নাফিসের বিশ্বাস, ‘প্রতি মুহূর্তেই সাথে থাকেন বাবা’
বাবার কোলে নাফিস, সঙ্গে তার মা (বামে)
জুন মাসের দ্বিতীয় রোববারের (১৮ জুন) আলো ফুটতেই হাজির ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। যদিও বাবা কিংবা মায়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিবসের প্রয়োজন নেই, তবুও বিশ্বজুড়ে বাবা-সন্তানের আবেগমিশ্রিত স্মৃতি নিয়ে দিনটি পালিত হয়। সন্তানদের কাছে বাবারা সবসময় সুপার হিরো, যদিও সেটা খুব একটা প্রকাশ পায় না। কবির ভাষার মতো নিগূঢ়ভাবে লুকায়িত থাকে, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন নাফিস ইকবাল খান। তার কাছে বাবা মানে অত্যন্ত প্রিয় এবং সবচেয়ে কাছের মানুষ। প্রতি মুহূর্তেই তিনি বাবাকে মিস করেন। বাংলাদেশের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল নাফিসের ছোট ভাই। তাদের বাবা ইকবাল খান ২০০০ সালে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। সে কারণে নাফিসের আক্ষেপ বাবা নিজ চোখে সন্তানদের জাতীয় দলে খেলা দেখে যেতে পারেননি। তবে নাফিসের বিশ্বাস, প্রতি মুহূর্তে বাবা তার সঙ্গে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
বাবা ইকবাল খান যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, নাফিস তখন অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলছেন। স্বাভাবিকভাবে তামিম তখন আরও ছোট। এবারের বাবা দিবস নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটার কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে।
বাবার সঙ্গে আপনার সম্পর্কের রসায়নটা কেমন ছিল?
নাফিস : আমার সঙ্গে বাবা খুবই ক্লোজ ছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার জন্য দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকাবস্থায় আমাকে ঢাকায় চলে যেতে হয়েছিল। যে কারণে ওই সময়ে বাবাকে কাছে পেতাম কম। তবে আমাদের যখন যা কিছু প্রয়োজন, সব বাবা-ই দেখতেন।
বিজ্ঞাপন
কখনও নিজের বাবাকে ভালোবাসার কথা বলতে পেরেছেন?
নাফিস : সত্যি কথা বলতে এটা আসলে আমাদের চাল-চলন ও কথা-বার্তায় সবসময় থাকতো, যতদিন বাবা ছিলেন। এটা কিন্তু মানুষ বুঝতে পারে, আপনি আপনার মা-বাবাকে বারবার বলার দরকার নেই। প্রকাশ করা ভালো, তবে কেন জানি বাবার ক্ষেত্রে এই ভালোবাসি বলাটা কখনও হয়ে ওঠেনি। তার মানে এই না যে ভালোবাসি না। প্রচুর ভালোবাসতাম, এটা বাবাও ভালো করেই জানতেন।
নাফিস বলছেন, যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ছিলাম, তখন বাবা না ফেরার দেশে চলে যান। তবে উনার মৃত্যুর ৯ দিন আগে জাতীয় লিগে আমার শেষ খেলাটা দেখেছিলেন তিনি। আমি যতদূর জানি এবং দেখেছি তিনি আকরাম চাচাকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করতেন। এবার আপনি চিন্তা করেন যদি তিনি নিজ ছেলেদের জাতীয় দলে দেখতেন, অবশ্যই অনেক বেশি গর্বিত হতেন। এই জিনিসটা আমরা সবসময় মিস করি।
ক্রিকেটার হওয়ার শুরু থেকেই কী বাবার সাপোর্ট পেয়েছেন?
নাফিস : আম্মুর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহটা বেশি ছিল। আম্মাও আমাদের খুবই ভালোবাসে। পরবর্তীতে তিনিই তো বড় করেছেন আমাদের। তবে ক্রিকেটার হওয়ার জন্য সবসময়ই বাবা সাপোর্ট করেছেন। নট অনলি ক্রিকেট জীবনের সবকিছুতেই তার সমর্থন ছিল; এমনকি কোনো কোনো আড্ডায় বাবা এগিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকে।
ঠিক কোন সময়টায় বাবাকে মিস করেন?
নাফিস : প্রত্যেক মুহূর্তেই বাবাকে মিস করি। এটার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, আমি নিজেই একজন বাবা। এমন কোনো সময় নেই যে বাবাকে মিস করিনা। স্পেশালি কথা হয় যেকোনো কিছু যদি কেনা হয় বা কোথাও যাওয়া হয়, তখন ভাবি বাবা থাকলে কেমন হতো। বাবা এটা পছন্দ করতেন, এটা-ওটা করতেন। এই ধরনের কথা আমি, তামিম কিংবা পরিবারের মধ্যে হয়। বাচ্চাদের সঙ্গেও সেগুলো শেয়ার করি। আম্মুর সঙ্গেও কথা হয় এসব বিষয়ে।
একসময় জাতীয় দলে খেলেছেন, এখন আপনার ভাই খেলছে। এটা দেখলে আপনার বাবার অনুভূতি কেমন হতো?
নাফিস : জাতীয় দলে ২০০৩ সালে আমার ডেব্যু হওয়ার সময় তিনি বেঁচে ছিলেন না। যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ছিলাম, তখন বাবা না ফেরার দেশে চলে যান। তবে উনার মৃত্যুর ৯ দিন আগে জাতীয় লিগে আমার শেষ খেলাটা দেখেছিলেন তিনি। আমি যতদূর জানি এবং দেখেছি তিনি আকরাম চাচাকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করতেন। এবার আপনি চিন্তা করেন যদি তিনি নিজ ছেলেদের জাতীয় দলে দেখতেন, অবশ্যই অনেক বেশি গর্বিত হতেন। এই জিনিসটা আমরা সবসময় মিস করি। এখনও আমরা সেটা নিয়ে চিন্তা করি, তিনি ওপর থেকে দেখছেন কিন্তু আমরা তাকে দেখতে পারছি না।
বাবাকে কখনও বলতে পারেননি এমন কোনো কথা আছে কি, যেটা এই বাবা দিবসে বলতে চান...
নাফিস : সত্যি কথা বলতে বাবাকে খুব মিস করি। অনেক ভালোবাসি তাকে। আমি মনে করি সবসময় বাবা আমাদের ভেতরেই থাকেন। হয় না যে মানুষ বিজি হয়ে যায়, তবে বাবা প্রত্যেকটা মুহূর্তেই আমাদের সাথে থাকেন।
এসএইচ/এএইচএস