। শেষ সেশনে তাতে ইংলিশদের প্রয়োজন পড়ল ১৬০ রান, হাতে ৩৩টার মতো ওভার। 

বেয়ারস্টোর তাণ্ডবের শুরু শেষ সেশনের শুরু থেকেই। ৫১ বলে করলেন ফিফটি। পরের ফিফটিটা পেতে তিনি খেললেন আর মাত্র ২৬ বল। এই সময় ইংল্যান্ড খেলেছে আট ওভার। রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৯ করে। তাতেই প্রয়োজনীয় রানটা নেমে এলো ৮০’র ঘরে। সেঞ্চুরি করেও বেয়ারস্টো থামলেন না। বরং ওপাশে বেন স্টোকসও হাত খুলতে শুরু করলেন। লক্ষ্য থেকে ইংল্যান্ড যখন মাত্র ২৭ রানের দূরত্বে, তখনই বোল্টের শিকার হয়ে ফিরলেন বেয়ারস্টো। নিউজিল্যান্ডও কিছুটা আশা দেখতে শুরু করেছিল বৈকি!

তবে স্টোকস নিউজিল্যান্ডের সে নিভু নিভু আশার প্রদীপটা নিভিয়ে দেন এক ঝটকায়। সঙ্গী বেয়ারস্টোর বিদায়ের পরের ৩ ওভারে তুলে ফেললেন অবশিষ্ট রানটা। তাতেই ৫ উইকেটের দারুণ জয়টা এসে ধরা দেয় ইংল্যান্ডের হাতে। আগের ম্যাচটাও একই ব্যবধানে জিতেছিল ইংলিশরা। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বেন স্টোকসের দল নিজেদের করে নিল সিরিজটা। 

এনইউ