রাগবি, ক্রিকেটের দেশে ফুটবল উৎসব
ক্রিকেট কিংবা ফুটবলে নয়। ক্রীড়া বিশ্বে নিউজিল্যান্ড সবচেয়ে পরিচিতি লাভ করে রাগবি খেলায়। নিউজিল্যান্ডে ছেলে থেকে বুড়ো সবার কাছে সমান জনপ্রিয় খেলা রাগবি। খেলাটির ইতিহাসে বেশ সফলও দেশটি। এছাড়া ক্রিকেট বিশ্বেও শক্তিশালী অবস্থানে আছে তাসমান পাড়ের দেশটি। তবে রাগবি-ক্রিকেট পাগল দেশটিতে এই মুহূর্তে উন্মাদনা জাগাচ্ছে ফুটবল।
দেশটির ইডেন পার্কে ফিফা ২০২৩ নারী বিশ্বকাপের পর্দা উঠার সঙ্গে সঙ্গেই একটি ভিন্ন আমেজ বয়ে এনেছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার জন্য কিউইরা এবং নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী সব দেশের মানুষই ইডেন পার্কে উপস্থিত হয়। এখানকার বিখ্যাত হাকা নৃত্য এবং একটি জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আতশবাজি মিলিয়ে উল্লাস ও করতালিতে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিপক্ষ নরওয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড মাঠে উপস্থিত থাকা প্রায় ৪২ হাজার দর্শকের উৎসাহে সাহসী হয়ে মানসিক দৃঢ়তা পায় এবং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল করে। গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের উল্লাস কিউই মেয়েদের আরো মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল। নরওয়ে শেষের দিকে এসে অনেকগুলো আক্রমণ করেও কোনো গোল করতে পারেনি। এর মাঝে কিউইরা একটি পেনাল্টি মিস করলেও তারা রক্ষণভাগে বেশ সতর্ক ছিল।
আরও পড়ুন: বেনজিনা আর মরক্কোর ইতিহাস গড়া জয়
বিজ্ঞাপন
খেলা শেষে মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় হলে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল সমর্থকরা। সেই জয়ের রেশ চলছে এখনো। নিউজিল্যান্ডের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস ও রাস্তাঘাটে মেয়েদের জয় নিয়ে এখনো চলছে বিশ্লেষণ। উদ্বোধনী ম্যাচের এই সাফল্য নারী ফুটবলের জন্য গর্ব এবং প্রশংসার অনুভূতি যোগ করেছে এবং এটি তরুণ মেয়েদের খেলাধুলায় তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। উদ্বোধনী ম্যাচের জয়ের উত্তেজনায় কিউইসহ নিউজিল্যান্ডের অধিকাংশ বসবাসকারী মানুষ ফুটবলে জ্বরে মুখরিত থাকবে, এটি নিশ্চিত। এই জয় নিউজিল্যান্ডকে দেখাচ্ছে যে ফুটবলের প্রতি আবেগ সীমানা জানে না এবং তার জনগণের অদম্য চেতনা নারী ফুটবলের উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
টিকিটের মূল্য ১৫ নিউজিল্যান্ড ডলার থেকে শুরু, তবে অকল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় খেলা দেখানো হচ্ছে। সবচেয়ে জমজমাট আকর্ষণ হারবার বে এর ‘দি ক্লাউড’ নামক স্থানে।
ফ্যান জোন এবং বিনোদন: ‘দি ক্লাউড, অকল্যান্ড হারবার বে’ স্থানটিতে বিভিন্ন ফুটবল-থিমযুক্ত কার্যকলাপ, ইন্টারেক্টিভ গেমস যেমন গোলকিপার রিফ্লেক্স, ভারচুয়াল ফ্রি কিক, ম্যাচের লাইভ স্ক্রীনিং এবং বিনোদন শোসহ একটি উত্তেজনাপূর্ণ ফ্যান জোন সারা মাসব্যাপী আয়োজন করছে। এখানে সমর্থকদের জড়ো হওয়া, টুর্নামেন্ট উদযাপন এবং ছোট বড় সবার একত্রিত হওয়ার একটা কেন্দ্র। এখানে বিশাল এলইডি স্ক্রিন সেট আপ করা হয়েছে, যা নারী বিশ্বকাপের লাইভ ম্যাচগুলো প্রদর্শন করে, এটি ভক্তদের জন্য একটি অনন্য এবং স্মরণীয় অভিজ্ঞতা দিচ্ছে বিনামূল্যে।
সাংস্কৃতিক উদযাপন: অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর বৈচিত্র্য এবং ঐতিহ্য প্রদর্শন করে প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট হচ্ছে। দর্শকরা ঐতিহ্যবাহী পারফরম্যান্স উপভোগ করছে।
ফিফা স্পন্সর এবং অন্যান্যরা বিভিন্ন অ্যাক্টিভেশন, উপহার এবং ইন্টারেক্টিভ বুথের মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে যুক্ত আছে। অনুরাগীরা পুরস্কার জেতা, ভার্চুয়ালি খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফটো তোলা ও ওয়ার্ল্ড কাপের ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডে পৃথিবীর অনেক কালচারের মানুষই আছে এবং কিউইরা অনেক পরিবারকেন্দ্রিক। এ ধরনের আয়োজনে তারা বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে সাথে নিয়ে ফিফা ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ মাঠে এবং অকল্যান্ডজুড়ে উপভোগ করছে, তাই একটা উৎসবমুখর পরিবেশ চারপাশে। এই বিশ্বকাপ সামনের দিনগুলোতে কিউই ফুটবলকে আরো আকর্ষণীয় করবে।
লেখক, আসিফ মোস্তাকিম নিলয়, ইউনিভার্সিটি অফ অকল্যান্ড।