ডেল স্টেইনকে আদর্শ মানেন এশিয়া কাপের সেরা বোলার রিপন
সম্প্রতি রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপে রানার-আপ হয়েছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। যেখানে পুরো টুর্নামেন্টে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন টাইগার পেসার রিপন মন্ডল। ভারত-পাকিস্তানসহ ৫ দলের বিপক্ষে খেলে নিয়েছেন ১১ উইকেট, যা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ। কেবল তাই নয়, দলের প্রয়োজনে ব্রেকথ্রু–কার্যকর ইয়র্কারে খাবি খাইয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের।
ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হলেও, পাকিস্তান শাহিনসের সঙ্গে মহারণী লড়াইয়ে উজ্জ্বল ছিলেন রিপন। দেশে ফিরে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের মুখোমুখি হয়ে টুর্নামেন্টে নিজের সফলতার গল্প শোনালেন রিপন। এ ছাড়া নিজের আইডল, পরিশ্রম-ইয়র্কারের দক্ষতাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ২২ বছর বয়সী ডানহাতি এই পেসার।
বিজ্ঞাপন
নিশ্চিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া ম্যাচে রানার-আপ হলেন…
রিপন : আলহামদুলিল্লাহ যেটা রিজিকে ছিল সেটাই হয়েছে। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগত। ম্যাচ হারের পর খুবই খারাপ লাগছিল।
বিজ্ঞাপন
নিজে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও দল হেরেছে, সবমিলিয়ে অনুভূতি কেমন?
রিপন : আলহামদুলিল্লাহ নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে তো খুশি। তবে দল জিতলে আরও বেশি খুশি হতাম, বিশেষ করে যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম। জয়টা অবশ্যই দরকার ছিল। দর্শকরা মাঠে এসে যেভাবে আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
বোলিংয়ের পাশাপাশি ফাইনালে ব্যাটিংয়েও দায়িত্ব নিতে দেখা গেল…
রিপন : যখন আমি ব্যাট হাতে নামি, তখন তো আমি ব্যাটসম্যানই। দলের জন্য কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা থাকে। আমার ব্যাট থেকে যে রানই আসুক সেটা যদি দলের জন্য ভালো হয় তাহলে আমি খুশি। তবে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে উন্নতির জন্য অনেক কাজ করেছি। আমার মনে হয় আগের চেয়ে ব্যাটিংয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে আমার। যার জন্য ডেভিড হেম্পকে ক্রেডিট দিতে হবে।
সুপার ওভারে কেন দশ নম্বর ব্যাটার নামানো হয়েছিল, কী পরিকল্পনা ছিল দলের
রিপন : সাকলাইন যেভাবে ব্যাট করছিল এই ম্যাচে, সোহান ছাড়া বাকিরা কিন্তু ওরকম পিক ফর্মে ছিল না। যে কারণে টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে মনে হয়েছে যে সাকলাইন সেই সময়ের জন্য ভালো, কারণ লম্বা সময় ধরেই তো ব্যাট করছিল। সে ভালো একজন অলরাউন্ডার, শুধু বোলার না। টিম ম্যানেজমেন্টের বিশ্বাস ছিল যে সাকলাইন পারবে, আমরাও বিশ্বাস করেছিলাম যে ও পারবে, পরে ক্লিক করে নাই কি আর করার।
সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে নিজেকে চেনালেন
রিপন : হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ। প্রতিটা ম্যাচই বড় মঞ্চ মনে করে খেলেছি। প্রত্যেকটা দলই বড় টিম, সেই হিসাব করেই খেলেছি। সবার সঙ্গে পারফর্ম করতে পেরেছি, ভালো লাগছে। বিশেষভাবে সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল যেভাবে পারফর্ম করেছি আলহামদুলিল্লাহ।
৫ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে আসরের সেরা বোলার হয়েছেন। টুর্নামেন্টের আগে কি এমন পরিকল্পনা ছিল?
রিপন : যখন এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণা করেছিল, তখন থেকে আমি নিজের মধ্যে ভেবেছিলাম যে টুর্নামেন্টের সেরা বোলার হব। যদি সুযোগ পাই সেটা কাজে লাগিয়ে সেরা উইকেটটেকার হব এমন চিন্তাই ছিল আসলে।
টুর্নামেন্টে যেভাবে ইয়র্কারের পর ইয়র্কার দিয়েছেন, বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে…
রিপন : প্রথম কাজ হচ্ছে মাথা ঠান্ডা রাখা। এরপর ইয়র্কার করার পরিকল্পনা ছিল আমার। তো আমি এই পরিকল্পনাতেই ছিলাম যে আমি শুধু ইয়র্কার করব। দ্বিতীয় কোনো অপশন আমি ভাবিনি, এরপর আমি সফল হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। শুধু ইয়র্কার মারব এটা চিন্তা করেছিলাম সুপার ওভারসহ পুরো ম্যাচে।
আপনি যখন ইচ্ছা তখন ইয়র্কার দিতে পারেন, এটা কি ন্যাচারাল নাকি অনুশীলনের ফল?
রিপন : এটা অবশ্যই অনুশীলন করার মাধ্যমে হয়েছে। যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ছিলাম, তখন আমাদের বোলিং কোচ ছিল তালহা জুবায়ের স্যার। তার মাধ্যমে আসলে এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, এজন্য তিনি আমাকে সবসময় উৎসাহ দিতেন। সবসময় ব্লক হোলে বল করার কথাই বলতেন তিনি। এ ছাড়া অনেক হেল্প করেছেন কোরি কলিমোর। আমার কনফিডেন্স থাকে সবসময় যে ১০টার মধ্যে দশটা ইয়র্কার দিতে পারব। তবে এটি আসলে তখনকার অবস্থার ওপর নির্ভর করে।
আপনার বোলিংয়ের উন্নতিতে কার অবদান বেশি?
রিপন : অবদানের কথা যদি বলেন, এখানে আমার নিজের অনেক প্রচেষ্টা ছিল। আমি আসলে বিসিবিকে ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা আমাকে একটা প্রসেসের মধ্যে রেখেছিল। প্রতিটা ক্যাম্প করার সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে যারা কোচ ছিলেন– ডলার স্যার বা তারেক আজিজ স্যার ও কোচ কলিমোর তারা সবাই আমাকে সাহায্য করেছে। আমি যেভাবে চেয়েছি তারা আমাকে সেভাবেই সাহায্য করেছে।
পেস বোলার হিসেবে আপনার আইডল কে?
রিপন : আমার আইডল ডেল স্টেইন। তবে তার সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। যদি তার সঙ্গে কখনও দেখা হয়, অনেক কিছুই শেখার রয়েছে। এরপর যখন দেখা হবে তখন আসলে বলতে পারব যে তার থেকে কী জানতে ও শিখতে চাই।
আপনাদের দলের মধ্যে রোনালদোর উদযাপন খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে…
রিপন : একেকজনের একেক রকম সেলিব্রেশন থাকতে পারে। যার যার ন্যাচারাল, এই সেলিব্রেশনটাতে যারা কমফোর্টেবল ছিল তারা করেছে। আমরা সতীর্থ হিসেবে উইকেট পাওয়ার পরে যেকোনো সেলিব্রেশন হোক না কেন এনজয় করি।
আবদুল গাফফার সাকলাইনকে কেমন দেখলেন?
রিপন : অবশ্যই খুবই ভালো। দুর্দান্ত অলরাউন্ডার একজন সে, যদি নিজেকে মেইনটেইন করতে পারে যে প্রসেসে আছে। বিসিবির অধীনে থেকে যদি সে নিজেকে আরও প্রমাণ করতে পারে, তাহলে ভালো একজন অলরাউন্ডার হবে।
আপনি নিজে নির্বাচকদের একটা বার্তা দিয়ে রাখলেন নিশ্চয়ই…
রিপন : হ্যাঁ অবশ্যই, একজন খেলোয়াড় হিসেবে এটাই তো আমার কাজ। সবসময় রেডি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, যদি স্যাররা মনে করে যে আমি এটার জন্য উপযুক্ত তাহলে নেবে। আমি রেডি থাকি, যদি সুযোগ পায় আমার সেরাটা দেবো।
গেল বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ডাক পেয়েও সুযোগ হয়নি খেলার…
রিপন : ওরকম না আসলে। আসলে আপনি এটা কিভাবে দেখতেছেন তাই বিষয়। আমি আসলে পজিটিভলি দেখতেছি। আমি যেহেতু সুযোগ পাইনি, তার মানে আমার একটা দুর্বলতা রয়েছে। আমার সুযোগ পেতে হলে এখন যারা খেলতেছে এদের চেয়ে ভালো করতে হবে। যদি বেশি ভালো করতে না পারি তাহলে আমি সুযোগ পাব না। তারা সবাই খুবই ভালো করতেছে যারা এখন পেসার রয়েছেন। যে কারণে তাদের চেয়ে ভালো করতে না পারলে দলে ডাকবে না। তাই আমি পজিটিভভাবে নিয়েছি যে, সুযোগ পেলে তাদের বিট করার চেষ্টা করব।
সামনে বিপিএলের নিলাম, দলগুলোর প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকতে পারেন আপনিও
রিপন : এটা আসলে টিম মালিকদের বিষয়। আমার কাছে ওরকম আসলে কিছু না, তারা যদি আমাকে বিবেচনা করে সুযোগ দেয়, আর যদি না করে তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। আমার হাতে যেটা আছে আমি সেটা নিয়েই চিন্তা করি। যা আমার হাতে নেই, সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। গতবার খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি, এবার যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই, অবশ্যই সেরাটা দেওয়ারই চিন্তা থাকবে।
এসএইচ/এএইচএস