দোহা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে আল খারারা।  আল খারারা প্রায় পুরোটাই মরুভুমি। মরুর বুকে রয়েছে আবার কাতারিদের অবকাশ যাপন কেন্দ্রও। সেই কেন্দ্রগুলোর কাতারি নাম খিমা। 

কাতারের উচ্চ ধনী সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা সরকারের কাছ থেকে খিমার বরাদ্দ নেন। এখানে সপ্তাহে একদিন আসেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সপরিবারে আসেন শেখরা। বাড়ি থেকে খাবার-দাবার সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। এখানে রয়েছে তাদের বিশ্রামের জন্য কয়েকটি কক্ষ। বয়স ভেদে ৩-৪ কক্ষ আলাদা। প্রতিটি কক্ষই খুব সুসজ্জিত। উন্নত মানের সোফা, প্রতি কক্ষে টিভিও রয়েছে। 

মরুভুমিতে দুপুরে গরম থাকে। মরুভূমিতে হাটলে সেই গরম খুব অনুভুত হয় না। বাতাসে শরীর বেশ হাল্কাই লাগে। বালুও অসহনীয় গরম নয়। তবে বিকেলের দিকে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়। আবহাওয়া শীতল হতে থাকে। সেই শীত মোকাবেলার জন্য খিমার রুমগুলোতে রয়েছে হিটিং যন্ত্রও। খিমায় আবার নারী-পুরুষ আলাদা রয়েছে। কিছু খিমা শুধু পুরুষদের আবার কিছু খিমা নারীদের। নারীদের খিমায় নারীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের পুরুষরা আসতে পারেন তদ্রূপ ব্যবস্থা পুরুষ খিমাগুলোতেও। একটি মরুভূমির বিভিন্ন অংশ জুড়ে কয়েকটি খিমা থাকে। শেখের রুচি ভেদে ব্যবস্থাপনা ও ডেকোরেশন ভিন্ন হলেও প্রতি খিমায় রয়েছে নামাজের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। 

আল খারারার এক খিমার দেখভালের দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশের নরসিংদীর যুবক সমীজ উদ্দিন। মরুর মাঝে শেখদের খিমার দেখভাল করাই তার দায়িত্ব। শেখদের খিমার কাছেই একটি ছোট্ট কুড়ে ঘরে তার আবাস৷ তাবুর নিচে কয়েক বর্গ মিটার জায়গার মধ্যে তিনটি সিঙ্গেল খাট। সেই কক্ষেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা। জেনারেটরের মাধ্যমে টেলিভিশন চলে। সেই জেনারেটর দিয়ে পানির সংস্থান আর টেলিভিশন দেখে এই মরুর বুকে নিঃসঙ্গ দিন রাত কাটান বাংলাদেশের অনেকেই। 

কাতারে বেশ কয়েক বছর ধরে থাকা সমীজ উদ্দিন এই পরিবেশে যথেষ্ট মানিয়ে নিয়েছেন। এখন কষ্টের চেয়ে উপভোগই করেন বেশি, ‘সপ্তাহে চার পাঁচ দিন খিমা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দেখাশোনায় সময় চলে যায়। বৃহস্পতিবার শেখরা পরিবার নিয়ে আসেন। ঐ দিন বিকেলে তারা খিমার সামনে বসে আড্ডা দেন খাওয়া দাওয়া করেন৷ আড্ডাস্থল কার্পেট বেছানো ও সেবা করাই কাজ।’

এখন দোহায় রাতে অনেক বাসায় এসি চালিয়ে ঘুমাতে হয়। মরুভুমিতে রাতে সমীজ উদ্দিনদের দুই কম্বলের বিকল্প নেই, ‘রাতের দিকে মরুভূমি ঠান্ডা থাকে। এখন ১০-১২ ডিগ্রি হচ্ছে অনেক সময় ৭ ডিগ্রিও হয়।’ মরুভুমিতে মরুঝড়ও দেখেন মাঝে মধ্যে, ‘ঘন্টায় এখন বাতাসের গতিবেগ ১৭-২০ কিলো। এটা স্বাভাবিক। অনেক সময় ৪০ এর উপরে উঠে তখন এই এলাকা ছেড়ে যেতে হয়। স্বাভাবিক বৃষ্টির সময় একদিন তাবুতে পানি উঠেছিল। এরপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করেছি।’

শেখরা সপ্তাহে একদিন আসেন। আবার অনেক সপ্তাহে আসেনও না। কাতারে বাংলাদেশের অনেক প্রবাসী ও মরুভূমির খিমায় মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়কদের কাছে বেড়াতে আসেন। কাতারি শেখদের মতো তারা খিমায় বিশ্রাম নিতে না পারলেও কুড়ে ঘরে আড্ডা দিয়ে মনের প্রশান্তি জোগান। 

এজেড/এটি