কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস গিয়েছে এক দিন আগে। সে দিনটা যে লিওনেল মেসি ভুলে যাননি, সেটা টের পাওয়া গেল তার ইনস্টাগ্রাম দেখে। বাড়তি কিচ্ছুটি লেখেননি, শুধু তার ছবিটা দিলেন স্টোরিতে। তার পরদিনই যে মাঠে নামতে হবে, যে ম্যাচে দলের বাঁচা-মরা নির্ভর করছে অনেকখানি, সে ম্যাচের আগে ক্যাপশন নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে?

তার পরদিন নামতে হলো মাঠে, বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় যেতে হলে যে ম্যাচে জিততেই হবে। হারলে তো বিশ্বকাপই শেষ, ড্র করলে পড়ে যেতে হবে অনেক জটিল-কঠিন সমীকরণের বেড়াজালে। এমন পরিস্থিতি মাথায় রেখে নামতে হলো। দলের অধিনায়ক হয়ে নামলেন মেসি, যেটা তিনি করছেন শেষ দুই বিশ্বকাপ ধরেই। তবে একটা জায়গায় ছুঁয়ে ফেললেন ম্যারাডোনাকে; বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচ খেলেছিলেন ডিয়েগো, মেক্সিকো ম্যাচ দিয়ে মেসির ম্যাচ সংখ্যাও হয়ে গেল সমান।

তার ম্যারাডোনাকে ছোঁয়ার দিনের প্রথমার্ধে দল খেলল তথৈবচ ফুটবল, যার দায় কিছুটা তারও ছিল। তাকে যে তেমন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না! দলের আশাটাও তাই ফিকে হয়ে আসছিল ক্ষণে ক্ষণে। ৬৩ মিনিটে নিজেই দলকে উদ্ধার করলেন সেই অবস্থা থেকে। 

বক্সের বাইরে বলটা পেলেন আনহেল ডি মারিয়ার কাছ থেকে, একটু স্পেসও পেয়ে গেলেন সঙ্গে। তবে ততক্ষণে মেক্সিকোর এক ডিফেন্ডার বল কেড়ে নিতে তেড়ে আসছেন তার দিকে, দুই ডিফেন্ডার ব্যস্ত শটটা, কিংবা নিদেনপক্ষে তার দৃষ্টিটাকে আটকে দিতে, পেছনে তো গিলের্মো ওচোয়া ছিলেনই! মেসি সেখান থেকেই করলেন শট, সব্বাইকে ফাঁকি দিয়ে বলটা গিয়ে আছড়ে পড়ল মেক্সিকোর জালে।

ম্যাচ সংখ্যায় ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন খেলতে নেমেই। এই মুহূর্তটা বিশ্বকাপের গোলের সংখ্যাতেও মেসিকে পাশে এনে বসায় ম্যারাডোনার। বিশ্বকাপে আট গোল ছিল ম্যারাডোনার, এই লক্ষ্যভেদের পর মেসিরও গোলসংখ্যা দাঁড়ায় ৮-এ।

এখানেই শেষ নয় মেসি-জাদুর। দ্বিতীয় গোলটাতেও বলের যোগানটা দিলেন। এরপর এনজো ফের্নান্দেজের দারুণ এক বাঁকানো শট ওচোয়াকে ফাঁকি দিয়ে জড়াল মেক্সিকোর জালে। দুই গোলের লিড পেয়ে আর্জেন্টিনার জয়টা নিশ্চিত হয়ে গেছে তখনই।

গোলে ম্যারাডোনাকে পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন। এই অ্যাসিস্টে করে বসলেন রেকর্ডও। বিশ্বকাপ ম্যাচে একটি করে গোল আর অ্যাসিস্ট করেছেন, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে মেসিই এখন সবচেয়ে ‘বুড়ো’! তার চেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ ম্যাচে গোলের সঙ্গে অ্যাসিস্ট নেই আর কারো! সবচেয়ে কম বয়সে এই কীর্তিটাও এই মেসিরই দখলে, এবার সবচেয়ে বেশি বয়সে করে দেখানোর রেকর্ডটাও গড়ে বসলেন!

এমন সব কীর্তি আর এমন জয়ের পর মেসিই বনেছেন ম্যাচের নায়ক। এমন নৈপুণ্য যে সামনের ম্যাচ(গুলোতে)-এও চাইবে আর্জেন্টিনা, তা বলাই বাহুল্য!

এনইউ