মেহেদী হাসান রানা

যত দিন গড়াচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। টানা তিনদিন মৃত্যুর পরিসংখ্যান সেঞ্চুরির কোটা ছুঁয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকাডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রথম ধাপের লকডাউন শেষ না হতেই দ্বিতীয় ধাপে আরও সাতদিন লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে যতই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ছে, ততই হতাশা বাড়ছে ক্রিকেটারদের।

ঢাকা পোস্টকে তরুণ পেসার মেহেদী হাসান রানা বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক। এই পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে জানি না। আবার কবে মাঠে ফিরব সে নিশ্চয়তা নেই। অনিশ্চয়তায় সময় কাটাচ্ছি বাড়িতে বসে। ক্রিকেট তো আমাদের উপার্জনের একমাত্র পথ, রুটিরুজি। খেলা না থাকলে কিভাবে ভালো থাকব বলেন? দোয়া করছি, যাতে দ্রুত মাঠে ফিরতে পারি।’

এদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছে গতবছরের মার্চে। এরপর নিয়মিত টুর্নামেন্টগুলো মাঠে গড়ায় না। সবশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) হয়েছিল ২০২০ সালে। সেবার শুরুতে কোনো দলে ছিলেন না রানা। পরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে নাম লেখান ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার। অনবদ্য বোলিংয়ে ১০ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন তিনি।

বিপিএল শেষ হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রানাকে দলে নেয় চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড। লিগের প্রথম ম্যাচে পারটেক্সের বিপক্ষে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। এরপর করোনাভাইরসের কারণে স্থগিত হয়ে যায় ডিপিএল।

করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমলে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে প্রস্তুতিমূলকভাবে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে তিন দলের এই টুর্নামেন্টে জায়গা হারান রানা। সুযোগ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। ঢাকার হয়ে খেলা দুই ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। 

এরপর গত মাসে জাতীয় ক্রিকেট লিগ ফিরলে দারুণ শুরু করেন রানা। চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে খেলতে নেমে রাজশাহীর বিপক্ষে দুই ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন। পরের ম্যাচে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ৩ উইকেট। দুই ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু দুই দুই রাউন্ড পরেই স্থগিত হয়ে যায় লিগ। কারণ, আবার সেই করোনাভাইরাস।

যদিও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বলেছিল বিসিবি। তবে দিনে দিনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে লকাডাউন, তাতে সহসা যে খেলা ফিরছে না তা একপ্রকার অনুমেয়। এতে যাদের ক্রিকেট নির্ভর ক্যারিয়ার, তাদের রুটিরুজির যোগান দিতে হিমশিত খেতে হচ্ছে। সঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে খেলার যে স্বপ্ন বুনেছিলেন রানা, সেটিও আস্তে আস্তে ফিকে হওয়ার পথে।

আক্ষেপ নিয়ে রানা জানালেন, ‘আমি অনেকটা দুর্ভাগা। কারণ, দেখেন আমার সামনে কিন্তু ভালো সুযোগ ছিল। বিপিএলে চট্টগ্রামের হয়ে ভালো করলাম। ভালো টাচে ছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সব এলোমেলো হয়ে গেল। করোনার জন্য দীর্ঘদিন বিরতি পড়ল। এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে খেলার সুযোগ পেলাম। হ্যাঁ মানছি যে দুই ম্যাচ সুযোগ পেয়েছি, ভালো কিছু করতে পারেনি।’

এই বাঁহাতি পেসার সঙ্গে যোগ করেন, ‘তবে ডিপিএলে ভালো শুরু পেয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচেই ৪ উইকেট। এবার জাতীয় লিগ কিন্তু ভালোভাবে শুরু হলো। প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে রাজশাহী বিপক্ষে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলাম। দুই ম্যাচে ১০ উইকেট নিলাম। এরপর এই লিগ বন্ধ হয়ে গেল। এখন তো লকডাউইনের মেয়াদ বাড়ছে। জানি না আবার কবে ফিরতে পারব।’

টিআইএস/এটি/এমএইচ