কাতার বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে মাস তিনেক আগে। তবুও এক মুহূর্তের জন্যও সেই বিশ্বজয়ের মঞ্চ ভুলছেন না আর্জেন্টাইন ফুটবলভক্তরা। কারণ এটি সেই আসর, যেখানে অনেক বছর ধরে লালিত লিওনেল মেসিদের সোনালী স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সেখানে মেসিদের এমন একটি দল ছিল, যারা টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানিয়েছিল, ‘আমরা মেসির জন্য বিশ্বকাপ জিততে চাই।’ মাঠেও যেন সেই কথা প্রমাণের জন্যই তাদের সব প্রচেষ্টার প্রয়োগ করেন। এভাবে একে অপরের জন্য জীবন দেওয়ার মতো বন্ধনও গড়ে ফেলেন মেসির সতীর্থরা।

দুর্দান্ত ফুটবল নৈপুণ্যের সঙ্গে এমন ভালোবাসার মিশেলে বরং বিশ্বকাপ না জিতলেই আক্ষেপ থেকে যেত। এমনকি সব পাওয়া মহাতারকা মেসির ক্যারিয়ারেও থেকে যেত অপূর্ণতা। কিন্তু শেষমেষ আর তা হয়নি। বহু আকাঙ্ক্ষিত সোনালী ট্রফি জয় হয়েছে মরুর বুকে ঝড় তুলে। যে উৎসব আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে আজও চলছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুটি প্রীতি ম্যাচে গোলবন্যা বইয়ে দিয়েছেন মেসি-ডি মারিয়ারা। এরপর আলবিসেলেস্তাদের আর পায় কে। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দের সঙ্গে দেশের মাটিতে পাওয়া এই জয়ে দর্শকরাও তুমুল উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন।

এরপর বিশ্বকাপজয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি মুখোমুখি হন এফএ স্টুডিও’র সঙ্গে। সংবাদমাধ্যম টিওয়াসি স্পোর্টসে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 

‘আমরা এমন এক পর্যায়ে আছি, যেখানে সবকিছুই এত ইতিবাচক এবং এটিই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সেরকম একটা উদাহরণ দেওয়া যায়- কুতি (ক্রিস্তিয়ান রোমেরো), (নাহুয়েল) মলিনা বা লিসান্দ্রো (মার্টিনেজ) একে অপরের জন্য নিজের শিরাও কেটে ফেলতে পারে।’

স্কালোনির মতে সবার এই দৃঢ় বন্ধন তার কাছে উদ্ভট মনে হয় না, বরং দলীয় পারফরম্যান্সেও সেই ছাপ ফুটিয়ে তোলার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। 

এই বছর ফিফার বর্ষসেরা কোচের খেতাব জিতে নেন স্কালোনি। তিনিই যে এবার পুরস্কারটি দখলে নেবেন, সেটি আগেই অনুমেয় ছিল। কেননা বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে তার ট্যাকটিকস ও পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা সাজানোর বিষয়টি আলাদা নজর কেড়েছে। মাঠে এবং মাঠের বাইরে ফুটবলারদের সঙ্গে এক পরিবার হয়ে তিনি ঘুচিয়েছেন সাড়ে তিন দশকের শিরোপাখরা। 

শিষ্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রসঙ্গে স্কালোনি বলেন, ‘সবাই এত কাছাকাছি থাকে, সবকিছু আমাদের অনেক বেশি প্রভাবিত করে, হোক সেটা ভালো কিংবা খারাপ। কারও পারিবারিক সমস্যা থাকলে তাও আমাদের প্রভাবিত করে। আমরা একজন আরেকজনের মতো অনুভব করছি। আমরা মনে করি না যে আমরা কোচ, আমরা (মাঠের) একপাশে দাঁড়াই। আমরা (খেলতে) পাঠাই... তারা স্পষ্টভাবেই জানে তাদের ভূমিকা কী এবং দল হিসেবে খেলাই মূলমন্ত্র। তাদের এই আবেগ সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি তাদের অনেক ভালোবাসি এবং তারাও আমাকে ভালোবাসে।’

এএইচএস