সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭১/৪ (নাঈম ৬২, লিটন ১৬, সাকিব ১০, মুশফিক ৫৭*, আফিফ ৭, মাহমুদউল্লাহ ১০*; করুনারত্নে ১/১২, বিনুরা ১/২৭, কুমারা ১/৩১)।
শ্রীলঙ্কা: ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫ (পেরেরা ১, নিশাঙ্কা ২৪, আসালাঙ্কা ৮০*, আভিশকা ০, হাসারাঙ্গা ৬, রাজাপাকসা ৫৩, শানাকা ১*; নাসুম ২/২৯, সাইফ ১/৩৮, সাকিব ২/১৭)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: চারিথ আসালাঙ্কা

হাতে যেন মাখন মেখে নেমেছিলেন লিটন দাস! না হলে এভাবে কেউ ক্যাচ ফেলে? পুরো শারজাহ স্টেডিয়াম স্তব্ধ। একবার নয়, দু দুবার একই ভুল। ক্যাচ ফসকালো তো ম্যাচটাও ফস্কে গেলো। হার দিয়েই বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ অভিযান শুরু হলো বাংলাদেশের।

১৭১ রানের বড় সংগ্রহ গড়েও ম্যাচটা জমিয়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংগ্রহটা ১৮.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়েই টপকে গেলো শ্রীলঙ্কা। ৫ উইকেটের জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হলো দাসুন সানাকাদের! অথচ রোববার দিনের আলোতে দু-একটা ভুল না হলে শারজার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুখে হাসি ফুটিয়েই ফিরতে পারতেন রিয়াদরা। ক্যাচ মিস, বাজে ক্যাপ্টেন্সি আর বেহিসেবি বোলিংয়ে হারল বাংলাদেশ।

শারজাহর ফ্ল্যাট উইকেটের কথা হয়তো অনেকেই বলবেন। কিন্তু লিটন যেভাবে দুটো ক্যাচ ফেললেন, তারপর আর ম্যাচ জেতা যায় না। প্রথমে আফিফ হোসেনের ভানুকা রাজাপাকসের তুলে দেওয়া ক্যাচ ছাড়লেন লিটন। তার দুই হাতের ফাঁক গলে বল আবার বাউন্ডিারিতেও চলে গেলো। ১৪ রানে জীবন পান রাজাপাকসে। পরে যিনি খেলেন দুর্দান্ত ফিফটির ইনিংস। 

এরপর ফের সেই লিটনের ভুল। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা চারিথ আসালাঙ্কাকে ফেরানোর সুযোগ যখন সামনে তখন আবারও ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস। মুস্তাফিজুর রহমানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল বাতাসে তুলে দেন আসালাঙ্কা। দৌড়ে আসা লিটনের হাতেই গিয়ে পড়ল বল। কিন্তু হাতে মাখন থাকলে কি আর কিছু ধরা যায়? সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন আসালাঙ্কা। তখন তার রান ৬৩।

এরপর সেই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটেই জিতল শ্রীলঙ্কা। রাজাপাকসে ৩১ বলে ৫০ রানে ফিরলেও আসালাঙ্কা দলকে জিতিয়ে অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৮০ রানে!

ক্যাচ মিসের সঙ্গে বাজে অধিনায়কত্বও ছিল রিয়াদের। যখন সাকিব বল হাতে সাফল্য পাচ্ছিলেন তখন দুই ওভার করিয়েই সরিয়ে নেন তাকে। খেলা যখন প্রায় শেষ তখন মুস্তাফিজের ফিরেও আর কিছুই করার ছিল না! 

অথচ রোববার মিরপুর নাকি শারজাহ বুঝতে গিয়ে সময় লাগল কিছুটা, খেলা শুরু হতেই উত্তাল গ্যালারি। চারপাশ থেকে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গর্জন! উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা! গ্যালারিতে কেউ এসেছেন ৩০০ মাইল দূর থেকে, কেউ ছুটি নিয়ে আবার কেউ একদিনের বেতন কাটার হুমকির পরও ছুটে এসেছেন মাঠে। তাদের হাসিমুখটা আর থাকল কোথায়?

যদিও নাসুম দুর্দান্ত শুরু এনে দেন। বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে এই স্পিনার প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন কুশল পেরেরাকে। সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন পেরেরা। ব্যস, উড়ে যায় স্টাম্প। ৩ বলে ১ রানে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার। এরপরই ভয় ধরিয়ে দেন চারিথ আসালঙ্কা-পাথুম নিশাঙ্কা! এই জুটিটা ভাঙলেন সাকিব আল হাসান। 

সুইপ করতে গিয়েছিলেন নিশাঙ্কা। কিন্তু সাকিবের টার্ন করা স্লো বলে বোকা বনলেন, বল লাগল স্টাম্পে। নিশাঙ্কা ফেরেন ২১ বলে ২৪ রানে। একই সঙ্গে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। কারণ ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়ে টাইগারদের যে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি! এরপরই ফের আঘাত সাকিবের। এই স্পিনার আভিষ্কা ফার্নান্দোকে দেখিয়ে দেন সাজঘরের পথ। উত্তাল হয়ে ওঠে শারজাহর গ্যালারি। 

একইসঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিকও বনে যান সাকিব। তার শিকার সংখ্যা ৪১। ৩৯ উইকেট শিকারি শহিদ আফ্রিদি নেমে গেলেন দুইয়ে। কিন্তু এরপরও জয়ের নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি সাকিবের।

এর আগে টস ভাগ্যটাও সঙ্গে ছিল না বাংলাদেশের। টস হারলেও অবশ্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আসেনি। বাংলাদেশ অধিনায়ক টসের সময় বলেও ফেললেন টস জিতলে আগে ব্যাটিংই নিতেন তিনি।

তাহলে তো শাপেবরই হলো! ইনিংসের শুরু থেকেই বাংলাদেশ রান তুলে গেছে দ্রুত। শুরুতে কিছুটা সতর্ক থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চার-ছয়ের ঝড় তোলেন নাইম-মুশফিকরা। একটা তথ্য দিলেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে- প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭২, পরের ১০ ওভারে ৯৯!

শেষটাতে এসে ঝড় তালেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক ৩৭ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসে চার ৫টি, ছক্কা ২টি। মাহমুদউল্লাহ ৫ বলে ১০। তাদের হাত ধরেই শেষ ৬ ওভারে আসে ৬৪। চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়ে যায় বাংলাদেশ!

তবে রান তোলার এই পথটা সহজ ছিল না। পেসার তাসকিন আহমেদের বদলে একাদশে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে নিয়ে মাঠে নামা দল শুরুতে ছিল সতর্ক। ফর্মে না থাকলেও আরেকটা সুযোগ পেলেন লিটন দাস। তবে এবারও ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলেন কোথায়? ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট!

এভাবেই ৬.৩ ওভারে নাঈমের বাউন্ডারিতে বাংলাদেশ পায় ফিফটি। আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেললেও এবার হতাশ করেন সাকিব আল হাসান। দলের সেরা ক্রিকেটার ৭ বলে ১০ করে ফিরলে কিছুটা সময়ের জন্য চুপসে যায় শারজাহর গ্যালারি! তবে লড়ে গেছেন তরুণ নাঈম শেখ। ফিফটি করেন ৪৪ বলে। ১৩.৪ ওভারে বাংলাদেশ পা রাখে তিন অঙ্কে।

নাঈম যখন খেলছিলেন দাপটে, তখন আচমকা বাধ সাধেন বিনুরা ফার্নান্দো। ৬ চারে ৫২ বলে ৬২ রান করা নাঈম শেখকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন এই শ্রীলঙ্কান। কিন্তু অন্যপ্রান্তে ঝড় তুলতে থাকেন অফ ফর্ম কাটিয়ে ওঠা মুশফিক। ৩২ বলে চার ৪টি, ছক্কা ২টিতে পূর্ণ করেন হাফসেঞ্চুরি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন যেন তিনি, ১১ ইনিংস পর এসেছে এই ফিফটি। আর ইতিহাস জানাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৪ ইনিংস খেলে এটিই মুশির প্রথম ফিফটি!

সবই যেন বিফলে গেল। ভালো একটা পুঁজি পেয়েও ঠিকঠাক কাজে লাগানো হলো না। ছন্নছাড়া বোলিং আর ক্যাচ মিসের মহড়া দিলে তো এমনই হয়!

এটি/এনইউ/জেএস