মরুর বুকে কত গল্প যে লুকিয়ে আছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পথ চলতে গিয়ে সেই মরুদ্যান আজ কোথায়? বালির ওপর জেগে উঠেছে অপরূপ সব স্থাপনা। সেই গত শতাব্দীর আশির দশকে যখন এখানে আমিরদের মনে ক্রিকেট বাসনা জেগে ছিল তখন হেসে উড়িয়েও দিয়েছেন অনেকে। আরবদের বিলাসী জীবনের গল্পটা-তো অনেক জানা। কিন্তু কে জানতো এই শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামই একদিন, একসময় হয়ে উঠবে বিশ্বের সেরা এক ক্রিকেট ভেন্যু।

রোববার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ কাভার করতে গিয়ে বসার সুযোগ হলো শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সেই বিখ্যাত প্রেসবক্সে। অন্য অনেক ক্রিকেট প্রেসবক্সের মতো এটি কাঁচে ঘেরা কোন রুম নয়। একেবারে চারপাশ খোলা। বসার জায়গাও খুব বেশি নেই। মিরপুরের শেরেবাংলায় আমরা যেমনটা দেখি তেমন নয়।

শারজাহর প্রেসবক্সে বসেও মনে হচ্ছিল যেন গ্যালারিতে বসেই খেলা দেখছে। দর্শকরা যেমন কাছে ক্রিকেটাররাও অনেকটা হাতেরই নাগালে। একজন দর্শক হিসেবে হয়তো এটা উপভোগের জায়গা থাকে, কিন্তু ক্রিকেট সাংবাদিক হিসেবে মোটেও নয়। বাংলাদেশের নামী ক্রিকেট সাংবাদিক দেব চৌধুরীর ব্যাপারটা ভালো লাগেনি। 

শারজার প্রেসবক্সে বসে অনলাইন নিউজ আউটলেট অলরাউন্ডারের সম্পাদক দেব ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন, ‘দেখুন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এমন সাউন্ড দর্শকদের উন্মাদনার মাঝে খেলা এনজয় করার জন্য ঠিক আছে। সাপোর্টার হিসেবে এটা দারুণ। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে আমাদের ঠাণ্ডা মাথায় ভাবার বিষয় থাকে। পরিবেশটাও একটা বড় বিষয়। বিশেষ করে সাংবাদিকদের জন্য। এটা ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না শারজার মাঠে। আর এখানে ইন্টারনেট সংযোগটাও বেশ দুর্বল, স্লো।’

ভুল বলেননি দেব চৌধুরী। এই রিপোর্টাই যখন লিখছি, শারজার গরম ঘামিয়ে দিচ্ছে। রোদ এসে পড়ছে ল্যাপটপেও। ঘেমে অস্থির সাংবাদিকরাও। সঙ্গে লাউড স্পিকারে ডিজে'র সাউন্ড আর দর্শকদের চিৎকার তো আছেই। এখানে দর্শক হিসেবে খেলা উপভোগ করা যায়, কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে কাজের পরিবেশ নিয়ে তো প্রশ্ন থাকেই।

এই কথাটাই মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের গাজী টিভির প্রতিবেদক তায়েব অনন্ত। রোববার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপের সুপার টুলেয়েলভের ম্যাচের ফাঁকে ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন, ‘ওপেন ক্রাইড ফিল দিচ্ছে শারজার প্রেসবক্সে, এটা ভালো। কিন্তু আশপাশে অনেক শব্দ। গরম পরিবেশে ওপেন স্পেসে কাজ করা যায় না। দেখুন  কাজ করতে এসেছি, আমরা এসি চাইছি না। কিন্তু এই পরিবেশটা কাজে হেল্প করছে না। গরম বাতাসে দেখুন ঘেমে যাচ্ছি।’

এ রিপোর্ট যখন লিখছি তখন শারজার তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। তারমধ্যে এমন খেলামেলা প্রেসবক্সে রোদ এসে পড়ছে গায়ে! কাজটা করাটা তো মুশকিলই। 

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শুরুর গল্পটা অনেক পুরনো। শারজাহ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম এটি।  ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে নির্মিত হয় এই মাঠ। এরপর সময়ের সঙ্গে উন্নতি হয়েছে। বসেছে আধুনিক সব প্রযুক্তি। ২০১০ সালে স্থানীয় ক্রিকেট পৃষ্ঠপোষক আব্দুল রহমান বুখাতির সব কিছু পাল্টে দেন মাঠের। তার আগেই অবশ্য এখানে শুরু হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।

৬ এপ্রিল ১৯৮৪, পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে পথচলা শুরু এই মাঠের। তারপর ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ এরমধ্যে এই মাঠে ৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এবার টি-টোয়েন্টিতে পথচলা শুরু। দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২৭ হাজার হলেও করোনার কারণে ৭০ ভাগ টিকিট ছাড়া হয়েছে। আর গ্যালারিতে দাপট থাকছে লাল-সবুজেরই। 

কাজের বারোটা বেজে গেলেও খোলা প্রেসবক্সে বসে নাঈম শেখ-মুশফিকের রহিমদের ব্যাটিং আর দর্শকদের গগনবিদারি চিৎকার শুনতে বেশ লাগছে!

এটি/এমএইচ