লঙ্কান সিংহের গর্জন একসময় শুনেছে বিশ্ব। সনাথ জয়সুরিয়া, মারভান আতাপাত্তু, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, মুত্তিয়া মুরালিধরন, চামিন্দা ভাসরা শ্রীলঙ্কাকে তুলেছিলেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকরত্নে দিলশানরাও ধরে রেখেছিলেন দলটির সাফল্যধারা। কিন্তু এ প্রজন্মের বিদায় হতেই যেন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে লঙ্কান ক্রিকেট। ঘরের মাঠে ও বিদেশের মাটিতে একের পর এক সিরিজ হারতে থাকা দলটি দীর্ঘদিন হারিয়ে খুঁজেছে নিজেদের।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লঙ্কান ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ জয়াবর্ধনে ২০১৫ বিশ্বকাপের আগেই চলে যান অবসরে। আরেক ব্যাটিং গ্রেট সাঙ্গাকারা ও অভিজ্ঞ দিলশান মিলে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। তাদের বিদায়ের পর ২০১৯ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বই পার করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ২০১৪ তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করা দলটি ধুঁকছে ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটেও। সেরা আটের বাইরে থাকার কারণে টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়া সত্ত্বেও সরাসরি সুপার টুয়েলভে সুযোগ পাচ্ছে না তারা।

প্রথম রাউন্ডে কোন অঘটন ঘটলে হয়ত নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জ্বাজনক দিনটি দেখতে হবে শ্রীলঙ্কানদের। তবে নিজেদের বিশ্বকাপ রেকর্ড কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে তাদের। ২০০৯ ও ২০১২ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে তারা। ২০১৬ তে অনুষ্ঠিত হওয়া সর্বশেষ বিশ্বকাপে তেমন ভাল না করলেও এবারের বিশ্বকাপ দলে দারুণ কিছু আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের উপস্থিতি বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে লঙ্কান শিবিরে।

যেভাবে ক্রিকেটে এলো শ্রীলঙ্কা
ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় ১৮৩২ সালে। ব্রিটিশ শাসনামলে সিলন নামে পরিচিত দেশটি তাদের প্রথম জাতীয় ক্রিকেট দল গঠন করে ১৮৮০ সালে। ১৯২০ সালের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটও শুরু হয়ে যায় দেশটিতে। ১৯৬৫ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা লাভ করে তারা। সিলন থেকে বদলে ১৯৭২ সালে ‘শ্রীলঙ্কা’ রাখা হয় দেশটির নাম।   

১৯৮১ সালে স্বপ্নের টেস্ট স্ট্যাটাসও পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর থেকেই দারুণ সব প্রতিভাবান ক্রিকেটার তৈরি করে চলেছে তারা। ১৯৮২ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি কলম্বোর পি সারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে শ্রীলঙ্কা। 

তবে ক্রিকেটের মত এত পরিচ্ছন্ন নয় দেশটির ইতিহাস। যিশু খ্রিস্টের জন্মের বহু আগে থেকেই সংঘাতে লিপ্ত লঙ্কান দ্বীপের আদি নিবাসীরা। খুনে মানসিকতা যেন তাদের রক্তে। ১ম ও ২য় উভয় বিশ্বযুদ্ধেই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তৎকালীন সিলনবাসীদের। তবে সময়ের সাথে বদলেছে লঙ্কানরাও। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবানন ও অশান্ত দ্বীপ ‘হাইতিতে’ শান্তি রক্ষায় নিযুক্ত আছে তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

১৯৮৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা দেশটি এত বিপর্যয়ের মাঝেও ঠিক রেখেছে নিজেদের অর্থনীতি। সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় তারা দেখিয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে পুঁজি করে ভালই এগিয়ে চলছে তারা। এছাড়াও মাটির নিচেও খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার রয়েছে লঙ্কানদের। তাছাড়া নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাগরবেষ্টিত দেশ হওয়ায় বেশ সমৃদ্ধ দ্বীপরাষ্ট্রটির পর্যটন শিল্প। ছুটি কাটানোর জন্য দারুণ এক জায়গা দেশটি।

বিশ্বকাপে নজর থাকবে যাদের উপর
প্রায় অনভিজ্ঞ এক দল নিয়েই এবারের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে শ্রীলঙ্কা। দলটির অধিনায়ক দাসুন শানাকা তেমন পরিচিত মুখ নন ক্রিকেট বিশ্বে। ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টে অভিজ্ঞ বলতে আছেন শুধু দিনেশ চান্দিমাল ও কুশাল পেরেরা। বাকি ক্রিকেটারদের বিবেচনায় ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকেও ফেলা যায় অভিজ্ঞদের কাতারে। তবে উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে কুশালের উপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখবে লঙ্কান শিবির।

ব্যাটিং বোলিংয়ের বিচারে খুব একটা শক্তিশালী না হলেও এরইমধ্যে নিঁখুত ফিল্ডিংয়ে বিশ্বের নজর কেড়েছে তারকাশূন্য শ্রীলঙ্কা দল। নুয়ান প্রদীপ ও লাকসান সান্দাকানদের অভিজ্ঞতা সঙ্গী হবে তরুণ বোলিং আক্রমণের।  

এবারের বিশ্বকাপ দল
দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, কুশাল পেরেরা, দিনেশ চান্দিমাল, আভিস্কা ফার্নান্দো, ভানুকা রাজাপাকসে, চারিথ আসালঙ্কা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, কামিন্দু মেন্ডিস, চামিকা করুণারত্নে, নুয়ান প্রদীপ, দুষ্মন্থ চামিরা, প্রবীণ  জয়াবিক্রমা, মহীশ থিকশানা, পাথুম নিসাংকা, মিনোদ ভানুকা, আসেন বান্দারা, লাকসান সান্দাকান এবং রমেশ মেন্ডিস।

১ম রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার সূচি

ম্যাচ তারিখ সময়
শ্রীলঙ্কা-নামিবিয়া ১৮ অক্টোবর রাত ৮টা
শ্রীলঙ্কা-আয়ারল্যান্ড ২০ অক্টোবর রাত ৮টা
শ্রীলঙ্কা-নেদারল্যান্ড ২২ অক্টোবর রাত ৮টা

এআইএ/এনইউ