জাতীয় দলে আর ফেরার স্বপ্ন দেখেন না বিপিএলে না থাকা রাহি
‘আপনাকে হয় সরতে হবে, নইলে সরিয়ে দেবে’
প্রায় চার বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত খেলেছেন আবু জায়েদ রাহি। বিশেষভাবে বললে ওই সময়ে টেস্ট ফরম্যাটে তিনি ছিলেন প্রায় নিয়মিত মুখ। ১৩টি টেস্ট, তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি ওয়ানডে খেলা রাহিকে ২০২১ সালের পর আর জাতীয় দলে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের পেস বিভাগ এখন অনেক সমৃদ্ধ, তাই অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে রাহির আর জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন অসম্ভবই বলা চলে! এ ছাড়া তার ৩২ বছর বয়সটাও যে বিবেচ্য।
এদিকে, গেল ২৬ ডিসেম্বর থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পর্দা উঠেছে বিপিএলের দ্বাদশ আসরের। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেও এবার দল পাননি আবু জায়েদ রাহি। তা নিয়ে কিছুটা খারাপ লাগা আছে তার স্বাভাবিকভাবেই। তবে জাতীয় দলে আর ফেরার আশা দেখেন না রাহি। একইসঙ্গে বর্তমানে যেসব পেসার খেলছেন, তাদের নিয়ে প্রত্যাশা ও বেশি সুযোগ আশা করেছেন তিনি। জাতীয় দল, ঘরোয়া ও নিজের ক্যারিয়ারসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সিলেটের এই ক্রিকেটার।
বিজ্ঞাপন
বিপিএলের শুরুটা হয়েছে আপনার শহর সিলেট দিয়ে, আর আপনি নেই...
রাহি : এটা নিয়ে আসলে আমার কিছু বলার নেই। এবার অকশন (নিলাম) হয়েছে। যাদের ভালো লাগবে তাদেরকে নেবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এটা নিয়ে সব দলের পরিকল্পনা থাকে, আর অকশনে কিন্তু পেস বোলার অনেক ছিল। কারও দল পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয় তো আসলে আমার হাতে থাকে না।
বিজ্ঞাপন
বিগত কয়েক বিপিএলেও সুযোগ কম পেয়েছিলেন, এবার কোনো দলেই নেই, খারাপ লাগে কি না?
রাহি : এভাবে মন খারাপ হয় না আসলে। আমার হয়তো কোথাও দুর্বলতা আছে, এ কারণে দল পাইনি। এটা মেনে নিতেই হবে, তবে কিছুটা খারাপ তো লাগেই, কিছু করার নাই আসলে।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যেমন ছিলেন, সেই রাহিকে কি মিস করেন?
রাহি : সত্যি কথা বলতে গেলে আমি লাল বলে বোলিং করতে পছন্দ করি। লাল বলে তো এখনও খেলে যাচ্ছি, সর্বশেষ এনসিএলেও খারাপ করিনি, ভালোই করেছি। তবে এই বয়সে লাল বলে পরপর পাঁচটা ম্যাচ খেলা আবার টপ লিডিং উইকেটে থাকা কঠিন। তবুও উপভোগ করছি ক্রিকেটটা।
আপনার বোলিংয়ে কি এখন ধার কমেছে?
রাহি : প্রথমে যখন বল করতাম তখন গতি এবং সুইং ছিল। এখন শুধু গতিটা একটু কমেছে, কিন্তু সুইং কিন্তু ঠিকই আগের মত আছে। আপনি যদি দেখেন লাল বলে সবশেষ যে কয়টা উইকেট পেয়েছি, তার বেশিরভাগ উইকেটই কিন্তু সুইং ডেলিভারিতে পেয়েছি।
এবারের এনসিএলে ২৫ উইকেট পেয়েছেন, নিজের পারফরম্যান্সে কেমন সন্তুষ্ট?
রাহি : আলহামদুলিল্লাহ আমার পারফরম্যান্সে আমি খুশি। তবে আমার মনে হয় ম্যাচ আরও বাড়ানো উচিত। আমাদের একজন ক্রিকেটার বছরে মাত্র সাতটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছে। এর ভেতর জাতীয় দল, এইচপি, এ দলে খেলা একজন ক্রিকেটার মাত্র ম্যাচ খেলছে ৩-৪টা। সবমিলিয়ে আমার মনে হয় ম্যাচ অনেক কমই হচ্ছে, এটা একটু বাড়ানো উচিত।
আমি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি, তবে আরও ম্যাচ হলে ভালো লাগতো। কারণ বিশ্রাম পাচ্ছিলাম না, বেশি ম্যাচ হলে একটা ক্রিকেটার একটু বিশ্রাম নিয়ে ম্যাচ খেলতে পারে এবং নিজের পারফরম্যান্সের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে। আপনি যদি (মুকিদুল) মুগ্ধর দিকে তাকান, সে কিন্তু চার ম্যাচে ২৭ উইকেট পেয়েছে। যদি আরও কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারত, আরও ভালো করতে পারতো একটা পেস বোলার হিসেবে।
আপনি হঠাৎ মাঝের ৪ বছর ধরে লাইমলাইটের বাইরে, কারণটা খুঁজে পেয়েছেন?
রাহি : আমি চার বছর জাতীয় দলের বাইরে, পারফরম্যান্স ভালো ছিল না দেখেই কিন্তু দলে ডাকেনি। এটাই তো আসলে (বাস্তবতা) আর আলোচনার কথা যেটা বললেন, একই কারণে আলোচনায় নেই হয়তো।
কী মনে হয়, জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল আপনাকে যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছে?
রাহি : এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা আমি আমার কোনো স্টেটমেন্ট ফেসবুকে দিই না, কিছু বিষয় নিজের ভেতরে রাখি।
আপনি দুই দিকেই বল সুইং করাতে পারেন ইচ্ছামতো, এখনও সেটা অব্যাহত আছে?
রাহি : হ্যাঁ অবশ্যই, আপনি এনসিএলের উইকেটগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। সেখানে দু’দিকে বল ঘুরিয়ে উইকেট পেয়েছি। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে আগের মতো বল ভালো হচ্ছে। আমি লম্বা সময় ধরে দু’দিকেই বল (সুইং) করাতে পারি বিষয়টা নিজেরও ভালো লাগে। আমি এই স্কিলটা নিয়ে কাজ করেছি, এখনো করি, সবাইকেই শিখতে হয় এটা। প্রধানত, টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট নিতে গেলে আমরা সবাই ফোকাস করি- জোরে বল করতে হবে আর উইকেট নিতে হবে। কিস্তু বিশ্ব ক্রিকেটে লাল বলে জোরে বল করে উইকেট নিতে পারবেন না, সুইং লাগবেই।
বিরাট কোহলিকে একবার আউট করেছিলেন, মনে আছে কি না...
রাহি : অবশ্যই (মনে আছে), অনেক বড় বড় উইকেট আছে আমার লাল বলে। অনেক সময় ভালো লাগে যখন খেলার বাইরে থাকি একভাবে চিন্তা করি। দেখি বড় বড় উইকেট পেয়েছি, টেস্টে আমার অনেক বড় ক্রিকেটারকে আউট করার অভিজ্ঞতা আছে।
জাতীয় দলে আবারও খেলা বা প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখেন?
রাহি : অবশ্যই না। জাতীয় দলে যারা খেলছে, তারা অনেক ভালো খেলছে। ওদের যেন কন্টিনিউ রাখে, এটাই দোয়া এবং ইচ্ছা।
জাতীয় দলের স্বপ্ন দেখেন না, সেক্ষেত্রে আর কতদিন খেলতে চান ক্রিকেট?
রাহি : একটা ভালো পজিশনে গিয়ে আমি ক্রিকেট ছাড়তে চাই। বেশি হইলে আর এক-দুই বছর খেলতে চাই। আমি যখন ছাড়ব, তখন সব ফরম্যাটে একসঙ্গে ছেড়ে দেব।
কোনো সময়সীমা বা এমন কোনো ইচ্ছা রয়েছে কি না যেটা পূরণ করে খেলা ছাড়তে চান...
রাহি : একটা বিষয় মাথায় আছে- প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই মুহূর্তে আমার উইকেট ৩৪২টা। সেই হিসেবে ৩৫০ প্লাস উইকেট সংগ্রহ করে (খেলা) ছাড়ার ইচ্ছা। তবে ইচ্ছা ছিল শরীফ ভাইকে ধরার, উনার ৩৯৬ উইকেট আছে। ওটা ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, যদি পরের বছর ভালো উইকেট পাই তাহলে ওটা চেষ্টা করব। না হলে আমি ছেড়ে দেব।
বর্তমানে আরও অনেক পেস বোলার আছে, তাদেরকে সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আসলে আপনাকে সরতে হবে, নইলে আপনাকে সরিয়ে দেবে। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াতে ঘরোয়া ক্রিকেট কিন্তু চালিয়ে যাচ্ছে অনেক ক্রিকেটার। ওরা কিন্তু বছরে একটা হলেও জুনিয়রদের সঙ্গে খেলে, তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন সুযোগ হয় না।
খেলা ছাড়ার পর কী পরিকল্পনা বা কোনদিকে যেতে চান?
রাহি : এখন পর্যন্ত কোনো প্ল্যান করিনি। আর একটা বছর আছে, আমার ইচ্ছা এনসিএলে একটা ভালো জায়গায় থেকে অবসরে যাওয়ার। এমন একটা জায়গায় থাকতে চাই সেখানে পৌঁছাতে যেন একজনের পাঁচ বছর লাগে। পরিবার থেকেও অবশ্যই এ বিষয়ে কিছু বলেনি এখনও, (খেলা ছাড়ার বিষয়) ঠিক করিনি যেহেতু। কোচিংয়ে আমার লেভেল-টু করা আছে। যে কোনো সময় লেভেল থ্রি করতে পারি, যেহেতু এটা করা আছে সেজন্য টেনশন নেই। যে কোনো সময় চাইলে কোচিংয়ে শিফট হতে পারব।
এসএইচ/এএইচএস