‘আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে- কিছুই কি নেই বাকি?’- শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে এই লাইনটা উচ্চারিত হওয়ার কথা বারবার! অনেক প্রশ্ন, তবে উত্তর জানা নেই কারও। ক্রিকেটার থেকে কোচিং স্টাফ, এমনকি টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতিটি সদস্য কাঠগড়ায়। প্রশ্নবানে জর্জরিত সবাই। তাদের উত্তর দেওয়ার একমাত্র মঞ্চ মাঠের লড়াই। লঙ্কানদের বিপক্ষে ওই লড়াই শুরু হচ্ছে ২৩ মে, দুপুর ১টায়।

নামে বাঘ-সিংহের লড়াই। এতে সবদিক বিবেচনায় পরিষ্কার ফেভারিট স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে পরিসংখ্যান সুখকর তথ্য দিচ্ছে না। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে নিজেদের খেলা সবশেষ ১০ ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার থেকে অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে থাকলেও স্বস্তি নেই অধিনায়ক তামিম ইকবালের দলের।

স্বস্তি থাকার কথাও নয় অবশ্য। শুরুতে দলীয় হতাশার কথা দিয়ে শুরু করা যাক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ফরম্যাট বদলায়, পোশাক বদলায়, বদলায় প্রতিপক্ষ, তবুও বিজয় উল্লাস করা হয় না লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। দেশ পেরিয়ে বিদেশ, কোথাও নেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা। 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজ আইসিসির বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। ৩০ পয়েন্টের লড়াই। ২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পূর্ণ ৩০ পয়েন্টই পেতে চাইবে বাংলাদেশ দল। এই সিরিজ নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের মঞ্চ সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদদের। তাসকিনের নিউজিল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কার সফরে দ্রুতি ছাড়ানোর পর এবার ধারাবাহিকতা দেখানোর পালা। বাকিদের যোগ্যতা প্রমাণের মঞ্চ।

সৌম্য, লিটন, মিঠুনদের নিয়ে সমালোচনা ঢের। প্রতিভার জোরে টিকে থাকলেও সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারছেন না। এই সিরিজেও ব্যর্থ হলে তাদের যারা সুযোগ দিচ্ছেন তাদের মুখ লুকানোর জায়গা থাকবে না! অধিনায়ক তামিম ইকবালকেও দিতে হবে বড় পরীক্ষা। ২০২৩ বিশ্বকাপ ভাবনায় তাকে নেতৃত্বভার দিয়েছে বিসিবি। তবে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ভরাডুবি তামিমের। এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ৩-০ ব্যবধানে হেরে এসেছে তার দল।

হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর চাকরির ফয়সালা হতে পারে এই সিরিজ। তার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনও শোনা গেছে, যেকোনো মুহূর্তেই দায়িত্ব ছাড়তে হতে পারে তাকে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে চাইলেই নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়, সেদিক দিয়ে। পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলে বিদায় ঘণ্টা বাজবে তার।

সবকিছুই আবার সুন্দর হতে পারে, হাওয়ায় মেলাতে পারে অভিযোগ। এজন্য মাঠের লড়াইয়ে বিজয় নিশান উড়াতে হবে বাংলাদেশ দলকে। এই যুদ্ধে খানিক স্বস্তি আছে টাইগারদের। দলের পরীক্ষিত সেনানী সাকিব আল হাসান দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরেছেন। তার দলে থাকায় অধিনায়কের কাঁধের চাপ অর্ধেকই কমে যাওয়ার কথা।

সিরিজের প্রথম ম্যাচ আগামীকাল (রোববার) দুপুর ১টায়। করোনাভাইরাসের কারণে মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে সমর্থকরা বসে খেলা দেখতে পারবেন না। এজন্য টিভি পর্দায় চোখ রাখতে হবে তাদের। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে গাজি টিভি ও টি-স্পোর্টস সরাসরি সম্প্রচার করবে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে।

প্রথম ম্যাচে ৩ পেসার খেলানোর ভাবনা বাংলাদেশ দলের। লঙ্কানলদের সঙ্গে নিজেদের তুলনায় হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়েছেন, ‘আমরা দেশে অনেক ভালো খেলি। তবে শ্রীলঙ্কাকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। অনেক ভালো কিছু খেলোয়াড় নিয়ে এসেছে ওরা। তারা নিজেদের প্রমাণ করতে মুখিয়ে থাকবে।’

প্রতিপক্ষকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ডমিঙ্গো বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার দুই-একজন বড় খেলোয়াড় এবার নেই। চান্দিমাল নেই, ম্যাথিউস নেই। তবে তাদের হাই কোয়ালিটি খেলোয়াড় আছে, কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। তরুণ দলটি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারে যা আমাদের চাপের কারণ হতে পারে। আমার ছেলেরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। টপ অর্ডার ভালো করছে। দুই ব্যাটিং অর্ডারের লড়াই দেখতে আমিও উদগ্রীব হয়ে আছি।’

এদিকে ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর এই ট্রফি আর হাতে তোলা হয়নি শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও ব্যর্থ হয় লঙ্কানরা। এবার হেড কোচ মিকি আর্থারের অধীনে ২০২৩ বিশ্বকাপে চোখ শ্রীলঙ্কার। যার প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে দিয়ে।

দলের গভীরতা আর তরুণদের সক্ষমতা পরখ করতে এবার অভিজ্ঞদের বিশ্রাম দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশে সফরে এক ঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে এসেছে তারা। এমনকি দলের নিয়মিত অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকেও দেশে রেখে এসেছে সফরকারীরা। এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরাকে।

গত মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা ২০ সদস্যের দলের ৯ জনই অনুপস্থিত। ১৮ সদস্যের এই দলে ৩০ বছরের বেশি মাত্র ৩ জন ক্রিকেটার। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ইসুরু উদানার বয়স সর্বোচ্চ ৩৩ বছর।

লঙ্কানরা বাংলাদেশে পা রেখেই জানিয়েছে তাদের হারানোর কিছু নেই। তবে মাঠের লড়াইয়ে ছেড়ে কথা বলবে না সফরকারীরা। প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে অধিনায়ক পেরেরা বলেন, ‘আমরা জানি যে বাংলাদেশের মূল শক্তির জায়গা স্পিন। সুতরাং আমরা আশা করছি স্পিনারদের সাহায্য করে এমন উইকেটই হতে পারে। আমি মনে করি আমাদের ফিল্ডিং সামর্থ্য বেশ ভালো যা সিরিজে বড় প্রভাব রাখতে পারে।’

দলের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি, ‘আমাদের ডেথ বোলিং নিয়ে পরিকল্পনা আছে কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে এই ভূমিকাটা কেবল অভিজ্ঞরাই ভালোভাবে সামলাতে পারে। আমরা শুরু থেকেই নিখুঁত কিছু আশা করতে পারি না। আমাদের বোলাররা নতুন এই ভূমিকায়, সুতরাং আমাদের ধৈর্য্য ধরার প্রয়োজন। মাঝে মাঝে আমদের আঘাত পাওয়ার প্রয়োজন হয় এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’

লঙ্কান স্কোয়াডের ৫ পেসারের মধ্যে এখনো ৩ জনের অভিষেক হয়নি। পেস আক্রমণে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুশমন্থ চামিরা খেলেছেন মাত্র ২৫ ম্যাচ। যাতে উইকেট নিয়েছেন ২১টি। আসিথা ফার্নান্দো খেলেছেন মাত্র ২টি। চামিকা করুণারত্নে, বিনুরা ফারনান্দো ও শিরান ফারনান্দোর এখনো অভিষেক হয়নি। 

অভিজ্ঞদের মধ্যে পেস অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন ইসুরু উদানা। পেসারদের তুলনায় স্পিন বিভাগ খানিক শক্তিশালী। পরীক্ষায় ফেলতে পারেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার লাকশান সান্দাকাম, রামেশ মেন্ডিস ও আকিলা ধনাঞ্জয়ারা। যদিও রামেশের এখনো অভিষেক হয়নি। লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও বাংলাদেশ দলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারেন।

প্রথম ওয়ানডের জন্য দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ-

বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।

শ্রীলঙ্কা: নিরোশান ডিকওয়েলা, দানুশকা গুনাথিলাকা, কুশাল পেরেরা (অধিনায়ক), কুশাল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দাসুন সানাকা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ইসুরু উদানা, লক্ষ্মণ সন্দাকান, দুশমন্ত চামিরা ও বিনুরা ফার্নান্দো।

টিআইএস