নিজের ক্যারিয়ারজুড়ে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশ পরিচিত ছিলেন আফতাব আহমেদ। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মারদাঙ্গা ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করে গিয়েছেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটার। যদিও ক্রিকেট ক্যারিয়ার বড় হওয়ার আগেই চলে গিয়েছিলেন অবসরে। তবে অবসরে গেলেও ক্রিকেট ছাড়েননি, বর্তমানে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং পেশা। দেশ কিংবা দেশের বাইরেও একযোগে কাজ করছেন আফতাব। চলতি মৌসুমে বাংলা টাইগার্সের প্রধান কোচের দায়িত্ব সামলাবেন চট্টগ্রামের সাবেক এই ক্রিকেটার।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে অবস্থান করছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। আর টাইগারদের বিশ্বকাপ যাত্রা কিংবা দলের ঘাটতি নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেছেন আফতাব আহমেদ। পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো :

ঢাকা পোস্ট : অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কেমন দেখছেন, কেমন করবে?
আফতাব : আপনি তো দেখছেনই সবকিছু যাছাই বাছাই করে তারপর ফাইনাল একটা দল গঠন করা হলো বাংলাদেশের। তবে এই মুহুর্তে সবকিছু মিলিয়ে তারা সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে যে আছে এটা বলবো না। কেননা শেষ সিরিজে খুব একটা ভালো করতে পারেনি দল, সেক্ষত্রে দলের যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যাওয়ার কথা ছিল সেটা নিয়ে তারা যেতে পারেনি। এতো খারাপের পরেও ভালো কিছু আশা করছি, এবং ভালো কিছুই করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কারণ যা খারাপ হওয়ার সেটা তো হয়ে গেছে। এখন সব খারাপের মধ্য থেকেই ভালো কিছু নিয়েই তারা ভালো করবে। প্রথম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচের কথায় ধরা যাক, এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন দল শ্রীলঙ্কাকে কিন্তু নামিবিয়া হারিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং বলা কেউ কিন্তু কাউকে ছাড় দিয়ে খেলবে না। আগে যে ছোট দল, বড় দল ছিল এবছর কিন্তু সেসব কোনো সুযোগ নেই। এবার প্রত্যেক দলকে বড় হিসেব করেই মাঠে লড়াই করতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : ওপেনার হিসেবে কে এগিয়ে থাকবে সৌম্য নাকি শান্ত?
আফতাব :  আমার মনে হয় লিটনকে ওপেনার করানো উচিত। আপনি যদি একটু খেয়াল করেন লিটন পারফর্ম করছে, এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটা স্টার্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিডল উইকেটের জন্য ওমন কিছু এখনো করতে পারেনি যে কেউ বড় রান করে দিবে এসে। ফিনিশিংয়েও কিন্তু ভালো কিছু হচ্ছে না। সে কারণে ভালো শুরুটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি প্রথম ছয় ওভারে ৫৫ কিংবা ৬০ রান করতে পারি তাহলে কিন্তু ভালো অনেক। সেক্ষেত্রে আমি শান্তকে ওপেনিংয়ের জন্য উপযুক্ত মনে করছি না। লিটনকেই উপযুক্ত মনে করছি, সঙ্গে সৌম্যকে। শান্ত শেষ কয়েকটা ম্যাচ খেলছে তবে বলার মতো পারফর্ম যেহেতু করেনি, সে কারণে ওর ভিতর সে খচখচানিটা কাজ করবে। টি-টোয়েন্টিতে একটা ফ্রেশ খেলোয়াড়কে খেলানো উচিত। ফ্রেশ বলতে নির্ভয়ে যে ব্যাটিং করবে প্রথম সার্কেল। আর যদি আপনি পাওয়ারপ্লে ভয়ে ভয়ে খেলেন, তাহলে আপনার সার্কেলের ব্যবহার যথাযথ হবে না সঙ্গে আউট হওয়ার একটা ভয় থাকবে, উইকেট কলাপ্স ও করতে পারে। সো সবকিছু মিলিয়ে ওপেনার আর নাম্বার থ্রি সবসময় ফ্রেশ পারফর্মার থাকা প্রয়োজন টি-টোয়েন্টিতে।

ঢাকা পোস্ট : দলের অধিনায়ক সাকিব, তাকে নিয়ে  আপনার ভাবনাটা কী?
আফতাব :  নো ডাউট, নো ডাউট। সাকিব আল হাসানই বেস্ট। ঠিক কি কারণে সেটাও আমি বলছি, আমি একটা জিনিস দেখি ও শেষ যখন আমাদের দলে খেলে (রূপগঞ্জ) গেলো, এর আগে আমরা এক সাথে ক্রিকেট খেলেছি, সবসময় তার চিন্তা ভাবনায় পজিটিভ কিছু থাকে, যেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নেগেটিভের ভিতর থেকেও সাকিব পজিটিভ জিনিসটায় চিন্তা করে, যেটা একজন অধিনায়কের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একজন অধিনায়ক যদি চিন্তা করে আমি শেষ কয়েকটা ম্যাচ হেরে এসেছি, তাহলে কিন্তু সে মোটিভেটেড হতে পারবে না। আমি সিউর সাকিব যে ম্যাচ গুলো হারছে সে ম্যাচের মধ্যে থেকেও পজিটিভ কিছু নেওয়ার চেষ্টায় করবে সে। 

একটা জিনিস দেখেন সাকিব তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই পজিটিভ ছিলো, না হলে কিন্তু আজকের অবস্থানে সে আসতে পারতো না, সম্ভব না। অনেক কিছু আছে জীবনে, একদম মসৃণ ভাবে চলে তা কিন্তু না। মাসনিকভাবে শক্তিশালী আর পজিটিভ চিন্তা যদি আপনার ভেতর না থাকে তাহলে এতোদূর আসা কিন্তু কঠিন।

ঢাকা পোস্ট : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাদের খেলোয়াড়রা অন্য দেশের খেলোয়াড়দের তুলনায় ছক্কা না মারতে পারার কারণ কি?

আফতাব : দেখেন আমি একটা কথা বলি, এখনকার বিশ্বকাপ দলে যে ১৫ জন ক্রিকেটার আছে। যার মধ্যে ৮ থেকে ৯ জন ক্রিকেটার আছে যাদের ঘরোয়া লিগ গুলো একটু দেখবেন, তারা সবাই ৭০+ মিটারের ছক্কা মারতে পারে। তাদের অনেক রেকর্ড আছে ছয় মারার। সৌম্যের কি ছয় মারার রেকর্ড নাই? নাজমুল শান্তর কি ছয় মারার রেকর্ড নাই? সবার ক্ষমতা আছে। আপনাকে যদি সাঁতার কাটার জন্য সুইমিংয়ে নামানো হয়, আপনি সুইমিং জানেন এখন আপনি যদি হাত, পা গুটিয়ে বসে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনি সাঁতার কাটতে পারবেন না, ডুবে যাবেন। আপনি সুইমিং জানেন, তার জন্য সাঁতার কাটতে হবে। তেমনি ছয় সবাই মারতে পারে, দলে ছয় মারার সক্ষমতা যে নেই এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে ছয় মারার জন্য যে সাহস, যে প্রসেসগুলো প্রয়োজন, ঐ প্রসেসগুলো আমাদের মধ্যে নেই। সাহসটাই আমাদের নেই, কিন্তু ছয় মারতে পারে না এটা আমি বিশ্বাস করি না।

ঢাকা পোস্ট : ফিনিশিং পজিশন কেমন দেখছেন, দুর্বলতা কোথায়?

আফতাব : আমাদের ফিনিশিংয়ে ঘাটতি রয়েছে। ফিনিশার এমন একটা জিনিস লাস্ট ২ ওভারে লাগবে ২০ থেকে ৩০ রান কিংবা ২৫ রান। তখন সেট ব্যাটসম্যানের জন্য কিন্তু ছক্কা মারা সহজ। যখন একটা ব্যাটসম্যান নতুন ক্রিজে যাবে তার জন্য কিন্তু ছক্কা মারাটা কঠিন। সেই জায়গাটায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে। ক্রিজে নেমেই আমাদের ছেলেরা ছয় মারতে পারে না, কিছু বল সময় লাগে। ফিনিশারের যে সময়টা ওই সময়ে তিন ওভার বা চার ওভার থাকে তখন আমাদের সেট হয়ে ছক্কার মারার সময় কিন্তু থাকে না। যে কারণে ফিনিশিংয়ে কিন্তু ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সেক্ষত্রে আমাদের ফিনিশারে যারা আছে তাদের কিন্তু নেমেই ছক্কা মারার সক্ষমতাটা কম, এটাই হচ্ছে সমস্যা। তবে ফিনিশিংয়ে যারা খেলবে রাব্বি, সোহান, মোসাদ্দেক ভালো করবে আশা রাখি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলারদের থেকে ব্যাটাররা যদি স্মার্ট না হয় তাহলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ঢাকা পোস্ট : পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে আপনি চিন্তিত কিনা?

আফতাব : অবশ্যই চিন্তিত তাকে নিয়ে। বিপক্ষ দলের যখন ১২ বলে ২০-২৫ রান দরকার থাকবে তখন কিন্তু মোস্তাফিজই পারবে ম্যাচটায় আমাদের জয় এনে দিতে। ও যদি তেমন পরিস্থিতিতে একটা ওভারে ৬ রান দেয় তাহলে কিন্তু আমাদের জয়ের সম্ভাবনা তৈরী হয়ে যাবে। মোস্তাফিজের একুরেসি বলেন, ইয়র্কার বা কাটার সবই ছিল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো করছে না সে। তবে আমি চাই ওর আগের সেই ফর্মটা ফিরে আসুক। বিশ্বকাপে ওর কাম ব্যাক করাটা জরুরী।

ঢাকা পোস্ট : অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান আপনি?

আফতাব : আমি বাংলাদেশকে ফাইনালে দেখতে চাই। এরপরে তো আর কথা থাকে না। একজন দর্শক হিসেবে তো বাংলাদেশকে আমি ফাইনালে দেখতে চাইতেই পারি। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করার জন্য অনেক কষ্ট করতে হবে, মোটেও সহজ না। প্রতিটা ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। ফেসবুক বা ইউটিউব খুললে দেখা যায় বলাবলি হচ্ছে যে বাংলাদেশ হেরে চলে আসবে, তবে এটার সাথে আমি একমত না। যখন হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন কিন্তু নতুন কিছু আশা করা যায়।

এসএইচ/এনইউ