বার্সার দুই গোলদাতা দেম্বেলে ও মেসি/ছবি: বার্সেলোনা

পয়েন্ট তালিকার তিন আর চারে থাকা বার্সেলোনা-সেভিয়ার মধ্যকার লড়াই। সে ম্যাচে গোল করে-করিয়ে পার্থক্যটা গড়ে দিলেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ২-০ গোলের জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়েও উঠে এসেছে কাতালানরা, চলে এসেছে লা লিগার শীর্ষে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে দুই পয়েন্টের দূরত্বে। তবুও কোচ রোনাল্ড কোম্যানের কপালে চিন্তার ভাঁজ। দুই তরুণ পারফর্মার পেদ্রি গঞ্জালেস ও রোনাল্ড আরাউহোকে যে চোটের কাছে হারিয়েছে দল!

ম্যাচের আগে আভাস মিলছিল দুর্দান্ত এক লড়াইয়ের। কোচ ইউলেন লোপেতেগির সেভিয়া অপরাজিত ছিল টানা দশ ম্যাচে। কোম্যানের শিষ্যরাও কম যায় কিসে? টানা ১৪ ম্যাচের হার-না-মানা যাত্রা নিয়ে সেভিয়ার মাঠ রেমন সানচেজ পিজুয়ানে পা রেখেছিল দলটি। 

তবে মাঠের খেলায় মিলল অন্য এক দৃশ্যের দেখা। মৌসুমে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো ৩-৫-২ ছকে খেলতে নামা বার্সেলোনা শুরু থেকেই ম্যাচের লাগাম টেনে ধরেছিল। তবে প্রথম গোলটা পেতে দলটিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচের ২৯ মিনিট পর্যন্ত। নিজেদের অর্ধের একটু উপরে সার্জিও বুসকেটসের পাস থেকে পাওয়া বল মুহূর্তেই দারুণ এক রক্ষণচেরা পাসে সতীর্থ উসমান দেম্বেলেকে দেন মেসি। সেভিয়া রক্ষণকে এরপর গতিতে পরাস্ত করে গোলরক্ষকে বোকা বানাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ফরাসি ফরোয়ার্ডকে। এ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় কাতালানরা। 

সেভিয়ার বিপক্ষে এদিন বার্সা নেমেছিল পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে। রক্ষণে জেরার্ড পিকে, ক্লেমেন্ত লংলের সঙ্গে ছিলেন অস্কার মিনগেসা। আর দুই উইংয়ে ছিলেন জর্দি আলবা আর সার্জিনিও ডেস্ট। সেভিয়ার পায়ে বল থাকলে আলবা নেমে আসছিলেন রক্ষণে, আর ডেস্ট মিডফিল্ডে থেকেই তৈরি করছিলেন শক্তপোক্ত ৪-৪-২ ছক। তাতেই বোতলবন্দি হয়ে পড়ছিল লোপেতেগির কৌশল। ৫০তম মিনিটে প্রথমবারের মতো বার্সা গোলমুখে সেভিয়ার প্রথম শট প্রমাণ দেয় তারই। ইউসেফ এন নেসেরির দুর্বল শটটা ঠেকাতে তেমন কোনো বেগই পেতে হয়নি গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনকে।

এরপর সার্জিনিও ডেস্টের আগুনে শট প্রতিহত হয়েছে ক্রসবারে। পরে দুই দল একবার করে লক্ষ্যভেদও অবশ্য করেছিল। সেভিয়ার এন নেসেরি আর বার্সার ক্লেমেন্ত লংলের দুটো চেষ্টাই বাতিল হয়েছে অফসাইডের খড়গে। 

মেসি এর আগে পরে সুযোগ পেয়েছিলেন অবশ্য। কাজে লাগাতে পারেননি কোনোটিই। এক গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে গোল হজমের শঙ্কাটা তাই উড়িয়ে দিতে পারছিল না বার্সা। তবে মেসিই শেষমেশ ম্যাচের অনিশ্চয়তা দূর করেছেন। ৮৬ মিনিটে তরুণ মিডফিল্ডার ইলাইশ মরিবার সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে বক্সে ঢুকে শট করেন তিনি, প্রথম দফায় সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াশিন বনো ফেরালেও পরের চেষ্টা আর রুখতে পারেননি তিনি। শেষ আট ম্যাচে ১২তম গোলের দেখা পান মেসি, নিশ্চিত হয় বার্সার জয়ও।

শেষ দুই বছরে মেসি ছন্দে থাকলেও টানা আট ম্যাচের প্রতিটিতে গোলের দেখা পাওয়ার কীর্তি দেখাতে পারেননি, যেটা পেরেছেন চলতি মৌসুমে। শেষ সাত অ্যাওয়ে ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতেছে বার্সা, ২০১৩ সালের পর যা এই প্রথম। এমন কীর্তির ফলে রিয়াল মাদ্রিদকে টপকে তালিকার দুইয়েও উঠে এসেছে কোম্যানের শিষ্যরা। শীর্ষে থাকা অ্যাটলেটিকোর সঙ্গেও ব্যবধান কমিয়ে ২ এ নামিয়ে এনেছেন মেসিরা, যদিও বার্সা ম্যাচ খেলেছে দুটো বেশি।

তবে এত কিছুর পরেও স্বস্তি খুব একটা পাচ্ছেন না কোচ কোম্যান। মেসির পর মৌসুমের সবচেয়ে বড় পারফর্মার পেদ্রি গঞ্জালেসকে যে হারিয়েছে দল। স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, পেশির চোটের কারণে কমপক্ষে এক মাস মাঠের বাইরে কাটাতে হবে তাকে। এদিন চোট পেয়েছেন মাত্রই গোড়ালির চোট থেকে উঠে আসা রোনাল্ড আরাউহোও। সঙ্গে জেরার্ড পিকের চোট কোপা দেল রে আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেভিয়া আর পিএসজির বিপক্ষে দুটো ম্যাচকে সামনে রেখে ভালোই দুশ্চিন্তা যুগিয়ে যাচ্ছে কাতালান-শিবিরে।

এনইউ/এটি