বিশ্বকাপ...টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০২১ সালের ‍দুই বড় টুর্নামেন্ট। দুই স্বপ্ন পূরণের গল্প। অপেক্ষা শেষের আনন্দ। দুই প্রতিবেশী দেশের। নিউজিল্যান্ড শিরোপা জিততে পারেনি কখনোই। কাছে গিয়েও ধরা হয়নি বিশ্বকাপ। তাদের বৈশ্বিক শিরোপা এসেছে অবশেষে। তবে সাদা পোশাক ও লাল বলে।

প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। তারা ঘরে তুলেছে ‘এত কাছে তবুও কত দূরে’ থাকা শিরোপা। কেন উইলিয়ামসন একদিকে উঁচিয়ে ধরেছেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা। আরেকদিকে মুখ ভার করে তাকিয়ে ছিলেন বিরাট কোহলি। অভিব্যক্তি ছিল এমন, ‘অধিনায়ক হওয়াতেই কি তোমার এত অভিমান?’

এমনিতে বিশ্বকাপ জিতেছেন। সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ভারতের সফল অধিনায়কও। কিন্তু তার অধীনে কোনো শিরোপা না থাকার আফসোসটা কাটাতে পারেননি। এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ছিল সেটার অবসান ঘটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত মঞ্চ। কিন্তু কোহলি বা তার দল, পারেননি সেটি। 

তাদের অবশ্য বছরটা শুরু হয়েছিল দারুণ কিছুতে। অস্ট্রেলিয়া থেকে এক টেস্ট খেলেই দেশে ফিরেছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু ওই টেস্টেই কি না তারা গুঁটিয়ে গিয়েছিলেন কেবল ৩৬ রানে। আজিঙ্কা রাহানে, রবীচন্দ্রন অশ্বিনরা অবশ্য ওই টেস্ট সিরিজ জিতিয়ে ভুলিয়েছিলেন সে দুঃখ।

পারেননি কেন উইলিয়ামসনরাও। ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সবকিছু সমান-সমান ছিল তাদের। কিন্তু বাউন্ডারির ব্যবধানে শিরোপা চলে গিয়েছিল ইংলিশদের ঘরে। ওই ‘প্রতিশোধ’ তুলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া।

শোকেজ ভর্তি ট্রফি যাদের। তাদের কি না নেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ! বিধাতারও বোধ হয় এমন অপূর্ণতা রাখতে আর ইচ্ছে করেনি। নিউজিল্যান্ড পারেনি একই বছর লাল ও সাদা বলের শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের করে নিতে। বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতে অস্ট্রেলিয়া জিতে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ের আড়ালে অবশ্য থেকে গেল কিছু আবছা ছবি। শাহিন শাহ আফ্রিদির আগুনে বোলিং, বাবার-রিজওয়ানের দুর্দান্ত ব্যাটিং, ভিন্ন রূপের পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়ে গিয়েছিল তারা। আর নামিবিয়ার ‘নতুন দিনের বার্তা’ও দেখা গেছে এই টুর্নামেন্টে। সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি সম্রাজ্য যে গৌধূলী বেলায়, বোঝা গেছে তা-ও।

বছরের শেষদিকে টেস্ট ক্রিকেট রোমাঞ্চ ছড়ালো আবারও। এক ইনিংসে দশ উইকেটের সবগুলো নিয়ে বিরল ইতিহাসে জায়গা পেয়ে গেলেন এজাজ প্যাটেল। ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে এমন কীর্তি গড়েছেন, সেটাও মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে। এই শহরে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটার খেলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে।

এরপরই আবার ভিন্ন অনুভূতির সঙ্গেও পরিচয় হয়ে গেছে এজাজের। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের জন্য তাকে স্কোয়াডেই রাখেনি নিউজিল্যান্ড। আসলে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনারই। তবুও, নিউজিল্যান্ডের হয়ে পারফরম্যান্স করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন এজাজ।

বছরের শেষটা হয়েছে ম্যাড়ম্যাড়ে অ্যাশেজে। দেড়শ বছরের ঐতিহ্যের লড়াই নিয়ে যে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল চারপাশে। সব যেন নিরামিষ করে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। বিশেষত দলটির ব্যাটসম্যানরা। এক প্রান্তে অধিনায়ক জো রুট রানের ফোয়ারা ছুঁটিয়েছেন, আরেকদিকে মিছিল হয়েছে বাকিদের আউট হওয়ার। 

এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭০৮ রান করেছেন রুট টেস্টে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩০ রান করেছেন ররি বার্নস। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকটা কে সেটা জানলে বোঝা যাবে রুট কতটা একা ছিলেন লড়াইয়ে। অতিরিক্ত খাত থেকে ইংল্যান্ডের আসা ৪১২ রান ছিল ইংল্যান্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।

এই বেহাল দশার প্রতিফলন হয়েছে অ্যাশেজেও। পাঁচ টেস্টের সিরিজ তিন ম্যাচ পরই নিশ্চিত করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে কেবল ৮৪ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে নেমেই তারা হেরে গেছে ইনিংস ও ১৪ রানের বড় ব্যবধানে। বোল্যান্ড অবশ্য আগুন ঝরিয়েছেন ৪ ওভারে ৬ উইকেট নিয়ে। 

বছরের শেষটা আলোচিত হয়েছে আরও একটি কারণে। বিরাট কোহলি প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে ছড়িয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে। এই দুই তারকার লড়াইয়ের আগেই পতন ঘটেছে শাস্ত্রী যুগের। ভারতের কোচ এখন রাহুল দ্রাবিড়। সাদা বলের কোনোটিতেই দেশটির অধিনায়ক নেই বিরাট কোহলি। দাপটও গেছে কমে, কয়েক বছর আগেও যেটাকে মনে হতো অসম্ভব ব্যাপার; সেটাই এখন বাস্তব।

আলোচিত ২০২১- এ অনেক কিছুই লেখা হয়েছে প্রথমবার, অনেক কিছু নতুন করে। এর মধ্যেও আলাদা হয়ে থাকবেন কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তান। জো রুট। এজাজ ও বোল্যান্ড। জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঘুরে ক্রিকেটাররা উপহার দিয়েছেন রোমাঞ্চকর সব ক্রিকেটও। দর্শকরা নিশ্চয়ই আনন্দ নিয়ে অপেক্ষায় আগামী বছরের রোমাঞ্চের।

এমএইচ/এটি/এনইউ