আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্দা উঠছে এবারের এশিয়া কাপের। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকায় সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে হবে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াই। যেখানে লড়বে মোট ৮ দল। আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়ায় সরাসরি সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। এ ছাড়া ২০২৪ এসিসি প্রিমিয়ার কাপ খেলে এশিয়া কাপের টিকিট পেয়েছে নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হংকং।

এশিয়া কাপে অংশ নেওয়া দলগুলো নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ঢাকা পোস্ট। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে পাকিস্তানের এশিয়া কাপ স্কোয়াড নিয়ে কাটা-ছেঁড়া।

গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের উন্নতির গ্রাফ নিম্নমুখী। দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ে ক্রিকেট বোর্ডেও। ফলে পিসিবির কর্তা থেকে কর্মকর্তা কেউই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারেন না। বিশেষ করে প্রধান কোচের কাজই থাকে দলকে নিয়ে লম্বা পরিকল্পনা করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। কিন্তু পাকিস্তানে কোচ বদল হয় ম্যাজিক্যাল চেয়ারের মতো! অনেকটাই চাকরি হারানোর আতঙ্ক নিয়ে পাকিস্তানে কাজ করতে যান কোচরা। এসবের প্রভাব পড়ে দলের পারফরম্যান্সেও।

বছরখানেক আগেও পাকিস্তানের অন্যতম সেরা তারকা ভাবা হতো বাবর আজমকে। অথচ আসন্ন এশিয়া কাপের দলেই জায়গা হয়নি তার। একই চিত্র মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্ষেত্রেও। এই দুই ব্যাটারের অভিজ্ঞতা পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য বড় শক্তির জায়গা ছিল। এবার তাদের বাদ দিয়ে তারুণ্য নির্ভর দল গড়েছে পাকিস্তান।

বরাবরই পাকিস্তানের শক্তির বড় জায়গা পেস বোলিং ইউনিট। এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়। যেখানে নেতৃত্ব দেবেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। নতুন বলে যেকোনো ব্যাটারের জন্যই আতঙ্কের নাম এই বাঁ-হাতি পেসার। তাকে সঙ্গ দেবেন অভিজ্ঞ হাসান আলি ও হারিস রউফরা। এ ছাড়া তরুণ প্রতিভা সালমান মির্জা, মোহাম্মদ ওয়াসিম, ফাহিম আশরাফরাও দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পারেন।

বাবর-রিজওয়ান বিহীন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ দলটির টিম ম্যানেজমেন্টের দুশ্চিন্তার বড় কারণ। ফখর জামান, সালমান আলি আগা ছাড়া বাকিরা সবাই তরুণ। সাইম আইয়ুব-শাহিবজাদা ফারহানরা এখনও নিজেদের সেভাবে প্রমাণ কর‍তে পারেননি। সবমিলিয়ে এই আসরে ভালো করতে হলে পাকিস্তানি ব্যাটারদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।

টপ অর্ডারে নিয়মিত একাদশে দেখা যাবে সাইম আইয়ুব, শাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামানকে। ওপেনিংয়ে দুই তরুণ ফারহান ও সাইম খেলবেন। দুজনেই উঠতি তারকা। সাইম ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেও খেলেছেন। ফলে তার কাছে বেশি প্রত্যাশা থাকবে। ফারহান এখনও দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি। ফলে এই আসর তার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে পারলে দলে থিতু হওয়ার পাশাপাশি নিজের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

তিনে দেখা যাবে অভিজ্ঞ ফখরকে। লম্বা সময় ধরে পাকিস্তানকে সার্ভিস দিচ্ছেন তিনি। তবে গত কয়েক বছরে তিনি আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন। সম্প্রতি ফর্মে থাকায় আবারও সুযোগ পেয়েছেন। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে ফখরকে ওপেনিংয়েও খেলতে পারবেন।

চারে দেখা যাবে সালমান আলি আগাকে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অধিনায়কত্বের দায়িত্বও থাকবে তার কাঁধে। অধিনায়ক হিসেবে এখনও খুব বেশি অভিজ্ঞ নন তিনি। ফলে তার সামনে সুযোগ থাকছে এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার। অধিনায়কের সঙ্গে মিডল অর্ডারে দেখা যাবে মোহাম্মদ হারিস, হাসান নওয়াজ এবং মোহাম্মদ নওয়াজকে। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে আছেন হোসাইন তালাত।

লোয়ার মিডল অর্ডারে বড় ভরসার নাম হতে পারেন ফাহিম আশরাফ। উইকেটে এসেই বড় শট খেলে দ্রুত রান তুলতে পারেন এই অলরাউন্ডার। খুশদিল শাহকেও একাদশে দেখা যেতে পারে। এই ব্যাটারও ফিনিশার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারেন।

এশিয়া কাপের স্কোয়াডে আছেন বেশ কয়েকজন স্পিনার। সাইম, আগা, খুশদিল, নওয়াজদের মতো অলরাউন্ডাররা পাকিস্তানের স্পিন বিভাগকে সমৃদ্ধ করেছেন। বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আছেন আবরার আহমেদ ও সুফিয়ান মুকিম। দুজনই লেগ স্পিনার। মুকিম সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন। তার উপস্থিতি স্পিন আক্রমণকে সমৃদ্ধ করেছে।

পেস বিভাগে শাহিন আফ্রিদির সঙ্গে আছেন হারিস রউফ, হাসান আলি, মোহাম্মদ ওয়াসিম ও সালমান মির্জা। এখান থেকে সেরা একাদশে আফ্রিদি, রউফ এবং হাসানের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। বাকিদের বেশিরভাগ ম্যাচেই বেঞ্চে বসে থাকতে হবে। পাশাপাশি পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন ফাহিম আশরাফ। তার মিডিয়াম পেসও বেশ কার্যকরী হতে পারে।

এইচজেএস/এএইচএস