জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে হেরে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টাইন যুবারা। সেই জার্মানরা পরে ফ্রান্সকে হারিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরেছে। এই বিশ্বকাপ দিয়ে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে শিরোপাখরা ঘুচানোর স্বপ্ন ছিল আলবিসেলেস্তেদেরও। কিন্তু তাদের বিদায় হয়েছে টুর্নামেন্টের চতুর্থ অবস্থানে থেকে। তবে চূড়ান্ত মঞ্চে ওঠা না হলেও কিছুটা সান্ত্বনা পেতে পারেন দলটির তরুণ ফরোয়ার্ড আগুস্তিন রুবের্তো। বিশ্বকাপের সেরা গোলদাতার পুরস্কার ‘গোল্ডেন বুট’ উঠেছে তার হাতে।

এর আগে সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হার মানতে হয় আর্জেন্টিনাকে। শেষ পর্যন্ত মালির কাছে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও হারে ৩-০ ব্যবধানে। ফলে রুবের্তো-ক্লদিও এচেভেরিদের চতুর্থ হয়েই দেশে ফিরতে হয়েছে। বিদায় বেলায় গোল্ডেন বুট জিতেছে ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড রুবের্তো, যাকে ‘দ্য জায়ান্ট’ নামে ডাকেন অনেকেই।

জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে হারের ম্যাচে হ্যাটট্রিকও করেছিল রুবের্তো। বয়সভিত্তিক এবং মূল বিশ্বকাপ মিলিয়ে সপ্তম আর্জেন্টাইন হিসেবে তার হাতে এই পুরস্কার উঠেছে। সদ্য সমাপ্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৮ গোল করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচে রুবের্তো সেনেগালের বিপক্ষে গোলের পর, জাপান এবং পোল্যান্ডের বিপক্ষেও একটি করে গোল করেছিলেন। এরপর ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জোড়া এবং জার্মানির বিপক্ষে পায়ের দ্যুতিতে বল জালে জড়ান তিনবার। সেই হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনার ফাইনাল খেলার আশাও আরও কিছু সময়ের জন্য উজ্জীবিত হয়। যদিও টাইব্রেকে সেটি পরিণত হয়েছিল দুরাশায়!

দ্য জায়ান্টখ্যাত রুবের্তোর আগে ২০০৭ সালে সর্বশেষ বয়সভিত্তিক দলের হয়ে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। বয়সভিত্তিক ফুটবলে আর্জেন্টিনা সেবারই সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল। যথারীতি বিশ্বকাপের সঙ্গে ব্যক্তিগত পুরস্কারেও ছিল আর্জেন্টাইনদের দাপট। সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার (৬ গোল) পুরস্কার উঠেছিল আগুয়েরোর হাতে। 

তারও আগে ১৯৩০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বপ্রথম টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন গিলের্মো স্তাবিলে। সেবার তিনি করেছিলেন ৮ গোল। মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩, চিলির বিপক্ষে ২, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ২ এবং উরুগুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন ১ গোল। ফাইনালে উঠলেও স্বাগতিক উরুগুয়ের কাছে হেরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতা হয়নি।

১৯৭৮ বিশ্বকাপের আসর বসেছিল আর্জেন্টিনায়। যেখানে গোল্ডেন বুট জেতেন দলটির তারকা ফরোয়ার্ড মারিও কেম্পেস। দলকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে সেবার কেম্পেস সবমিলিয়ে ৬ গোল করেছিলেন। পরের বছরই অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতেন আর্জেন্টিনার রামন দিয়াজ। কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দলটি আসরের শিরোপাও জিতেছিল। পরবর্তী সময়ে সর্বকালের অন্যতম সেরা হয়ে ওঠা ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্বের ঝলক দেখা গিয়েছিল এই টুর্নামেন্টেই। তবে গোল করায় সবার ওপরে ছিলেন রামন দিয়াজ, করেছিলেন ৮ গোল।

এরপর ২০০১ এবং ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ আর্জেন্টাইন তারকারা গোল্ডেন বুট জিতেছেন। লম্বা বিরতির পর চতুর্থ আর্জেন্টাইন হিসেবে ২০০১ সালে গোল্ডেন বুট জেতেন হাভিয়ের সাভিওলা। টুর্নামেন্টসেরা এই খেলোয়াড় ১১ গোল করেছিলেন আসরটিতে। আর্জেন্টিনাকে হয়ে কাতার বিশ্বকাপ জেতানো লিওনেল মেসির আগমনী বার্তাটা এসেছিল ২০০৫ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে। নেদারল্যান্ডসে আয়োজিত ওই টুর্নামেন্টে মেসি গোল করেছিলেন ৬টি। যা তাকে সেরা খেলোয়াড়ের পাশাপাশি সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও এনে দিয়েছিল।

এএইচএস