অনেক প্রত্যাশা দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে নিজের ক্যারিয়ারের শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে নিজের অভিষেক সিরিজেই ছড়িয়েছিলেন আলো। সেই সিরিজেই খেলেছিলেন ৮১ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। বাংলাদেশ হারলেও সেবার নাঈম নজর কেড়েছিলেন। পরবর্তীতে নির্বাচকদের ভরসায় পরিণত হয়েছিলেন নাঈম শেখ। 

কিন্তু সেইসময়েই ঘটল ছন্দপতন। নিজের প্রতিভাকে যেন মেলে ধরতে হিমশিম খেয়েছেন বারবার। এনিয়ে সমালোচনাও কম সইতে হয়নি। তবে দৃশ্যপট বদলাল এবারের বিপিএলে। দল হিসেবে দুর্দান্ত ঢাকা যতখানি ব্যর্থ ছিল, ঠিক ততটাই বিপরীত ছিলেন নাঈম। ব্যর্থতার চাদরে মোড়া ঢাকা শিবিরে, নাঈম ছিলেন উজ্জ্বল। করেছেন ৩১০ রান। এখন পর্যন্ত সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছে তার নাম। 

দুর্দান্ত ঢাকার এই ব্যাটার আছেন আসন্ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। বিপিএলের পারফর্ম দিয়েই ডাক পেয়েছেন দলে। ঢাকা বিদায় নেওয়ায় এখন অবশ্য আছেন বিশ্রামে। সেই সুবাদে তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওন। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো। 

ঢাকা পোস্ট: লম্বা একটা টুর্নামেন্ট শেষ করলেন বিশ্রাম পাচ্ছেন কতদিন? 

নাঈম শেখ: বিশ্রাম বলব না, যেহেতু শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরু ৪ মার্চ। তার আগে ২৬ তারিখ থেকে হয়তো ক্যাস্প এর আগে এখন বাসায় সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ দিন সময় কাটাতে পারব। এরপর নিজের ব্যক্তিগত অনুশীলনে নামতে হবে। লম্বা বিশ্রাম না, বলতে পারেন লম্বা টুর্নামেন্ট শেষে একটু ছুটি আর কি। 

ঢাকা পোস্ট: আপনি কতটা সন্তষ্ট ৩১০ রান করে?

নাঈম শেখ: সত্যি কথা বলতে এখানে দেখবেন ছোট ছোট দুইটা অর্ধ-শতক, তিন চারটা ত্রিশ-চল্লিশ,  এগুলো যদি আমি ৭০ বা ৮০ তে শেষ করতে পারতাম তাহলে দল ভালো কিছু আরো কনট্রিবিউট পেতো। আমার ব্যক্তিগত রানটাও আরো লম্বা হতো। তো এখানে কিছু জায়গা আছে যেখানে উন্নতি করতে পারতাম। এই জায়গায় যদি উন্নতি করতে পারতাম তাহলে ভালো লাগা কাজ করত আর কি। আশা তো সবসময় বেশি থাকে। কোনো নিদিষ্ট সংখ্যা না। যখন ভালো সময় যাবে তখন যত বেশি রান করা যায়। ছোট ছোট যা ভুল আছে চেষ্টা থাকবে যাতে ভবিষ্যতে না হয় আর। 

ঢাকা পোস্ট: অনেক ম্যাচে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ ছিল তা হয়নি, এর উত্তর খুজেছেন কিনা? 

নাঈম শেখ: অবশ্যই গেম পরিস্থিতি একটা ম্যাটার করে। যেখানে ছোট ভুল করে গেছি বা হয়তো অনেক সময় প্রেশার নিতে পারিনি বা প্রেশার যখন দেওয়ার সময় তখন আমি মিস করে গেছি। আলাদা করে নিজেরও কিছু ভুল আছে। আমি যদি একটু সাপোর্ট পেতাম তাহলে হয়তো আরেকটু ভালো করতে পারতাম। কিছু সময়ে নিজের জন্য ভুল হয়েছে কিছু সময়ে নিজের অজান্তে পার্টনারের একটা ভুলে হয়তো হয়েছে। তো সবকিছু মিলিয়ে একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে নাম ধরে কারোর দোষ নেই। দোষ নিজেরই ভাই। নিদিষ্ট করে বলছি না এটা আমার সমস্যা এরকম কিছু না। ছোট ছোট সিলি মিসটেক। 

ঢাকা পোস্ট: ১৪ টা ছক্কা মেরেছেন বিপিএলে। বিগ শট কাজ করছেন কিনা? 

নাঈম শেখ: ভালো প্রশ্ন করেছেন আপনি, অবশ্যই বিপিএল শুরুর আগেই যখন খেলেছি আলাদা করে আমার রেঞ্জ হিটিং নিয়ে কাজ করেছি। স্কোরিং শট কিভাবে বাড়ানো যায়, মেবি ১০ রাউন্ড পর্যন্ত আমি ছয়ের দিক থেকে টপে ছিলাম। এটা নিয়ে ভালো কাজ করছি না হলে হতো না। সত্যি বলতে মোহামেডানের সহকারী কোচ আছেন আনোয়ার ভাই তার সাথে এখনো কাজ করছি। খুবই সাপোর্টিভ, মেন্টালি সাপোর্টও দেন। শেষ এনসিএল, বিসিএল ওনার সাথে কাজ করেছি। 

এছাড়া অনেকের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছি যখনই সুযোগ হয় নাফিস ভাই, আফতাব ভাই, নাঈম ভাই আছেন তাদের সাথে কাজ করেছি। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররা খুবই সাহায্য করেন। 

ঢাকা পোস্ট: তাসকিন, শরিফুল, আপনি এবং রস ভালো করার পরেও দল হিসেবে ব্যর্থ, ব্যাখ্যা কি? 

নাঈম শেখ: অবশ্যই কাউকে দোষ দিব না। একজন ক্রিকেটার হিসেবে কাউকে ব্লেম দেওয়া উচিত নয়। সবার সেরাটা বলতে হান্ড্রেড পার্সেন্ট চেষ্টাটা করছে। হয়তো চেষ্টার ত্রুটি ছিল যে কারণে হয়নি। আমিও যে সবদিন ভালো খেলেছি এরকম না। আরেকজন ভালো খেলেছে আমি খেলিনি। আমি খেললাম আরেকজন পারেনি। টিম গেমটা হয়নি আর কি। 

ওভারঅল চারজনের কনট্রিবিউশন ভালো ছিল। যদি ৬/৭ জনের কনট্রিবিউশন হতো, এভারেজ হয়তো তাহলে হতো। যারা প্লে অফে খেলবে দেখবেন টিম গেম খেলছে সবাই। যে কারণে আমরা যদি একসাথে খেলতে পারতাম তাহলে আরো ভালো হতো। ১ জয়ের জায়গায় ৪টা জয় থাকতো। যারা টিম গেম খেলছে তারাই সুপার ফোর খেলবে ডিনাই করার অপশন নাই কোনো। 

ঢাকা পোস্ট: ১১৯+ স্ট্রাইকরেট নিয়ে কি চিন্তিত নাকি খুশি?

নাঈম শেখ: অবশ্যই না, ভালোর কি কোনো শেষ আছে। মানুষের চাওয়া পাওয়ার কোনো শেষ নেই। তবে এবার ভালো উইকেট ছিল, লাস্ট ২/৩ ম্যাচ বাদে আমি ১৩০ মতো স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছি। শেষ দুই তিন ম্যাচ এরকম হওয়ার কারণও আছে সেটা বলতেছি না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ বলব। টুর্নামেন্ট যেভাবে হয়েছে খুশি তবে এখানে খুশি থাকতে চাই না, অনেক দূর যেতে হবে।  

ঢাকা পোস্ট: আবারো জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন। আশা করেছিলেন কিনা এখনই পাবেন?

নাঈম শেখ: আমাদের জাতীয় দল এরকম জায়গা যে ভালো খেললে পারফর্মম্যান্সের মূল্যায়ন করা হয়। অবশ্যই যেভাবে খেলা শুরু করেছিলাম বিপিএল এরপর যখন কল পাই, আমার কাছে ভালো লেগেছে। তবে ওরকম আশা নিয়ে সবসময় খেলা হয়না যে, আমি জাতীয় দলে ক্যামব্যাক করব। আলাদা এরকম কিছু নিয়ে বিপিএল শুরু করিনি। টুর্নামেন্টে ইচ্ছা ছিল ভালো ক্রিকেট খেলার, সেই ভালো হয়েছে। এরপর সিলেক্টররা সেই পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করেছে। 

ঢাকা পোস্ট: ৫ ওপেনার দলে, একাদশে সুযোগ কঠিন কিনা?

নাঈম শেখ: ৫ জন আছে নাকি ১০ জন আছে ওপেনার এটা এখন পর্যন্ত চিন্তাই করিনি। এতটুকু চিন্তা করেছি যে সামনে সিরিজ সুযোগ আসলে আমি আমার শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব। 

ঢাকা পোস্ট: গেল বছরের এশিয়া কাপ দলে ছিলেন। পরে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ। খারাপ লাগা আছে নিশ্চয়? 

নাঈম শেখ: এটা আমার কাছে অবশ্যই পুরোটা পারফর্মম্যান্স। কেননা অবশ্যই পারফর্মম্যান্স ছাড়া সুযোগ পাওয়া যায় না। আমার কাছে খারাপ লাগা কাজ করেনি, অনেক সময় ভাগ্য অনেক কিছু ম্যাটার করে। হয়তো সেই সময় ভাগ্য সাথে ছিল না। কিন্তু একটা পার্সেন্ট আমি হতাশ ছিলাম না। শতভাগ বিশ্বাস ছিল ভালো করলে আবারো দলে সুযোগ পাবো। যদি আপনি ২৩ বিশ্বকাপের কথা বলেন তখন ২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা আসে। কারণ আমি ২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছি। ২১ পরে ২২ এর আশা রাখতেই পারি। সেই সময়ে পাওয়া উচিত ছিল যদি বলেন। চলতি বছর বিশ্বকাপ আছে চেষ্টা থাকবে খেলার এটা ড্রিম সবার। ২১ সালের সেরা রান গেটার আমি দেশের মধ্যে। শুধু বিশ্বকাপ খেলা আশা না, যদি খেলি তাহলে যেন টপ হতে পারি ভালো কিছু দিতে পারি দেশকে। 

এসএইচ/জেএ