ওসমান হাদির বিদায়ী যাত্রা নিয়ে সরব হৃদয়-এবাদতরা
সন্ত্রাসী হামলায় আহত হওয়ার সপ্তাহ খানেকের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। তার স্মরণে আজ (শনিবার) দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়েছে। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখো মানুষ হাজির হয়েছিলেন শহীদ হাদির জানাজায়। যা দেখে আবেগতাড়িত হয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। ওসমান হাদির এই বিদায়ী যাত্রা নিয়ে তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে জাতীয় দলের ব্যাটার তাওহীদ হৃদয় লিখেছেন, ‘যে সংসদ প্রাঙ্গণে যাওয়ার জন্য লড়াই করছিলেন হাদি ভাই, তিনি গেলেনও সেখানে। বীরের বেশে, হাজার মানুষের সাথে, কোটি মানুষের দোয়া আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। বিদায়বেলায় এতো ভালোবাসা সবার কপালে থাকে না। আল্লাহ পাক তাকে সৌভাগ্যবান করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। চিরনিদ্রায় শান্তিতে শায়িত থাকুক আমাদের হাদি ভাই।’
বিজ্ঞাপন
কারও জানাজায় এত মানুষ দেখেননি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট, ‘আজ ওসমান হাদির জানাজায় মানুষের ঢল দেখে আমি সত্যিই স্তব্ধ। আমার জীবনে এর আগে কখনো কোনো জানাজায় এত মানুষের উপস্থিতি দেখিনি। এই ভিড়ই সাক্ষ্য দেয়—তোমাকে মানুষ কতটা ভালোবেসেছে। আল্লাহ তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক এবং শহিদি মর্যাদা দান করুক।’
বিদায়বেলায় ওসমান হাদি যে সম্মান পেয়েছেন, পরকালেও এমন সম্মান অপেক্ষা করছে বলে প্রত্যাশা জাতীয় দলের পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরীর, ‘তুমি কোনো প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান ছিলে না। ছিলে একজন ভালো মানুষ, শুধু একজন ভালো মানুষ হিসেবে সবাই তোমাকে জানে। এই জন্য তোমার জানাজায় আজকে এত মানুষ। আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দুনিয়াতে এত সম্মান দিয়েছেন, না জানি ওই পারে কত সম্মান তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
বিজ্ঞাপন
আরেক পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি ওসমান হাদিকে তুলনা করেছেন শের-ই বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে, ‘বাংলার শিরোমণি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, ২৬ অক্টোবর ১৮৭৩ সালে বরিশাল বিভাগের বর্তমান ঝালকাঠি জেলায় জন্ম নেওয়া এই মানুষটি শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না— তিনি ছিলেন বাংলার মানুষের কণ্ঠস্বর। নেতৃত্ব, সাহস ও ত্যাগের মাধ্যমে তিনি বাংলার মানুষের অধিকার ও মুক্তির পথকে আলোকিত করেছিলেন। তার অবদান কোনো এক সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্থায়ীভাবে খোদাই হয়ে আছে। ১৯৪০ সালে লাহোর অধিবেশনে তার জ্বালাময়ী, নির্ভীক ও ঐতিহাসিক বক্তৃতার পর মানুষ তাকে ভালোবেসে উপাধি দেয়— বাংলার বাঘ (শের-ই-বাংলা)। এই উপাধি কোনো ক্ষমতার দান নয়—এটি ছিল জনগণের রায়।’
‘ঠিক তেমনই, বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলার নলছিটির মাটিতে জন্ম নেওয়া, বিদ্রোহী ও বিপ্লবী শরীফ ওসমান গনি বিন হাদির মতো এক তরুণ সময়ের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সত্য ও ন্যায়ের পথকে বেছে নিয়েছিলেন। বরিশালের মাটির যে প্রতিবাদী রক্ত শেরে বাংলার মধ্যে প্রবাহিত ছিল, সেই একই আগুন হাদীর ভেতরেও দেখা যায়। তিনি ছিলেন আপসহীন, প্রশ্নকারী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানে অটল। বাংলার মুক্তি ও ইনসাফের প্রশ্নে তাঁর অবস্থান ছিল স্পষ্ট ও নির্ভীক। এই দুই সংগ্রামী আত্মার স্মরণ আমাদের হৃদয়ে চিরদিনের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
ডানহাতি পেসার রুবেল হোসেন লিখেছেন, ‘আপনি জিতে গেছেন হাদী…বছর বছর রাজনীতি করা কোনো রাজনীতিবিদ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনি মরে গেলে, এর ধারে-কাছে মানুষ আপনার জানাজায় আসবে বা আপনাকে মনে রাখবে? রাজনীতি হোক মানুষের অধিকারের জন্য, দেশের জন্য। আবার বলি আপনি জিতে গেছেন হাদী…দেশকে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক।’
এএইচএস