বলা হয়, ‘সকালের সূর্য দেখে দিন কেমন যাবে বোঝা যায়।’ আক্ষরিক অর্থেই কথাটা ফলে গেল বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচের বাংলাদেশ ইনিংসে। প্রথম ওভারে ইংলিশ ‘পার্টটাইম’ অফ স্পিনার মঈন আলীর প্রথম বলটা যেভাবে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পড়ে স্টাম্পের ভেতরে টার্ন করল, সেটি ভালো বার্তা দিল না একেবারেই। মঈন আলীর এক ওভারেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বসে বাংলাদেশ দল। পুরো ইনিংসেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টাইগাররা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেল স্টেইন পিচ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ম্যাচের আগে জানান, স্পিনাররা বাজিমাত করবে আবুধাবির এই উইকেটে। সুপার টুয়েলভ পর্বে ইংল্যান্ড বনাম বাংলাদেশের ম্যাচে সেই প্রভাব দৃশ্যমান। ম্যাচে আগে ব্যাট করে বড় সংগ্রহ করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলের সংগ্রহ ১২৪ রান।

আগের ম্যাচের মতোই একাদশে ৩ স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। পরিবর্তন বলতে ইনজুরির কারণে স্কোয়াড থেকে ছিটকে যাওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গা নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।

ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। তবে বরাবরের মতো আজও ব্যর্থ ওপেনিং জুটি। অফ ফর্মের কারণে ‘সমালোচিত’ লিটন দাস ভালো শুরুর আভাস দিলেও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মঈন আলীর বলে আউট হন ৮ বলে ৯ রান করে। পরের বলেই সাজঘরে নাঈম শেখ। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ৫ রান। পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে সাকিব আল হাসান আউট হন ক্রিস ওকসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ নেন আদিল রশিদ।

সাকিব ৭ বলে ৪ রান করে বিদায় হলে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় মাত্র ২৭ রান। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক ব্যক্তিগত ৯ রানে একবার জীবন না পেলে চতুর্থ উইকেটে তাদের ৩৭ রান পার্টনারশিপটা আরো আগেই শেষ হয়ে যেত। 

মন্থর উইকেটের ফায়দা নিতে আরেক পার্টটাইমার লিভিংস্টোনকে অ্যাটাকে আনেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগ্যান। নিজের প্রথম ওভার হাত ঘোরাতে এসেই সফল লিভিংস্টোন। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া মুশফিককে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ৩০ বলে খেলে ২৯ রানেই থামতে হয় মুশফিককে। ‘বিতর্কিত’ রিভার্সসুইপে নিজের উইকেট বিসর্জন দেন তিনি।

সম্প্রতি নিজেকে হারিয়ে খোঁজা আফিফ হোসেন এ ম্যাচেও ব্যর্থ। তবে তার ৫ রানের ইনিংসটি বড় হতে পারত মাহমুদউল্লাহ ডেকে এনে রান আউটের ফাঁদে না ফেললে। পরে ধৈর্য হারালেন মাহমুদউল্লাহও। যেখানে দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস শেষ করে আসার প্রয়োজন ছিল অধিনায়কের, সেখানে আগ্রাসী হতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন সেই লিভিংস্টোনের বলে। মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন ২৪ বল খেলে ১৯ রানে। ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারানো দলটির সংগ্রহ তখন একশর কোটা ছোঁয়াই চ্যালেঞ্জিং।

শেষদিকে ছোট হলেও বেশ কার্যকরী ইনিংস খেলেন নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদরা। মেহেদী ১১ রান করে আউট হলে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন নাসুম। আদিল রশিদের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারে ২টি ছয়ের সঙ্গে ১ চার মারেন তিনি। শেষ ওভারে আসে ৫ রান। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। সোহান ১১ রানে আউট হন। অপরাজিত নাসুমের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১৯ রান।

বাংলাদেশ দলের বড় স্কোর করতে না পারার পেছনে বড় নিয়ামক ছিল ডট বল। ১২০ বলের ইনিংসে টাইগার ব্যাটসম্যানরা ডট দিয়েছেন ৫১টি।

টিআইএস/এনইউ/জেএস