সবশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হেড কোচ হিসেবে। দল পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকায় হন বরখাস্ত। তবুও জেমি সিডন্স মনে করেন তার এখনো সামর্থ্য আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার, বিশেষত জাতীয় দলের জন্য ব্যাটসম্যানদের তৈরিতে। লিটন দাসের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ সিডন্স টি-টোয়েন্টি বা সাদা বলের ক্রিকেটে তার ভালো না করার কোনো কারণ দেখেন না। 

সাকিব আল হাসানকে এখনো দরকার বাংলাদেশের, মনে করেন তিনি। একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন আগামী বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে উন্নতির পথ, চার সিনিয়রের বাইরে বাংলাদেশের তাকানোর সময় হয়েছে কি না, নিউজিল্যান্ডে পাওয়া ঐতিহাসিক জয় নিয়ে নিজের ভাবনা।

অস্ট্রেলিয়ায় থাকা বাংলাদেশের ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্সের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন মাহমুদুল হাসান বাপ্পি। 

অবশেষে আপনাকে পাওয়া গেল...

জেমি সিডন্স : হ্যাঁ, আপনি প্রথম ক্রিসমাসের সময় চেষ্টা করলেন। ওইদিন তো ছুটি ছিল। এরপর আপনিই হারিয়ে গেলেন কিছুদিনের জন্য। আজকে আবার সময় পাওয়া গেল!

অনেকদিন ধরেই আপনি বাংলাদেশে ফিরবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক হয়ে গেল। কেমন লাগছে?

জেমি সিডন্স : আমি আসলে এটা নিয়ে খুব রোমাঞ্চিত। অনেকদিন ধরেই আসলে বাংলাদেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শেষবার যখন এখানে কাজ করেছি, প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম জায়গাটার। এখন আবার ফিরে আসতে উন্মুখ হয়ে আছি, সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতেও।

আপনি শেষ কাজ করেছেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসেবে। ওই দল ছিল টেবিলের একদম তলানিতে। পরে আপনাকে বরখাস্তও করা হয়...

জেমি সিডন্স : দেখুন, এটা আসলে অনেক লম্বা গল্প, কীভাবে আমরা পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে গেলাম। কিন্তু আমরা পাঁচ-ছয়টা ফাইনাল খেলেছি, যদিও জিততে পারিনি। ওই দলের সাতজন ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে খেলেছে। তাই আমার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলোয়াড় পাঠানোর রেকর্ড কিন্তু এখনো ভালো।

আপনি যখন ঘরোয়া ক্রিকেটে কাজ করবেন, তখন ওই পর্যায়ের ফল দিয়ে আসলে খুব বেশি কিছু যায়-আসে না। আমার মনে হয় তখন মূল ব্যাপার হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলোয়াড় প্রডিউস করতে পারা। সেই জায়গাটায় সফল হয়েছি বলেই মনে করি। ট্রেভিস হেড, অ্যালেক্স ক্যারি, এরা সবাই আমার অধীনে খেলেই অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে গেছে। 

কিন্তু তারপরও যখন বরখাস্ত হলেন, এরপর কি ভেবেছেন জাতীয় পর্যায়ে কিছুতে ফিরতে পারবেন?

জেমি সিডন্স : অবশ্যই আমি আশা করেছি। ব্যাটিং কোচ হিসেবে আমার যে রেকর্ড, সেটার প্রশংসা এখনও অনেকে করে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও আমার ফেরার অপেক্ষায় ছিল বলেই মনে হয়। ওখানকার তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করতে আমি নিজেও মুখিয়ে আছি।

বিসিবি তো এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারল না আপনি কোথায় কাজ করবেন। নিজের কোনো পছন্দ আছে?

জেমি সিডন্স : ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোনো পছন্দ নেই। এখনও তো বাংলাদেশে গেলাম না। জাতীয় দলের সঙ্গে অথবা হাই পারফরম্যান্স ইউনিট, যেখানেই কাজ করতে দেওয়া হোক আমি খুশি আছি। বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য তর সইছে না সত্যি কথা বলতে। দেখা যাক বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে আমি কী করতে পারি।

চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন?

জেমি সিডন্স : খুব বেশি আসলে না। স্কোর দেখেছি, কিন্তু দিনের পর দিন দেখিনি। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজটা দেখলাম, খুব ভালো কিছু পারফরম্যান্স দেখেছি। আমার মনে হয় ছেলেরা ভালো খেলেছে, তবে ধারবাহিকতা নেই। বাংলাদেশে গিয়ে এই ব্যাপারগুলোতে তাদের সাহায্য করতে চাই। 

কোনো ক্রিকেটারকে কি আলাদা করে ভালো লেগেছে?

জেমি সিডন্স : আমার মনে হয় লিটন দাস। আজকেও সেঞ্চুরি করল। তার ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়েছি। 

লিটন লাল বলে ভালো করেছে, কিন্তু সাদা বলে গেলেই কেন যেন আর পারেন না। আপনার কি মনে হয়, তার সমস্যাটা কী?

জেমি সিডন্স : আমি তাকে সাদা বলের ক্রিকেটে খুব বেশি দেখিনি সত্যি বলতে। কিন্তু তাকে শর্ট বল খুব ভালো খেলতে দেখলাম। বাংলাদেশি কোনো তরুণ ক্রিকেটারের জন্য যেটা খুব আকর্ষণীয় ব্যাপার। আজকে যেই সেঞ্চুরিটা করল, খুব বাউন্সি উইকেট ছিল। এরপর দেখেন, বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা কিন্তু খুব অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে। 

আমার মতে ওর আসলে সাদা বলের ক্রিকেটে বা টি-টোয়েন্টিতে ভালো না করার কোনো কারণ নেই। টেকনিক্যালি খুব ভালো। হাতে অনেক শট আছে। দেখা যাক সাদা বলের ক্রিকেটে সে এখন কী করে। আমি গেলে ওর সঙ্গে কিছু বিষয়ে কাজ করব বলে ঠিক করেছি।

বাংলাদেশ একটা ঐতিহাসিক জয় পেল নিউজিল্যান্ড সিরিজে। এই জয়ের পুরোটা জুড়েই ছিলেন তরুণরা। এই জয়টাকে কীভাবে দেখেন?

জেমি সিডন্স : আমার মনে হয় এটা দুর্দান্ত একটা জয়। টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো এরপর তাদেরকে অল্পে আটকে ফেলা। ব্যাটসম্যান দারুণ পারফর্ম করেছে। বোলারদেরও খুব ভালো লেগেছে। তারা রিভার্স সুইং করিয়েছে, গতি ধরে রেখেছে, প্রতিটি ওভারেই ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছে। 

আমি মুগ্ধ হয়েছি ছেলেদের খেলায়। দ্বিতীয় টেস্টে কিছুটা অধারাবাহিকতার ছাপ ছিল, যেটা আমি আগেও বলেছি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে একটা টেস্ট জেতাও কম কিছু না। বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, আমি গর্বিত। আশা করছি সামনে তারা আরও ভালো কিছু করবে।

বাংলাদেশের এখন যে দল, এটাতে নতুন কী যুক্ত করতে চান?

জেমি সিডন্স : আমি আসলে আগে বাংলাদেশে যেতে চাই। গিয়ে দেখতে চাই কোন পজিশনে আমাকে দেওয়া হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে পারবো ওখানে কী দরকার। তাদের কী জাতীয় দলের জন্য তৈরি করব নাকি ভালো খেলার জন্য। সবকিছুই নির্ভর করা হচ্ছে আমাকে কোথায় দেওয়া হয়, কার সঙ্গে কাজ করি। 

আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশের এখন চার ক্রিকেটারের বাইরে গিয়ে তাকানো উচিত, যাদের বয়স ইতোমধ্যেই ৩০ ছাড়িয়ে গেছে...

জেমি সিডন্স : আমার মনে হয় তাদের বয়সের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কিন্তু এখনও তাদের অনেক কিছু দেওয়ার বাকি। বিশেষত সাকিব আল হাসান, সে এখনও বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। আপনি তাকে কখনোই বাইরে রাখতে পারবেন না। আগামী টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তাকে দরকার। টেস্টে এখনও সাকিবের ব্যাটিং করার জায়গাও আছে। 

যদিও আমি খুব বেশি খেলা দেখিনি। তবে সিনিয়র যারা আছে, এখনও আমার তাদের ভালোই মনে হয়। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে তারা কীভাবে খেলতে চায়। আর জাতীয় দলে খেলার মতো ফিটনেস তাদের আছে কি না। অথবা জাতীয় দল যেটা চায়, সেই পর্যায়ে তারা আছে নাকি। সবকিছু ঠিক থাকলে তারা খেলতেই পারে। 

কিন্তু সাকিব তো নিয়মিত খেলছে না, এটা কি জাতীয় দলে প্রভাব ফেলে? 

জেমি সিডন্স : হয়তো। কিন্তু আমার মনে হয় ইনজুরির কারণে সে অনেকগুলো ম্যাচ মিস করেছে। আমি আসলে নিশ্চিত না কী কারণে সে খেলছে না। তবে এই ব্যাপারটা নিশ্চিত বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হতে যখন প্রয়োজন হবে তখন সে খেলবে। তাকে বিশ্বকাপে জাতীয় দলের দরকার।

এ বছরই তো বিশ্বকাপ। সেটাও আপনার দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে আসলে কোন জিনিসটা নেই?

জেমি সিডন্স : আমার মনে হয় বাউন্সি উইকেটের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এখানে বড় বাউন্ডারি আছে, সেটার জন্যও। নির্ভর করছে আসলে কোন খেলোয়াড়রা খেলছে। কিন্তু শর্টার ফরম্যাটে, বিশেষত টি-টোয়েন্টিতে চার-ছক্কার খেলা। পুশ করে এক রান নেওয়ার যুগ নেই এখন আর। 

যদি বড় রান করতে চান, বড় দলগুলোর সঙ্গে বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তাহলে আপনার বাউন্ডারি মারা শিখতে হবে এবং বাউন্সি উইকেটে কী করে ভালো করতে হয় সেটাও জানতে হবে। 

এখনকার কোচিং স্টাফ কারো সঙ্গে কথা হয়েছে এসব ব্যাপারে?

জেমি সিডন্স : না, এখনও হয়নি। বাংলাদেশে গেলে হবে। তখন আমি নিজের ভাবনাগুলো তাদের জানাতে পারব।

বাংলাদেশে আপনার পরের অধ্যায়টার জন্য শুভ কামনা রইল..

জেমি সিডন্স : আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করি বাংলাদেশে খুব শিগগিরই দেখা হবে।

এমএইচ/এটি