রাজনৈতিক বৈরিতার জের ধরে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসে’ (ডব্লিউসিএল) পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের দাবি তোলেন সাবেক কয়েকজন ভারতীয় তারকা। তাদের আপত্তির মুখে ডব্লিউসিএল কর্তৃপক্ষ ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা দেয়। সেই ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা এখনও থামেনি। ক্ষোভ ঝেড়েছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদিও।

বার্মিংহামের এজবাস্টনে গত রোববার সাবেক ক্রিকেটারদের এই প্রতিযোগিতায় ভারত-পাকিস্তানের বহুল কাঙ্ক্ষিত ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল। সাধারণত এমন ম্যাচে দুই দেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের মাঝে মাঠের ক্রিকেটীয় লড়াই ও খুনসুটি বাড়তি রোমাঞ্চ জাগায়। কিন্তু এবার বদলে গেছে পরিস্থিতি। গত এপ্রিলে দুই দেশের সামরিক সংঘাতের সময় শেখর ধাওয়ান ও শহীদ আফ্রিদির মাঝে সামাজিক মাধ্যমে বাদানুবাদ হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে ধাওয়ান প্রথম পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের দাবি তোলেন। একে একে তাতে যোগ দেন হরভজন সিং, ইরফান পাঠান, সুরেশ রায়না এবং ইউসুফ পাঠান।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জের ক্রিকেট মাঠে টেনে আনায় ক্ষুব্ধ শহীদ আফ্রিদি। স্থানীয় সাংবাদিকদের আফ্রিদি বলেছেন, ‘আমরা এখানে (ইংল্যান্ডে) ক্রিকেট খেলতে এসেছি, ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে এবং বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আড্ডা দিতে এসেছি। আমি সবসময়ই বলে এসেছি ক্রিকেটকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা উচিৎ। একজন খেলোয়াড় ভালো একজন দূতও, যে কখনও তার দেশের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে না। কিন্তু কখনও কখনও একটা বাজে লোক অন্য সবার সবকিছু নষ্ট করে দেয়।’

এর আগে আফ্রিদির সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে তিক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ধাওয়ানের। এমনকি তিনিই প্রথম চিঠি দিয়ে লেজেন্ডস লিগে না খেলার কথা জানান। ফলে আফ্রিদির কথিত ‘একটা বাজে লোক’ ধাওয়ানই হতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। আফ্রিদির দাবি– ভারত চ্যাম্পিয়ন্স দল পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্সের বিপক্ষে খেলতে ম্যাচের আগেরদিন অনুশীলনও করেছে। পরে নির্দিষ্ট একজনের (ধাওয়ান) কারণে সরে দাঁড়িয়েছে। ওরা (ভারত) যদি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতেই না চায়, তাহলে এখানে আসার আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা এখানে এসেছে, এমনকি অনুশীলনও করেছে। কিন্তু হঠাৎ একদিনের মধ্যে সবকিছু বদলে গেল।

খেলাধুলা বন্ধুত্ব তৈরির মঞ্চ হলেও, রাজনীতি টেনে এনে সেই মোমেন্টাম নষ্ট করারও অভিযোগ ৪৫ বছর বয়সী সাবেক এই তারকার, ‘খেলাধুলার মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যদি রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সম্পর্কের উন্নতি হবে কী করে? আলোচনা ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। এ কারণেই এই ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। যোগাযোগের ঘাটতি পরিস্থিতিকে শুধু খারাপের দিকেই নিয়ে যায়।’

গড় ১৮ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে লেজেন্ডস চ্যাম্পিয়নশিপ। যেখানে ভারতীয় দলের অধিনায়ক যুবরাজ সিং এবং পাকিস্তানের নেতৃত্বে আছেন মোহাম্মদ হাফিজ। ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ বাতিল নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের খোঁচাও দিয়েছেন আফ্রিদি, ‘আমি যদি জানতাম আমার কারণে ম্যাচ থেমে গেছে, তাহলে মাঠেও যেতাম না। কিন্তু ক্রিকেট চলতে দেওয়া উচিৎ। ক্রিকেটের সামনে শহীদ আফ্রিদি কিছুই না। ক্রিকেট বড় বিষয়, রাজনীতি টেনে আনা কিংবা ভারতীয় ক্রিকেটারের বলা মন্তব্য “পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলব না”, ক্রিকেট এসবেরও ওপরে। না খেলতে চাইলে বসে থাকুন।’

এএইচএস