সিডনি নামটা উচ্চারণ করতেই অনেকের চোখে ভাসে সেই বিখ্যাত অপেরা হাউজ কিংবা হারবার ব্রিজ। দৃষ্টিনন্দন দুই স্থাপনার সঙ্গে আরও একটা কারণে শহরটি পরিচিত। এটি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জনবহুল আর পুরোনো শহরের একটি। নিউ সাউথ ওয়েলসের অঙ্গরাজ্যটি আবার ক্রিকেটের জন্যও দারুণ প্রসিদ্ধ। কতোশত কিংবদন্তি আর তারকার যে জন্ম এখানে তার হিসাব নেই। তার মধ্যেও উজ্জ্বল হয়ে আছে একাধিক নাম। যে দুটো নাম এই প্রজন্মের কাছেও পরিচিত। লিজেন্ডারি সেই দুই ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাকগ্রা আর ব্রেট লি'র অঙ্গরাজ্যে এবার পা রাখছে বাংলাদেশ দল।

অন্যরকম একটা স্বস্তি সঙ্গী করে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে সিডনিতে পা রাখেন সাকিব আল হাসান-তাসকিন আহমেদরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের তৃপ্তি নিয়ে আসছে টাইগাররা। ৯ রানের এই জয় একটা ইতিহাসও বটে। এবারই যে প্রথম ২০ ওভারের বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় নামের সোনার হরিণটা দেখল বাংলাদেশ। হোবার্টের মাঠে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেই সফল মিশন শেষে এবার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের সঙ্গে লড়াই ২৭ অক্টোবর বিখ্যাত সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।

তার আগে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে হোবার্ট থেকে সিডনির বিমানে উঠেছেন সাকিব আল হাসানরা। স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটা অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় নিউ সাউথ ওয়েলসের এই শহরে চলে এসেছেন সাকিবরা। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকা টিম ম্যানেজার রাবিদ ইমাম ঢাকা পোস্টকে এমনটা নিশ্চিত করেছেন। সিডনির ডার্লিং হারবারের হায়াত রিজেন্সি হোটেলে উঠছে বাংলাদেশ দল। আগের দিনের ম্যাচ জয় ও এই ভ্রমণ শেষে দিনটা হোটেলেই কাটাবেন ক্রিকেটাররা।

তবে পরের দিন মানে বুধবার পুরো দমে শুরু হয়ে যাবে অনুশীলন। কারণ তার পরদিন বৃহস্পতিবারই দক্ষিণ আফ্রিকা পরীক্ষা টাইগারদের। যে পরীক্ষায় পাশ করে গেলে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নটা উজ্বল হয়ে উঠবে। অঘটন ঘটানোর আগে আত্মবিশ্বাসের পারদটা এখন বেশ উপরেই আছে সাকিবদের। খোদ ক্যাপ্টেন মেতেছেন বোলার আর ফিল্ডারদের প্রশংসায়। যাদের হাত ধরে সোমবার হোবার্টে এসেছে ডাচদের বিপক্ষে ৯ রানের জয়।

ম্যাচ শেষে সাকিব আলাদা করে ৪ উইকেট শিকারি তাসকিনের প্রশংসা করেছেন বেশ, 'পেস বোলারদের কৃতিত্ব বুঝি। ফাস্ট বোলাররা ভালো বোলিং করেছে। আমরা ফাস্ট বোলিংয়ের গুরুত্ব বুঝি, আমরা খুব ভালো কিছু বোলার পেয়েছি। তাসকিন আমাদের জন্য ভালো বোলার, তার অভিজ্ঞতা ও পেস আছে। দলের বেশিরভাগ ফিল্ডারই চটপটে এবং দ্রুত গতির, মাঠে আমরা ৫-১০ রান বাঁচাতে পারি, আর সেটাই বড় পার্থক্য হতে পারে।'

ভুল বলেননি সাকিব। খেলায় মোমেন্টাম এসেছিল তাসকিনের হাত ধরেই। শুরুতে দুই উইকেট নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন এই পেসার। তারপর আরও দুই উইকেট। আর ফিল্ডাররা তো মরিয়া হয়ে ছিলেনই! এই দুই মিলিয়েই তো ১৪৪ রান পুঁজি নিয়েও জয়। তবে ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতাটুকু কাটেনি এখনো। বিশেষ করে সেট হয়ে কিছু করতে না পারা। আবার এলোমেলো শট খেলে আউট হওয়ার ঘটনাও ঘটছে হরদম। 

ব্যাটিংটা অন্তত মনঃপুত হয়নি প্রথম ম্যাচে। ভুল কোথায় সেটা আঁচ করা গেলেও শোধরাতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা! ডাচদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে শুধু কিছু রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং আফিফ হোসেন। শান্ত ২৫ এবং আফিফ ৩৮। অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটা দলের বিপক্ষেও এই হাল, ভাবা যায়? সাকিব আল হাসান, লিটন দাস কিংবা ওপেনার সৌম্য সরকার কারোরই বলার মতো রান নেই। মিডল অর্ডারে দ্রুত ফিরেছেন ইয়াসির রাব্বি। এমন প্রদর্শনীতে সামনে কতটা কী করা যাবে, শঙ্কা তো থাকছেই।

তবে এটা ঠিক, একটা জয় সাকিবদের শারীরিক ভাষাটা হয়তো বদলে দিয়েছে। এবার হারানোর সব ভয় পেছনে ফেলে শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। তবে সিডনি শহরটাতে বৃষ্টি বড্ড ভোগাচ্ছে এখন। এখানে পা রাখার পর গত তিন দিন ধরেই দেখছি থেমে থেমে বৃষ্টি। মঙ্গলবার সকালে ঘুম ভাঙতেই জানালার কাঁচ গলে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল রোদের দল। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে সেই একই রূপ। মুখ গোমড়া করা আকাশ। বৃষ্টিও ঝরছে দুপুর অব্দি। 

সেই বৃষ্টি সঙ্গী করেই ম্যাকগ্রা-লির শহরে এসেছেন সাকিবরা। শুধু বৃষ্টি নয়, লাল-সবুজের সঙ্গী একটা ইতিহাসও। ২০০৭ আসরে মূল পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর দেড় দশকে সুপার এইট, টেন কিংবা টুয়েলভে ১৬টি ম্যাচ খেলেও জয় ছিল অধরাই। এবার ঘুচল সেই আক্ষেপ। এমন একটা দুঃস্বপ্ন পেরোনোর পর এখন তো এগিয়ে যাওয়ার গল্পটা লিখতেই পারেন সাকিব-তাসকিনরা।

এটি/এনইআর