আইপিএলে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে জনপ্রিয়তার অনেকাংশই কেড়ে নিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলো। আন্তর্জাতিক সূচির বাইরের এসব টুর্নামেন্টেই সারাবছর দর্শকদের বুদ থাকতে দেখা যায়। যার ধারাবাহিকতায় টাকার ছড়াছড়ি, বিজ্ঞাপন আর চাকচিক্যের জৌলুসে ম্লান হতে বসেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তেমনি একটি টুর্নামেন্ট ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। যেখানে খেলতে মুখিয়ে থাকেন বিশ্বের বড় বড় তারকা ক্রিকেটাররা। ব্যতিক্রম নন বাংলাদেশিরাও। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা যেন উপেক্ষার নজর টুর্নামেন্টটির, মাঠে খেলানোর চেয়ে তাদের দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এদেশীয় ফ্যানবেজকে প্রচারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে দেখা যায়!

২০০৮ সালে শুরু হওয়া আইপিএলের ১৬তম আসর চলছে। এবারের আসরে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছিলেন টাইগার ওপেনার লিটন কুমার দাস। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে যদিও তার আইপিএল অভিষেকটা সুখকর হয়নি। দুই ম্যাচ ডাগআউটে কাটানোর পর একাদশে জায়গা পেয়ে ব্যাট হাতে ব্যর্থ (৪ রান) তো হয়েছেনই, সেই সঙ্গে বাজে উইকেটকিপিংয়ে তোপের মুখে পড়েন। আর এরপরই বদলে যায় দৃশ্যপট। কেকেআর সমর্থকদের রোষানলে পড়েন টাইগার এই উইকেটকিপার ব্যাটার। এমনকি যে লিটনের বন্দনায় ব্যস্ত ছিল কলকাতার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলো, হঠাৎ যেন সব উধাও।

আরও পড়ুন >> আইপিএলের মাঝপথে ফেরা লিটন পুরো টাকা পাবেন?

এরপর কলকাতা আরও দুই ম্যাচ খেললেও শুরুর একাদশে ছিল না লিটনের নাম। পারিবারিক কারণে এই ক্লাসিক ব্যাটার নির্ধারিত সময়ের আগেই শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দেশে ফিরে আসেন। লিটনই যে কেবল কলকাতার হয়ে খারাপ পারফর্ম করেছেন তা নয়। পাঁচ ম্যাচ টানা একাদশে থাকা রহমানউল্লাহ গুরবাজও ধারাবাহিকতার পরিচয় দিতে পারেননি। একইসঙ্গে কলকাতাকে প্রায় প্রতি আসরে নিজের ঘর বানিয়ে ফেলা সুনীল নারিন ও আন্দ্রে রাসেল চলতি আসরে নিজের ছায়া হয়ে আছেন। তাদের বাদ দিতে দর্শকদের পক্ষ থেকে লাগাতার আওয়াজ উঠলেও প্রতি ম্যাচেই দলে বরাদ্দ করা হয়েছে সেই দুটি জায়গা।

এক সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর ছিলেন বাংলাদেশি দর্শকদের চক্ষুশূল। ধারণা করা হতো, তার কারণেই কেকেআরের একাদশে বেশি সুযোগ পেতেন না সাকিব আল হাসান। এরপর অবশ্য সেই সাকিবের উপস্থিতিতেই আইপিএলের শিরোপা জেতে কেকেআর। বিশ্বসেরা টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব তাও কিছুটা সুযোগ পেয়েছেন। জাতীয় দলের হয়ে ধারাবাহিক পারফর্মই তাকে টুর্নামেন্টটির নয়টি আসরে দলে নিতে বাধ্য করেছিল! যদিও মাঝে তিনি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিও গায়ে চাপিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন >> যেসব বাংলাদেশির আইপিএল ক্যারিয়ার শেষ ১ ম্যাচেই

কেবল সাকিবই নন, ৮-৯ বছর ধরে আইপিএলে টাইগারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও। সাকিব দুটি দলের জার্সি গায়ে চাপালেও, মুস্তাফিজ অন্তত চারবার দলবদল করেছেন। যদিও আশানুরূপ পারফরম্যান্স না করায় তিনি এখন দিল্লি ক্যাপিটালস দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন।

তবে আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রতি উপেক্ষার ট্রেন্ড চালু হয় স্পিনার আব্দুর রাজ্জাককে দিয়ে। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতীয় এই টুর্নামেন্টে ডাক পান। রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে তিনি সুযোগ পান মাত্র একটি ম্যাচ। ১ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তিনি ২ ওভারে ২৯ রান দেন। ছিলেন উইকেটবিহীন। যার ফলে তাকে বেঙ্গালুরুর একাদশে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি।

এর পরের (২০০৯) আসরে আইপিএলে দল পেয়েছিলেন দু’জন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। ওই বছর কলকাতা নাইট রাইডার্স মাশরাফি বিন মর্তুজাকে এবং মোহাম্মদ আশরাফুলকে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। দু’জনই দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন মাত্র একবার। ৭৫ হাজার ডলারে কেনা আশরাফুল একমাত্র ম্যাচে করেন মাত্র ২ রান। এই রান করতে তিনি ১০ বল খেলেছিলেন। এরপর আর দলে জায়গা হয়নি তার। তৎকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফর্মে থাকা আশরাফুলও আর নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাননি।

আরও পড়ুন >> এক ম্যাচেই শেষ লিটনের আইপিএল অধ্যায়

অন্যদিকে, তৎকালীন মূল্যে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন মাশরাফি। ৬ লাখ মার্কিন ডলারে তাকে কলকাতা দলে ভেড়ায়। যা এখন পর্যন্ত আইপিএল খেলা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম। তবে তার পারফর্ম ছিল সেই মূল্যের তুলনায় বেশ হতাশার। ৪ ওভারে তিনি দেন ৫৮ রান। সেই ম্যাচে হেরে যাওয়া কলকাতার একাদশেও পরে মাশরাফির আর জায়গা মেলেনি।

তবে এক ম্যাচও ভাগ্যে জোটেনি তামিম ইকবালের। ৫০ হাজার ডলারে ২০১২-১৩ দুই মৌসুমেই তাকে নিয়েছিল পুনে ওয়ারিয়র্স।  কিন্তু একবারের জন্যও তাকে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয়নি। সাইড-বেঞ্চ থেকে দলকে সঙ্গ দিয়েই তাকে দেশে ফিরতে হয়। অথচ সেই মৌসুমে লাল-সবুজের জার্সিতে বর্ণাঢ্য সময় পার করছিলেন তামিম।

আরও পড়ুন >> ‘‌বিদেশি বলেই সাকিবকে অধিনায়ক করা হয়নি’

এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। চলতি আসরে পুরো সময় না পাওয়ার শঙ্কায় কলকাতার অনুরোধে আইপিএল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন সাকিব। এরপর তার বদলে তারা দলে ভেড়ায় ইংলিশ ব্যাটার জেসন রয়কে। এবার আইপিএলে পা না রাখলেও আইপিএলের মোট নয়টি আসরে তার খেলার সুযোগ হয়েছিল। ২০১১ থেকে টানা সাত মৌসুমে সাকিবের দল ছিল কলকাতা। এরপর ২০১৮ সালে হায়দরাবাদে গিয়ে কাটান দুই মৌসুম। পরবর্তীতে আবারও তিনি পুরনো ঠিকানা কলকাতায় ফেরেন। 

অন্যদিকে, সানরাইজার্স হায়াদরাবাদের হয়ে মুস্তাফিজের আইপিএল অভিষেক ২০১৬ সালে। সেবারই হায়াদরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বড় অবদান ছিল তার। একইসঙ্গে ১৭ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে ‘সেরা উদীয়মান’ পুরস্কার জেতেন মুস্তাফিজ। দুই মৌসুম খেলে মুস্তাফিজ যুক্ত হন মুম্বাইয়ে। এরপর রাজস্থান হয়ে তাকে ভিড়িয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস।

এএইচএস