তিনি এখন যেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন ! এতোটা নির্ভার নিজের ক্যারিয়ারে কখনো ছিলেন কিনা মনেও করতে পারছিলেন না ! ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি দুর্দান্ত কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ পেলেই সুপার ফ্লপ ! কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত নামটা এমনই-যেখানে নির্বাচক আর ক্রিকেট বোর্ড সব সময়ই খুঁজে পেয়েছে অমিত সম্ভাবনা। 

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগেও তো ছিল একই দৃশ্যপট। তার নামটা দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিল সমালোচনার ঝড়। হিসাবটা কেউ মেলাতে পারছিলেন না, কেন এমন একজন অফ ফর্মে থাকা ক্রিকেটার বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে জায়গা পাবেন ?

এমন সমালোচনার জবাবটা এক ইনিংসেই রোববার দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসেই তো দলকে এনে দেন লড়াকু স্কোর। তার পথ ধরে ৩ রানের রোমাঞ্চকর এক জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই সাফল্যের পথ ধরেই সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্নটাও বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

মনের মতো একটা ইনিংস খেলে জবাব তো দেওয়া হলো-কিন্তু শান্ত জানিয়ে দিলেন আদৌ কোন চাপেই ছিলেন না তিনি। রোববার গ্যাবা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বলছিলেন, ‘দেখুন, আমি অনেক চাপে ছিলাম এটা বললে ভুল হবে। অনেক চাপে ছিলাম না, কারণ টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে অধিনায়ক সিনিয়র প্লেয়ার সবাই পাশে ছিল। সবাই সমর্থন দিয়েছে সব সময়।’ সঙ্গে যোগ করলেন, নিজের মধ্যেও একটা আক্ষেপে পুড়ছিলেন তিনি। বড় ইনিংস যে খেলা হচ্ছিল না। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সেরা ইনিংস খেলে শান্ত বললেন, ‘আমার ইনিংসটা নতুন কিছু করতে চাইনি। বেশির ভাগ সময়ই আমার শুরু হচ্ছিল কিন্তু লম্বা ইনিংস হচ্ছিল না। এটাই মাথায় ছিল যে যদি স্টার্ট পাই তাহলে যেন লম্বা করতে পারি।’ সেই লম্বা একটা ইনিংস খেলে শান্ত বনে গেলেন জয়ের অন্যতম নায়ক।

তার পথ ধরে আত্মবিশ্বাসটাও এখন বেশ মজবুত। সামনে ভারত-পাকিস্তান। এখানে কিছু একটা করতে পারলে খুলে যেতে পারে সেমি-ফাইনালের দরজা। শান্ত বলছিলেন, ‘ম্যাচ জিতলে আত্মবিশ্বাস অনেক ভাল থাকে। আরেকটা ব্যাপার- পরবর্তী ম্যাচ যখনই আমরা খেলব জেতার জন্যই খেলব। তখনই আমাদের সবার ভেতরে ঐ চিন্তাটা থাকবে যে জেতার জন্যই মাঠে নামব।’

আর নিজের কী ভাবনা? ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা তো খেলা হলো। আত্মবিশ্বাসটাও বাড়লো। এমন একটা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শান্ত শোনালেন, দল যেভাবে চাইবে সেভাবেই খেলে যাবেন, ‘এই ম্যাচে স্ট্রাইক রেট নিয়ে চিন্তাই করিনি, বল দেখেছি সে অনুযায়ী রিঅ্যাক্ট করেছি। আমাদের যে প্লান ছিল প্লান অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি। তো স্ট্রাইক রেট নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত না। আমার কাছে মনে হয় টিমের যে প্ল্যান ছিল টিমের যে চাওয়া ছিল সে অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি।’

সাফল্য এমনই যখন সেটা আসতে থাকে তখন কথাতেও ফুটে উঠে আত্মবিশ্বাস। অনেক দিন পর শান্ত খুঁজে পেলেন নিজেকে। সাফল্যটা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার এইতো পালা!

এটি/এজেড/এনইআর