দীর্ঘ ১৯ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। হিমালয়ের দেশে নেপালিদের কাঁদিয়ে হিমালয়ের চূড়ায় উঠলো বাংলার বাঘিনীরা। এই বাংলাদেশকে থামানোর সাধ্য যে নেপালের ছিলই না। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অধরা ট্রফিটা অবশেষে জিতল বাংলাদেশ। আর এই জয়ে এখন আনন্দে ভাসছে ফুটবল কন্যাদের গ্রাম ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর। 

কলসিন্দুর গ্রামেরই মেয়ে শামছুন্নাহার জুনিয়র। ম্যাচের শুরুতেই বদলি হিসেবে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু কে জানত এই সুপার সাবই এগিয়ে নেবেন বাংলাদেশকে। ম্যাচের ১৪ মিনিটে তার পা থেকেই লিড পায় বাংলাদেশ। 

মেয়ের গোলেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে খেলোয়াড়সহ গোটা বাংলাদেশ। তাই গর্বিত শামসুন্নাহার জুনিয়রের বাবা নেকবর আলী। তিনি বলেন, আমার মেয়ে নেপাল খেলতে গিয়েছে। তাই তার খেলা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। ফাইনালের দিন অনেক দোয়া করেছি গোটা দলের জন্য, আমার মেয়ের জন্য। আর যখন প্রথম গোলটা আমার মেয়েই করল তখন তো আমাদের আনন্দের শেষ ছিল। মেয়েরা অনেক দূর এগিয়ে যাক। 

সানজিদার বাবা মা

কনসিন্দুর থেকে গড়ে ওঠা আরেক গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার সানজিদা আক্তার৷ ফাইনালের আগে যার ফেসবুক স্ট্যাটাস নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে। 

‘নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা  চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে। আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। গ্রামবাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতিটি পর্ব খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার।’  ফেসবুকে লেখা সানজিদার এসব বাক্য তার বাস্তব জীবন থেকেই নেয়া। সেই অবহেলার অভিমান থেকেই হয়তো অনুজদের বন্ধুর সেই পথ কিছুটা হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাওয়ার ইচ্ছা তার। তাইতো নেপালের মাটিতে তিনিও লড়েছেন যোদ্ধার মতো। 

কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে যখন মাঠ কাপাচ্ছে সানজিদা, মারিয়া, মারজিয়াসহ কলসিন্দুরের আট ফুটবলার। তখন একসময়ের টিটকারি-টিপ্পনী কাটা ব্যক্তিরাও কলসিন্দুর বাজারের চায়ের দোকানে অন্যদের সাথে উল্লাস করছে গোল দেয়া আর জয়ের আনন্দে।

শামসুন্নাহার জুনিয়রের বাবা 

এমন দৃশ্যে যেমন আনন্দিত, তেমনি গর্বিত সানজিদার পরিবার। মেয়েদের জয়ের অনুভুতির কথা জানতেই আনন্দাশ্রু নিয়ে সানজিদা আক্তারের বাবা লিয়াকত আলী বলেন, ‘দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে মেয়েগুলো। কনসিন্দুরের নাম উজ্জ্বল করেছে। ভালো খেলে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।  আনন্দ প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ 

তিনি বলে চলেন, ‘এটা ভেবে আরও ভালো লাগে যে, যখন খেলা শুরু করেছিলো তখন অনেকেই টিটকারি-টিপ্পনী কাটলো। বলতো মেয়েরাও কি ফুটবল খেলে? আজ এই মেয়েরাও দেখিয়ে দিয়েছে। এখন টিটকারি করা মানুষরাই তাদের জয়ে আনন্দ উল্লাস করে । আর বাবা হিসেবে আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়।’

সানজিদার মা জোছনা খানম বলেন, ‘অনেক বাধা-কটু কথা শুনেও সানজিদা খেলা চালিয়ে গেছে। এই কষ্টের কারণে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। আমার ছোট মেয়েকেও খেলায় দিয়েছি। আমার দুই মেয়েই যেন দেশের জন্য আরও ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে সেজন্য সবাই দোয়া করবেন।’

এই কলসিন্দুর গ্রামের আরেক খেলোয়াড় মারিয়া মান্ডার মেঝো বোন পাপিয়া মান্ডা বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে টিভিতে আমার বোনদের খেলা দেখেছি। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এতে আমাদের গ্রামের সবাই আনন্দিত-উচ্ছ্বসিত।’ 

এটি