আফ্রিকার এক অভাগা জাতি তারা। প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বেশ বিপর্যস্ত তাদের অর্থনীতি। বলছি আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত রাষ্ট্র নামিবিয়ার কথা। দেশটির ভূগর্ভে রয়েছে হীরা, ইউরেনিয়াম, সীসা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। আরও আছে তামা ও দস্তা। এছাড়া আফ্রিকার বিশাল জীববৈচিত্রের ছোঁয়াও রয়েছে দেশটিতে। আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে অবস্থিত রাষ্ট্রটির মৎসভাণ্ডারও বেশ সমৃদ্ধ।

নিজেদের ইতিহাসের বড় একটি অংশ ইউরোপিয়ানদের অধীনেই কাটিয়েছে নামিবিয়ানরা। ১৫ শতকে পর্তুগিজ বণিকরা হানা দেয় দেশটিতে। পরবর্তীতে ১৮৮৪ সালে জার্মানদের দখলে চলে যায় নামিবিয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পতন হয় জার্মান উপনিবেশগুলোর। এরপর দেশটির নামকরণ করা হয় ‘দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকা’। তবে মার্কসবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৬৬ সালে প্রথমবারের মত স্বাধীনতার স্বাদ পায় দেশটির অধিবাসীরা।

স্বাধীন হয়েও অবশ্য নিজেদের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে তেমন একটা সমৃদ্ধ হতে পারেননি নামিবিয়ানরা। বারবারই দুর্নীতির নানা খবরের শিরোনাম হয়েছেন দেশটির ক্ষমতাশীল ব্যক্তিবর্গ। শতকরা ৪৪ ভাগ অধিবাসী বাস করেন দারিদ্রসীমার নিচে। অর্থনীতির এমন করুণ দশার পরও ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে লড়ার জন্য বারবারই নিজেদের যোগ্য বলে প্রমাণ করেছে আফ্রিকান রাষ্ট্রটি।

‘বহু মুখের দেশ’ নামে পরিচিত নামিবিয়ায় প্রথম ক্রিকেট খেলা হয়েছিল ১৯০৯ সালে। তখন দেশটিতে চলছিল জার্মানির শাসন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অবসান হয় জার্মান শাসনের। দক্ষিণ আফ্রিকার শাসনামলে আরো উন্নত হয় দেশটির ক্রিকেট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই কিছু ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় সেখানে। ১৯৩০ সালে গঠিত হয় ‘সাউথ ওয়েস্ট আফ্রিকা ক্রিকেট ইউনিয়ন’। ১৯৬১ সাল থেকে ‘সাউথ আফ্রিকান কান্ট্রি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত বার্ষিক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ শুরু করে তৎকালীন দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকা।

১৯৬৬ সালে বিদ্রোহী সংগঠন ‘সোয়াপ্রোর’ সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি অফ নামিবিয়া’ নেতৃত্ব দেয় তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী গোষ্ঠীগুলোর খেলাধূলা বয়কটকে স্বাগত জানায় বিদ্রোহীরা। ১৯৮৯ সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সাউথ ওয়েস্ট আফ্রিকা ক্রিকেট ইউনিয়ন। ঐ বছরের নভেম্বরেই নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে বতসোয়ানা যায় নামিবিয়া ক্রিকেট দল। 

১৯৯২ সালে আইসিসির ১৯তম সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে নামিবিয়া। দেশটির ক্রিকেটের প্রথম অর্জন ২০০১ আইসিসি ট্রফির ফাইনাল খেলা। সেবার নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে গেলেও প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের দুয়ার খুলে যায় তাদের জন্য। বিশ্বপকাপের আগে বাংলাদেশ দল সফর করে দেশটিতে। সেবার হেসে খেলে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা।  

২০০৩ এর বিশ্বকাপটা ভুলে যেতে চাইবেন নামিবিয়ানরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ লড়াই করলেও বাকি সবগুলো খেলাতেই অসহায় আত্মসমর্পণ করে তারা। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেকর্ড ব্যবধানে পরাজয়ও। 

বিশ্বকাপের পর শক্তিশালী জিম্বাবুয়েকে তাদের ঘরের মাঠে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় উঠতি শক্তি নামিবিয়া। এরপরই যেন ছন্দপতন ঘটে তাদের। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি বিশ্বকাপেরও বাছাই পর্ব পার করতে পারেনি তারা। ২০১৮ সালে টি টোয়েন্টি স্ট্যাটাস লাভ করে দলটি।

তবে হারানো সুদিন ফিরতে চলেছে আবার। বিগত বছরগুলোতে যুব ক্রিকেটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দেশটিতে। নামিবিয়ার বয়সভিত্তিক দলগুলো বেশ ভাল করছে দ্বিপাক্ষিক সফরগুলোতে। ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বমঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাবে আফ্রিকান দেশটি।

নজর রাখবেন যাদের উপর

নামিবিয়ার এবারের বিশ্বকাপ দলে বড় চমক সাবেক প্রোটিয়া ক্রিকেটার ডেভিড উইস। ৩৬ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দীর্ঘদিন খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে।

নামিবিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াড
 
জেরার্ড ইরাসমাস (অধিনায়ক), স্টিফেন বার্ড, কার্ল বার্কেনস্টক। মিচাউ ডু প্রিজ, জান ফ্রাইলিংক, জেন গ্রিন, নিকোল লফি-ইটন, বার্নার্ড শোল্টজ, বেন শিকোঙ্গো, জেজে স্মিট, রুবেন ট্রাম্পেলম্যান, মাইকেল ভ্যান লিঙ্গেন, ডেভিড উইস, ক্রেইগ উইলিয়ামস, পিকি ইয়া ফ্রান্স

১ম রাউন্ডে নামিবিয়ার সূচি

ম্যাচ                                               বাংলাদেশ সময় তারিখ
নামিবিয়া - শ্রীলঙ্কা                              রাত ৮টা  ১৮ অক্টোবর ২০২১
নামিবিয়া -নেদারল্যান্ড                   বিকেল ৪ টা ২০ অক্টোবর ২০২১
নামিবিয়া- আয়ারল্যান্ড                       বিকেল ৪ টা ২২ অক্টোবর ২০২১