এশিয়ান গেমসের ভেন্যুর কারিগর বাংলাদেশ
জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। সেই ক্যাম্পাসের এক কোণে পাহাড়ের কোল ঘোষে ছোট্ট একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এক পাশে ছোট্ট গ্যালারী, মাঠে পিচ আর চার পাশে ছোট্ট ফ্লাডলাইট। এই ছোট্ট অবয়বের স্টেডিয়ামেই চলছে এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটে পদকের লড়াই।
ক্রিকেটের অন্যতম প্রধান উপকরণ পিচ। সেই পিচ ও মাঠের তত্ত্ববধায়ন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং বাংলাদেশি কিউরেটর জসিমউদ্দিন উভয়ের সম্পৃক্ততায় এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট ভেন্যু খেলা উপযোগী হয়েছে। চীন ক্রিকেট বোর্ড এবং গেমস আয়োজক কমিটি উভয় বাংলাদেশকে এজন্য বিশেষভাবে স্মরণ করে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরি সুজন হাংজুর ক্রিকেট গ্রাউন্ডসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারটি ঢাকা থেকে জানালেন এভাবে, 'আমাদের সভাপতির একটা কমিটমেন্ট ছিল গ্রাউন্ডস করে দেয়ার ব্যাপারে। তাই বিসিবি’র পক্ষ থেকে আমরা এসিসি ও চীন ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি।’
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ২০১৮-২০২১ সাল পর্যন্ত এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি ছিলেন। তিনি সভাপতি থাকাবস্থায় অলিম্পিক কাউন্সিল অফ এশিয়া ২০২২ হাংজু এশিয়ান গেমসে ক্রিকেটকে অর্ন্তভূক্ত করে। গেমস আয়োজক কমিটি জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডকে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রুপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিজ্ঞাপন
বিসিবির অন্যতম পরিচালক ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডস নির্মাণ প্রসঙ্গে ঢাকা থেকে বলেন, 'আমরা ট্যাকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছি। গামিনি ডি সিলভা (প্রধান কিউরেটর বিসিবি), রাসেলরা সরাসরি গিয়েছে। তারা পিচ, আউটফিল্ড তত্ত্বাবধান করার পাশাপাশি স্থানীয়দের রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। বাংলাদেশি কিউরেটর জসিমও সেখানে কাজ করেছে। সব মিলিয়ে এটা দারুণ বিষয় যে, দেশের বাইরেও আমরা গ্রাউন্ডস বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। সম্প্রতি নেপালে এশিয়া কাপ বাছাইয়ের ভেন্যুও আমাদের গ্রাউন্ডসম্যানের তৈরিকৃত ।'
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা প্রকোপ শুরু হয়। অনেক দিন বাংলাদেশ-চীন যাতায়াত স্থগিত ছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে কিউরেটর চীনে পাঠানো কঠিন ছিল। সেই সময় হংকংয়ের চীফ কিউরেটর বাংলাদেশের জসিমউদ্দিন হাংজুর এই ক্রিকেট গ্রাউন্ডসে সম্পৃক্ত হন।
বাংলাদেশের অন্যতম দক্ষ কিউরেটর জসিমউদ্দিন। দেশের অনেক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ তার হাতে গড়া। গত এক যুগের বেশি সময় ক্রিকেটে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পিচ তৈরি করছেন। হাংজু এশিয়ান গেমসের পিচ ও গ্রাউন্ডস সম্পর্কে বলেন, 'করোনার সময় বাংলাদেশ থেকে চীনে আসা সম্ভব ছিল না। আমি হংকং থাকায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও চীন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি দু’জন কিউরেটরকে নির্দেশনা দিয়ে হাংজু পাঠাই এবং পরবর্তীতে আমিও গিয়েছি একাধিকবার। এক বছরের বেশি সময় লেগেছে মাঠ ও পিচ তৈরিতে', ম্যাকাও থেকে বলেন জসীম।
এশিয়ান গেমসের আগে হাংজুর জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হয়েছিল ইস্ট এশিয়া ক্রিকেট কাপ। সেই টুর্নামেন্টের আগে এসেছিলেন বিসিবি’র প্রধান কিউরেটর গামিনি। যদিও এর আগেই মাঠ ক্রিকেট উপযোগী হয়।
এশিয়ান গেমসে সর্বশেষ দুই ক্রিকেট আসরের সঙ্গেও ছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে কোরিয়ার ইনচোনে পিচ তৈরি করেছিলেন খোকন আর ২০১০ চীনের গুয়াংজুতে এশিয়ান গেমসের পিচ ও সামগ্রিক মাঠ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জসিমই, 'গুয়াংজু গেমসের পিচ তৈরি, মাঠের সকল কিছুতেই আমি ছিলাম। হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই অসংখ্য পিচ তৈরি করেছি', বেশ গর্ব করে বলেন জসীম।
১৯৮৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু জসীমের। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন। চট্টগ্রামের সাগরিকা জসিমের হাতেই তৈরি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার ছেলেও হংকংয়ে কিউরেটর হিসেবে কাজ করছেন। নিজের এই অবস্থানের জন্য জসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এভাবে, 'আমার আজকের অবস্থানের পেছনে প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই সৈয়দ আশরাফুল হককে। তার মাধ্যমেই আমি প্রথম বাইরে কাজ করার সুযোগ পাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অবদানও অনেক। তারাও আমাকে শুরুর দিকে অনেক সহায়তা করেছে যার ফলে আজকের জায়গায় আসতে পেরেছি। পাশাপাশি বুলবুল ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই (আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান), তার কাছ থেকেও অনেক সহায়তা পেয়েছি। '
পীচ তৈরিতে দক্ষ জসীম বেশ কয়েক বছর থেকেই দেশের বাইরে। বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রিকেটের মানোন্নয়নে আরো ভালো পিচ প্রয়োজন। বাংলাদেশে কাজের ব্যাপারে জসীম বলেন, 'যথাযথ সম্মান পেলে অবশ্যই দেশের হয়ে কাজ করব, অর্থ সেখানে মুখ্য নয়।'
এজেড/এইচজেএস