মুখের হাসিটা কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে তার। নামের পাশে যখন শেষ দুই ম্যাচে ৪, ১৩ তখন কপাল কুঁচকে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু মুশফিকুর রহিমকে যারা চেনেন, তারা ভাল করেই জানেন, ভাঙবেন তবু মচকাবে না! লড়ে যাবেন, দৌড়ে যাবেন ফিনিশিং টাচে! তাকে আটকায় কে?

ওমান-পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে দিন তিনেক আগের ম্যাচ তো কেবলই ইতিহাস। মুশফিক নিশ্চয়ই এবার ফিরবেন। ২৪ অক্টোবর, রোববার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। তার আগে শনিবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনে তাইতো অন্য সবার চেয়ে একটু বেশিই ঘাম ঝরাতে দেখা গেলো তাকে। অবশ্য এটাও নতুন কী। 

বয়স ৩৪ ছাড়িয়ে গেলেও মুশি যেন এখনো সেই কিশোর। ব্যাটে রান নেই, নেই দুশ্চিন্তা থেকে দেশ ছাড়ার আগে কতো কী যে করলেন। এ দলের হয়ে খেললেন। অন্যরা যখন ছুটির মেজাজে তখন নেমে পড়লেন অনুশীলনে। সেই মুশফিক শারজাহ ৩৪ ডিগ্রী ছাড়ানো তাপমাত্রায় দমবেন কেন? 

মাঠে ঢুকেই ২৩ অক্টোবর, শনিবার চলে গেলেন সোজা শারজাহ স্টেডিয়ামের নেটে। তারপর চলল একটানা ব্যাটিং অনুশীলন। এখন তো আর গ্লাভস হাতে নেওয়ার সুযোগ নেই, ব্যাটিং করেই যে স্বস্তি পেতে হবে!

মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে অতীত বড্ড প্রেরণা দিচ্ছে মুশফিককে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্তরা নিশ্চয়ই ভুলে যান নি দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচটির কথা। যেখানে লঙ্কান বোলিং আক্রমণ ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে মিস্টার ডিপেন্ডবল খেলেছিলেন ১৪৪ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস।

মুশফিক শেষবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলেছিলেন এশিয়া কাপে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তামিম ইকবাল ভাঙ্গা হাত নিয়ে খেলেছিলেন। সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। যদিও তামিমের সেই এক হাতে ব্যাটিং বীরত্বে কিছুটা আড়ালেই চলে গিয়েছিল মুশির কালজয়ী সেই ইনিংস। 

লঙ্কানদের বিপক্ষে সেই ওয়ানডে ম্যাচটা ১৩৭ রানে জিতে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য সিংহলিজদের বিপক্ষে রান তোলার কৌশলটা অন্য বাংলাদেশির চেয়ে তার একটু বেশিই জানা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগাররা শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা খেলেছে ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ, নিদহাস ট্রফিতে। যেখানে অবশ্য তার ব্যাটে এসেছে ২৫ বলে ২৮। কিন্তু তার আগের ম্যাচটাতেই বইয়ে দিয়েছেন চার-ছক্কার ঝড়!

১০ মার্চ, ২০১৮ কলম্বোতে ২১৪ রানের পাহাড় টপকে জেতা ম্যাচটাতে মুশি যা করতে চেয়েছেন যেন তাই হয়েছে! ৩৫ বলে ৭২। ইনিংসে ছক্কা চারটি, ৪ হাঁকিয়েছেন ৫টি! সেই ম্যাচে তামিম ইকবালও ছিলেন অপ্রিতরোধ্য। শুরুতে তার ২৯ বলে ৪৭ রানের ইনিংসটাই তো জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে। সঙ্গে লিটন দাসের ১৯ বলে ৪৩ ধামাকা। 

ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে মুশফিকের এমন অসংখ্য কীর্তি ধরা দেবে। বাস্তবতা হলো সেইসব ম্যাচ জয়ের নায়কের এখন বড্ড দুঃসময় যাচ্ছে। কিপিং গ্লাভস তো হাতছাড়া হয়েছে আগেই। ব্যাটেও রান নেই। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন শ্রীলঙ্কা আর ম্যাচ যখন আমিরাতে তখন তো মুশিকে নিয়ে বাজি ধরাই যায়!

নিজের সেই প্রিয় স্মৃতিময় জায়গায় সেই শতরানটা কি মনে পড়ছে মুশফিকের? মরুর বুকে আরও একবার উঠবে নাকি ঝড়? সেই ঝড়ের ধুলো-বালিতে যদি সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়!

এটি/এনইউ