আর্থিক অনিয়মকে ঘিরে টালমাটাল অবস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। এর মধ্যেই আরেকটি বড় ধরনের ত্রুটি সামনে এলো দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হেড কোচের দায়িত্বে আছেন স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। জামাল ভূঁইয়াদের সঙ্গে তার যাত্রা প্রায় দেড় বছরের। অথচ বাফুফের ওয়েবসাইটে জাতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে আবাহনীর পর্তুগীজ কোচ ম্যারিও ল্যামোসের নামই রয়েছে! 

২০২১ সালে অক্টোবর-নভেম্বরে শ্রীলঙ্কায় চারজাতি টুর্নামেন্টের জন্য আপদকালীন কোচ হিসেবে ল্যামোসকে দায়িত্ব দিয়েছিল বাফুফে। সেই টুর্নামেন্টের পরই তার মেয়াদ শেষ হলেও, ওয়েবসাইটে এখনও ল্যামোসের নামই রয়ে গেছে। তার বিদায়ের পর ক্যাববেরার অধীনে দেড় বছর পার হলেও সেটি হালনাগাদ করা হয়নি। একইসঙ্গে হোমপেজে স্থান পায়নি নারী দলের সাবিনাদের ছবি। অথচ সাফ জয়ের পর রাজধানীতে ছাদখোলা বাসে তাদের বিজয় উদযাপন করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন >> বাফুফে সম্পাদক সোহাগকে নিষিদ্ধ করল ফিফা

অন্যদিকে, ওয়েবসাইটে নেই বাংলাদেশ নারী দলের সাফল্যের কারিগর হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের নামও। বাফুফের ওয়েবসাইটের ডিসপ্লেতে টিমস ক্যাটাগরিতে ক্লিক করলে মেনস, ওমেন্স দুটো অপশন আসে। ওমেন্স জাতীয় দলে ক্লিক করলে সাবিনা-সানজিদাদের নাম আসলেও হেড কোচ ছোটনের নাম অনুপস্থিত। 

বাংলাদেশের ফুটবলে গত কয়েক বছরের মধ্যে সেরা সাফল্য সাবিনাদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। বাফুফের ওয়েসবাইটে সাবিনাদের সাফল্য, খোলা বাসযাত্রা এসবের কিছুই হোমপেজে নেই। হোমপেজে চারটি ছবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে। সেগুলো হচ্ছে-ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, সাফ অ-১৮ নারী চ্যাম্পিয়ন, অ-১৬ বালক, অ-১৯ নারী ফুটবলারদের প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা ও ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে প্যালেস্টাইনের চ্যাম্পিয়ন। চারটি ছবির মধ্যে তিনটিতেই রয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

জাতীয় নারী দলের তালিকায় অনুপস্থিত কোচ ছোটন

সভাপতির প্রোফাইলেও খানিকটা বিভ্রাট রয়েছে ওয়েবসাইটে। সালাউদ্দিনের আন্তর্জাতিক অভিষেক ১৯৭৫ সালে উল্লেখিত ওয়েবসাইটে। অথচ ১৯৭৩ সালে মারদেকা টুর্নামেন্টের বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচেই গোল রয়েছে সালাউদ্দিনের। মালয়েশিয়ায় থাইল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশ ২ গোল করেছিল; প্রথমটি এনায়েতুর রহমানের, দ্বিতীয়টি কাজী সালাউদ্দিনের।

আরও পড়ুন >> বাফুফেতে আজীবন নিষিদ্ধ সোহাগ

বাফুফের ওয়েবসাইটে এরকম বেশকিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও কার্যনির্বাহী কমিটির তথ্য অবশ্য হালনাগাদ-ই রয়েছে। ২১ সদস্যের নির্বাচিত কমিটি বাফুফের। নির্বাহী কমিটির ছবির ক্রম পদবীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী প্রদর্শিত হচ্ছে। সাবেক জাতীয় অধিনায়ক আরিফ হোসেন মুন ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মাস দেড়েক আগে। বাফুফে সভাপতি সেই পদত্যাগ গ্রহণও করেছেন (যদিও সভায় অনুমোদিত হয়নি এখনও)। পদত্যাগ করা মুনের ছবি নির্বাহী কমিটি থেকে ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হলেও, দেড় বছর আগে বিদায় নেওয়া কোচের ছবি এখনো বহাল।

আধুনিক ও তথ্য-প্রযুক্তির যুগে একটি দেশের ফুটবলের দর্পণ সে দেশের ফেডারেশনের ওয়েবসাইট। যেখানে বর্তমান কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি অতীত সাফল্য-ইতিহাস ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার সংমিশ্রণ থাকবে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে অবশ্য সেই সুযোগ নেই। দেশ-বিদেশের ফুটবলপ্রেমী ও ফুটবলসংশ্লিষ্টরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি দেশের ফুটবল সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা পায়। ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েসবাইটে সর্বশেষ আপডেট ৯ ফেব্রুয়ারির। দুই মাসের মধ্যে নানা ঘটনা ঘটলেও ওয়েবসাইটে এর কোনো তথ্য নেই। ওয়েবসাইটের নিচে সোশ্যাল একটা অংশ রয়েছে। সেখানে দৈনন্দিন কিছু লিঙ্ক রয়েছে ফেসবুক ও টুইটারের।

আরও পড়ুন >> বাফুফে স্টাফদের মধ্যে আতঙ্ক!

বাফুফেতে উচ্চ বেতনধারী অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা নানা দায়িত্বে থাকলেও ওয়েবসাইটের দিকে খেয়াল নেই কারোরই। ২০২০ সালের আগে মিডিয়া বিভাগের এক্সিকিউটিভ দেখলেও, সেই সময় থেকে এটি মার্কেটিং বিভাগের অধীনেই দেখভাল হচ্ছে বলে জানা গেছে। বেতনভুক্ত এক্সিকিউটিভরা যেমন উদাসীন, নির্বাচিত কর্মকর্তারাও যেন দায়মুক্ত!

এজেড/এএইচএস