মরক্কোর পারফরম্যান্স ফ্লুক নয়
স্পেন, ব্রাজিল, পর্তুগাল যা পারেনি সেটাই করে দেখিয়েছে মরক্কো। সবাইকে তাক লাগিয়ে আফ্রিকার এই দেশটি বিশ্বকাপের শেষ চারে। দুর্দান্ত ফুটবল খেলে তারা শেষ চারে আসলেও অনেক সমালোচকের কানাঘুষা চলছে আফ্রিকার দেশটির পারফরম্যান্স নিয়ে। আফ্রিকা মহাদেশের সাংবাদিকদের দৃষ্টিতে এই পারফরম্যান্স কোনো ফ্লুক নয়।
আফ্রিকা মহাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে নাইজেরিয়া। সেই নাইজেরিয়া এবার বিশ্বকাপে নেই। নাইজেরিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক কুনলে প্রায় তিন দশক আফ্রিকান ফুটবলের উপর সাংবাদিকতা করছেন। তিনি মরক্কোর পারফরম্যান্সকে কোনোভাবেই ফ্লুক বলতে রাজি নন, ‘তারা অসাধারণ পারফরম্যান্স করেই সেমিফাইনাল খেলছে। ফ্লুকে একটি বা দু’টি ম্যাচ জেতা যায়। তারা গ্রুপ পর্বে বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়াকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নক আউটে স্পেন, পর্তুগালকে হারিয়েছে। এটা কোনোভাবেই ফ্লুক নয়।’
বেলজিয়াম ফিফা র্যাংকিংয়ে দীর্ঘদিন এক নম্বর থাকা দল। স্পেন একবারের চ্যাম্পিয়ন, পর্তুগালে রয়েছে রোনালদোর মতো ফুটবলার। এত বড় পরাশক্তিদের হারানোর নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে মরক্কোকান সাংবাদিক আহমেদ বলেন, ‘মরক্কোর এই দলের অন্যতম শক্তি টিম স্পিরিট ও মানসিকতা। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেরও তারা পরোয়া করছে না।’ টিম স্পিরিটের পাশাপাশি তিনি কোচের একটি পদক্ষেপকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন, ‘কোচ খেলোয়াড়দের পরিবারকে কাছাকাছি রাখছে। যা অনেক ফুটবলারের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণার। অনেকের মা আসছে, অনেকের স্ত্রী, সন্তান। পরিবার কাছে থাকলে অনেক কিছুই সহজ হয় এর প্রতিফলন মাঠে কিছুটা হলেও পড়ছে।’
মরক্কোর এই দলে রয়েছেন অনেক দ্বৈত নাগরিক। যাদের বাবা মা মরক্কান হলেও তাদের অনেকের জন্ম ইউরোপে। অন্য দেশে বেড়ে উঠলেও তারা মরক্কোর হয়ে খেলছেন। দ্বৈত নাগরিক ও প্রবাসী ফুটবলাররাই মরক্কোর মূল ভিত্তি। এতে তেমন সমস্যা দেখছেন না মরক্কান সাংবাদিক, ‘বিশ্ব ফুটবলে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই দলের মূল খেলোয়াড় জিদান আলজেরিয়ার। ২০১৮ সালে ফ্রান্স দলের অধিকাংশই আফ্রিকার সঙ্গে সংযোগ ছিল। ফ্রান্সের এই দলের মূল খেলোয়াড় এমবাপের শেকড় ক্যামেরুনে।’
আফ্রিকার ফুটবলে পরাশক্তি ছিল নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন। তাদের পেছনে ফেলে মরক্কো এখন নতুন শক্তি। আগামীতেও মরক্কোই হবে আফ্রিকার আসল সূর্য এমনটাই মনে করেন নাইজেরিয়ান সাংবাদিক কুনলে, ‘মরক্কো ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য বিড করেছিল। তার মানে তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ২৮ বছর আগেই সেই পর্যায়ের। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স ও ব্রাজিল ম্যাচের ফাইনালে মরক্কোর রেফারি ছিল। সব দিক থেকেই তারা নিজেদের প্রস্তুত করেছে।’
বিজ্ঞাপন
আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সিনিয়র এই সাংবাদিক বিশ্বকাপের মাধ্যমে মরক্কোর ফুটবল আরো এগুবে বলে মনে করেন, ‘সেমিফাইনালে খেলার মাধ্যমে তারা ফিফার বড় একটি অর্থ পাবে। ফাইনালে উঠলে আরো অনেক বেশি। মরক্কোর ফুটবল ফেডারেশন এই অর্থ ফুটবলের পেছনেই ব্যয় করবে। ফলে মরক্কোর সঙ্গে আফ্রিকার অন্য দেশের ব্যবধান আরও বাড়বে।’
এজেড/এনইআর
বিজ্ঞাপন