যে বিদ্যাপীঠ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেছেন, যে বিদ্যাপীঠের মাঠে ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছে সেই বিদ্যালয়ের মাঠেই সংবর্ধিত হলেন সাফ জয়ী পাঁচ পাহাড়ি কন্যা। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটি ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আগে হয়তো হাজারবার এসেছেন। বিদ্যালয়ের ক্লাস, বেঞ্চ, মাঠ, শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের পরিচয় বা সখ্যতা হয়তো অনেক পুরোনো। কিন্তু নিজ বিদ্যালয়ের মাঠে আজকের সকালটা তাদের জন্য সম্পূর্ণ অন্যরকমই ছিলো। তারা হয়তো নিজেরাও কল্পনা করেন নি যেই মাঠ থেকে তাদের ফুটবলের সাথে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই মাঠেই সম্মানিত হবেন তাঁরা। এর আগে বুধবার রাতে ঋতুপর্ণার গ্রাম মগাছড়িতে তিন কিলোমিটার মশাল জ্বালিয়ে তাদের বরণ করে নেয় এলাকাবাসী। 

নিজ বিদ্যাপীঠে এতটা সম্মান পেয়ে উচ্ছ্বসিত ফুটবলাররা। এসময় আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়েন তারা। ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, ‘যে মাঠ থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই মাঠেই এত বড় আয়োজন আমাদেরকে সত্যিই ঋণী করে দিল। আমরা ভাবতেও পারিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য এতবড় আয়োজন করবে। আমরা আমাদের স্যার-ম্যাডামদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই সংবর্ধনা আমাদের দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিল।’

রুপনা চাকমা বলেন, ‘আমরা আমাদের স্যারদের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা আমাদের খেলা শিখিয়েছেন, খেলতে সুযোগ করে দিয়েছেন।’

ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের স্কুলের মেয়েরা দেশের জন্য এতটা সুনাম বয়ে এনেছেন। তাদের কারণে আজ আমাদের বিদ্যালয়েরও সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরাও গর্ববোধ করছি।’

সকাল থেকেই ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হতে শুরু করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রথমে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে একটি শোভাযাত্রা ঘাগড়া বাজারে পর্যন্ত যায়। পরে সেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগ দেন পাঁচ ফুটবলার। সেখান থেকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাদের আনা হয় নিজ বিদ্যালয়ে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে চলে কেক কাটা, মিষ্টি মুখ। বাইরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আতশবাজি ফাটিয়ে উল্লাস করতে থাকে। কোলাহলমুক্ত পাহাড়ি জনপদে খুব বেশি আনন্দের উপলক্ষ না আসলেও এই পাঁচ জনের আগমন উপলক্ষে এলাকায় নেমে এসেছে আনন্দের বন্যা। আনন্দে যোগ দিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা।

বিকাল চারটায় মেয়েদের নিয়ে ঘাগড়া থেকে খোলা ট্রাকে শোভাযাত্রা বের হবে। সেটা রাঙামাটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে বিকাল পাঁচটায় রাঙামাটি চিং হ্লা মারী স্টেডিয়ামে যাবে। সেখানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসনের ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাফজয়ী পাঁচ খেলোয়াড়কে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

মিশু মল্লিক/এটি