২৬ জুন চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্র শুরু করবে বাংলাদেশ দল। করোনাভাইরাস সতর্কতায় এই সিরিজে মাত্র একটি ম্যাচই পড়েছে বন্দরনগরীতে। সেই ম্যাচ কাভার কর‍তে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতেই জানা গেল, বিমান ছাড়তে দেরি হবে অন্তত দেড় ঘণ্টা। একই ফ্লাইটে যাত্রার উদ্দেশে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন অপেক্ষায়।

এই দেড় ঘণ্টা সময় যে কখন চলে গেল টের পেলেন না কেউই। ক্রিকেটের মানুষগুলো একসঙ্গে হলে ক্রিকেটের প্রসঙ্গেই যে আড্ডা জমবে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গে ঘুরেফিরে উঠল বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে ঘোর অমানিশা চলছে সেটিই। 

বলে রাখা ভালো, শাহজালাল বিমানবন্দরে অপেক্ষারত যাত্রীদের অধিকাংশই ক্রিকেটার। তবে সবার গন্তব্য অবশ্য চট্টগ্রাম নয়। বুধবার শেষ হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট লিগের এবারের আসর। কদিন পরেই মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ। এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিজ নিজ জেলায় ফিরছেন ক্রিকেটাররা। সব মিলিয়ে বিমানবন্দরে ক্রিকেট আর ক্রিকেটারের মহা উৎসব!

এই আড্ডায় ঘুরেফিরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দৈন্যতার প্রসঙ্গে উঠে এলো! এনিয়ে আলোচনা ঢের‍, তবে সমাধান কোথায়। বিমানবন্দরের দেড় ঘণ্টার আলোচনা বা আড্ডা সমাধান খোঁজাটাও হবে বোকামি। জাতীয় দলের ক্রিকেটে যে হতশ্রী অবস্থা চলছে তার সমাধান যে রাতারাতি পাওয়া যাবে না সেটি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কয়েক দিন আগেই এক বোর্ড পরিচালক যেমন বললেন, ‘ক্রিকেট তো আর রকেট সাইন্স নয়।’

রকেট সাইন্স না হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপর থেকে কালো মেঘ সরানো জরুরি হয়ে পড়েছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে রীতিমত বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দলের সামনে এবার নতুন চ্যালেঞ্জ। তবে সে চ্যালেঞ্জ একেবারেই ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। কিন্তু হারের আগেই তো আর হেরে বসা যায় না! চট্টগ্রাম টেস্টে নেই এই ফরম্যাট থেকে অবসরে যাওয়া অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তামিম ইকবালের সঙ্গে সাকিব আল হাসানও খেলতে পারবেন না ইনজুরির কারণে। একই কারণে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম বাইরে আছেন।

২৬ তারিখ চট্টগ্রাম টেস্টের আগে বাংলাদেশ দল সাগরিকার পাড়ে অনুশীলন করল ২৪, ২৫ তারিখ। সেখানে ঘুরেফিরে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের চোখ আর ক্যামেরার ল্যান্স খুঁজছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তরুণ দুই ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসান জয় আর রেজাউল রহমান রাজাকে। এমনিতেই নতুন কোন ক্রিকেটার জাতীয় দলে ঢুকলে তাদের দিকে বাড়তি নজর থাকে, সমর্থকদের চাহিদা মেটাতে সংবাদমাধ্যমগুলো শুরু করেন নতুনদের নিয়ে বিশ্লেষণ। সম্ভাবনা, পরিণতির সঙ্গে জাতীয় দলের চাহিদা কতটুকু মেটাতে পারবে,  আলোচনায় থাকে সেটিও।

এবার জয়-রাজাকে নিয়ে বাড়তি উন্মাদনা। এর কারণও আছে বৈকি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য জয়ের পরিচয় ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে নতুন করে তুলে ধরার কিছু নেই। ২০২০ যুব বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে পারফর্ম করে আলোচনায় আসেন স্বল্পভাষী এই তরুণ। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে আলাদা করে নিজেকে চেনান। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত পারফর্ম করছেন।

রেজাউর রহমান রাজা অবশ্য খানিকটা আনকোরা। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি সিলেটের এই পেসারের। বাংলাদেশ হাইপারফরম্যান্স ইউনিট থেকে জাতীয় দলের টিকিট পেয়েছেন তিনি। এই তরুণদের হাত ধরে অন্ধকার যুগের অবসান করাতে পারবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা?

সেটি অবশ্য সময় বলে দেবে। তবে বর্তমান একেবারেই ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। এই ফরম্যাটে ১১ ম্যাচের বিপরীতে ১০টায় হার টাইগারদের। একটি ড্রর স্মৃতি নিয়ে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে পাকিস্তানকে আতিথ্য দেবে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রের যুদ্ধ জড়াবে অধিনায়ক মুমিনুল হলের দল। প্রথম চক্রটি শেষ হয়েছিল হতশ্রী পারফরম্যান্সে। ৯ দলের মধ্যে সবার নিচে থেকে শেষ হয়েছিল মৌসুম।

এবার কাজটি আরও কঠিন বাংলাদেশের জন্য। চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরে মোট ছয়টি সিরিজের যে তিনটি দেশের মাটিতে, এর কোনোটিতেই প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকা নয়। নিজেদের মাঠে ধীরগতির অসমান বাউন্সের স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে যাদের নাকাল করে ছাড়ার সুযোগ এবার আর উন্মুক্ত নেই। বরং মুখ হাঁ করে উল্টো তাদেরই গিলে ফেলার হুমকি দিয়ে রাখছে এমন তিন-তিনটি হোম সিরিজ।

ঘরের মাঠে পাকিস্তানের পর ভারত আর শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর বিপক্ষে নিশ্চয়ই ভুলেও মস্থর উইকেটের পথে হাঁটবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আপাতত পাঁচ সিরিজ খানিক দূরে সরিয়ে চোখ পাকিস্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচে। কেনন হবে এই ম্যাচের উইকেটের চরিত্র?

অধিনায়ক মুমিনুল হক বললেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব ভালো। ব্যাটিং উইকেট হবে। ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক হবে। গত সিরিজগুলোতে চট্টগ্রামের উইকেট ভালো ছিল। আমার থেকে আপনারা ভালো বোঝেন, বাইরে থেকে যারা দেখে তারা আরও ভালো বোঝে। চট্টগ্রামের উইকেট সবসময় ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো হয়।’

উইকেট যেমনি হোক সাগরিকার পাড়ে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দে নিজেদের গর্জনের শব্দে মলিন করে দিতে হবে বাংলাদেশকে। নতুবা দেশের ক্রিকেটে যে আমানিশা নেমে এসেছে, সেটিতে বিলীন হয় যেতে হবে আরও।

টিআইএস