করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বন্ধ নেই খেলাধুলা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ও ঘরোয়া লিগগুলো চলছে। তবে এবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিয়ে শুরু থেকেই ছিল প্রশ্ন। ক্রিকেটের পাড় সমর্থকদের অধিকাংশই আইপিএলের বিরোধিতা করেছেন। সেসব কথা কর্নপাত করেনি আয়োজক সংস্থা। তবে পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় হাজার কোটি টাকার এই টুর্নামেন্ট স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড।

আইপিএল নিয়ে শুরু থেকেই শঙ্কা ছিল বটে, সে শঙ্কা মাথায় নিয়েই খেলতে নামেন দেশ-বিদেশের নামীদামী ক্রিকেটাররা। কিন্তু বাকিদের মতো স্রোতে গা না ভাসিয়ে আগেই ভবিষ্যৎ পড়তে পেরেছিলেন কয়েকজন ক্রিকেটার। ভারতে করোনার প্রকোপ বাড়লে কোটি টাকার মোহ দূরে সরিয়ে আইপিএল ছাড়েন অস্ট্রেলিয়ান তিন ক্রিকেটার; অ্যান্ডু টাই, কেন রিচার্ডসন ও অ্যাডাম জাম্পা। 

নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আইপিএল নিয়ে রীতিমতো বোমা ফাটান জাম্পা। আয়োজন কমিটির দিকে সরাসরি তোপ দেগে বলেন, ‘এর আগেও বেশ কয়েকবার জৈব সুরক্ষা বলয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ভারতের বায়ো বাবল সবচেয়ে দুর্বল। এটা ভারত বলেই হয়েছে। মাস ছয়েক আগে দুবাইয়ে আইপিএল হয়েছিল। সেখানে এরকম কিছু মনে হয়নি। অত্যন্ত সুরক্ষিত মনে হয়েছিল নিজেকে। আমার মনে হয় আইপিএলের জন্য দুবাই ভাল বিকল্প। তবে অবশ্যই কিছু রাজনৈতিক কারণ থাকে একটা ইভেন্টের পিছনে।’

এই লেগ স্পিনার আরো জানিয়েছিলেন, ‘ভারতে কোভিড পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। ট্রেনিং, জৈব সুরক্ষা বলয়ের ক্লান্তি ও দলে সুযোগ না পাওয়া; এই সব মিলিয়ে মনে হয়েছে, এটাই ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক সময়। মাঝ পথে বেরিয়ে আসলে অবশ্যই অর্থের দিকটা ছাড়তেই হবে। কিন্তু আমার কাছে সবার আগে মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা। অনেকে বলছেন যে, ক্রিকেট মনের অবকাশ। সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমি বলব, পরিবারের কেউ মৃত্যুশয্যায় থাকলে, মাথায় ক্রিকেট আসে না।’

জাম্পার সেই মন্তব্য ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছিল আইপিএলের জৈব সুরক্ষা বলয় আসলেই সুরক্ষিত কি না? অবশেষে সত্যি হলো সেই শঙ্কা। টুর্নামেন্টের মাঝপথে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দুই ক্রিকেটার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। চেন্নাই সুপার কিংসের বোলিং কোচসহ দুই কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঋদ্ধিমান সাহা আজ (মঙ্গলবার) আক্রান্ত হওয়ায় আইপিএল স্থগিতের ঘোষণাও এসে গেছে।

আইপিএল স্থগিত হওয়ার পর স্থানীয় খেলোয়াড়দের দিকে তোপ দেখেছেন বিসিসিআইয়ের এক কর্তা। জানিয়েছেন, ‘ঘরের মাঠে আইপিএল হচ্ছে বলেই তারা মনে করছে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে! আর আইপিএল দলগুলো যেসব হোটেলে থাকছে সেখানে কি অন্য অতিথিও রাখা হচ্ছে? রাখা হলে, তাদের জন্য আলাদা প্রবেশ বা বের হওয়ার রাস্তা রাখা হয়েছে কি? দলগুলোর সেবা দেওয়ার জন্য অনেক লোক আছে, কেউ খাবার সরবরাহ করে, কেউ রুম পরিষ্কার রাখে। কাদের আপনি বিশ্বাস করবেন? হোটেলগুলো হয়তো তাদের কর্মীদের নিয়মিত পরীক্ষা করাচ্ছে, কিন্তু ওদের মাধ্যমে যে করোনা ছড়াবে না, তার নিশ্চয়তা কী?’

টিআইএস/এটি