ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর সুপার লিগ আয়োজনের সিদ্ধান্তে ফুটবল বিশ্বে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বাংলাদেশেও রয়েছে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর অসংখ্য সমর্থক। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের বিশেষ দিনগুলো উদযাপনও করে বাংলাদেশে এই ক্লাবগুলোর সমর্থকেরা। ক্লাবগুলোর সমর্থন করা থেকে গড়ে উঠেছে নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রুপ। 

এফসি বার্সেলেনো ফ্যানস গ্রুপ অফ বাংলাদেশ (এফসিবিএফজিবি) গ্রুপের অন্যতম এডমিন নিশাত রায়হান তার প্রিয় ক্লাব বার্সেলোনার সিদ্ধান্তে খুবই হতাশ, ‘এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আর্থিক দিক বিবেচনা করেই ক্লাব হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা সমর্থকরা খুবই হতাশ প্রিয় ক্লাবের এই সিদ্ধান্তে। এই টুর্নামেন্টে গেলে আমাদেরকে লা লিগা থেকে বের করে দিবে। এটা ভাবতেই আমাদের খুব খারাপ লাগছে।’

ইউরোপীয়ান সুপার লিগ শেষ পর্যন্ত হলেও তেমন আকর্ষণীয় হবে না বলে মনে করেন এই সমর্থক, ‘যদি শেষ পর্যন্ত এটি মাঠে গড়ায় তখন বড় বড় ক্লাবগুলো সব সময় মুখোমুখি হবে। তখন বড় ম্যাচের আকর্ষণ অনেক কমে যাবে।’ 

বার্সেলোনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হ্যাশট্যাগ আন্দোলন চালাচ্ছেন সমর্থকেরা সুপার লিগের বিরুদ্ধে। তবে এতে খুব একটা কার্যকর কিছু হবে বলে মনে করেন না এফসিবিএফজিবি গ্রুপের মডারেটর আল মামুন সজীব, ‘এই লিগে সম্মতি দিলেই ৪২৫ মিলিয়ন ডলার। যা অনেক বড় অঙ্কের টাকা। ক্লাব এটি ছাড়তে চাইবে না কোনোভাবেই। এই অংকের জন্য আমাদের অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্য পেছনে পড়ে যাবে এটা আমরা চাই না।’

এই সমর্থক সুপার লিগের সমস্যাও খুজে বের করেছেন ইতোমধ্যে, ‘সুপার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন ফ্লোরেন্তিনা পেরেজ। যিনি আবার রিয়াল মাদ্রিদেরও সভাপতি। এখানে স্বার্থের সংঘাত ও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সম্ভাবনা বাড়বে অনেক।’

বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে বৈরিতা রয়েছে। সমর্থকরা যুক্তি-তর্কে মাতেন হরহামেশাই। তবে এই সুপার লিগ ইস্যুতে আবার দুই ক্লাবের সমর্থকরা এক বিন্দুতেই। রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থক আকিব জাভেদ খান আকাশও হতাশ লস ব্লাঙ্কোসদের এই সিদ্ধান্তে, ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে বেশি বার চ্যাম্পিয়ন আমরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগই ইউরোপীয়ান ফুটবলের সৌন্দর্য্য। আমরা ক্লাবের এ রকম সিদ্ধান্তে বেশ বিস্মিত!’

আকাশের মতোই প্রতিক্রিয়া রিয়াল মাদ্রিদের আরেক জন সমর্থক সাদ্দাম হোসেনের, ‘বড় ক্লাবগুলোর বিনিয়োগ বেশি। তাদের চাহিদাও বেশি থাকবে। উয়েফা এই ক্লাবগুলোর স্বার্থ আরো গভীরভাবে আলোচনা বিশ্লেষণ করেই ২০২৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফরম্যাট ঠিক করা উচিত ছিল।’ 

সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে আরও কিছু যুক্তি ও বাস্তবতা তুলে ধরলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক মোঃ নাইম হাসান খান সৌম্য, ‘এখানে মূল বিষয়টি আর্থিক। অন্য কিছু নয়। এখনও যথেষ্ট সময় রয়েছে এটি বাস্তবায়নের। দুই পক্ষ আর্থিকভাবে লাভবান হলে শেষ পর্যন্ত এটি বাস্তবে হতেও পারে।’

সৌম্যর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যুক্তি, ‘চ্যাম্পিয়ন্স লীগ বা ইউরোপ নয় শুধু সারা বিশ্ব ফুটবলের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে এই ১২ ক্লাব। এই ১২ ক্লাব না খেললে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তার সৌন্দর্য্য হারাবে। উয়েফার আর্থিক ক্ষতি হবে। সেই ক্ষতি যদি ১২ ক্লাব তাদের দিয়ে দেয় অথবা ফিফাকেও আর্থিকভাবে সাহায্য করে সেক্ষেত্রে আবার বিশ্ব ফুটবল সংস্থার অবস্থান ঘুরেও যেতে পারে।’ 

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অবস্থান থেকে আরেকটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরলেন এই সমর্থক, ‘এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চারটি ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলছে। ইউনাইটেডকে অনেক সময় শঙ্কায় থাকতে হয় শীর্ষ চারে থাকা নিয়ে। এই লিগ হলে তখন আর সেই শঙ্কা থাকবে না ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেও তারা এটাকে স্বাগত জানাচ্ছে।’

ইউরোপিয়ান সুপার লিগে মূলত বিনিয়োগ করছে আমেরিকান কোম্পানি জেপি মর্গান। প্রাথমিকভাবে ১২ ক্লাব ৪২৫ মিলিয়ন ডলার করে পাবে। এত পরিমাণ বিনিয়োগের রিটার্ন নিয়ে খানিকটা শঙ্কা বাংলাদেশের বার্সা, রিয়াল ও ম্যানইউ সমর্থকদের, ‘ক্লাবগুলোর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা অবশ্যই লাভবান। তারা এই পথে হাটবে এবং শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। বিনিয়োগকারী আমেরিকান প্রতিষ্ঠান এত বড় বিনিয়োগের পর যদি সেভাবে লভ্যাংশ না পায় তখন আবার ভবিষ্যত শঙ্কায় পড়ে যাবে এই লিগ।’ 

গোটা বিশ্বে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টারের সমর্থক রয়েছে। এই ক্লাবগুলো যেখানেই খেলুক তাদের সমর্থক থাকবে তাই ক্লাবগুলো আর্থিক দিকটাই মূখ্য হিসেবে দেখছে বলে ধারণা সমর্থকদের। স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তনের আগে আলোচনা-সমালোচনা থাকেই। শেষ পর্যন্ত ১২ ক্লাব এই দুঃসাহসিক কাজ করতে পারে কিনা এর উত্তর সময় বলবে। 

এজেড/এটি