এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) এর সর্বোচ্চ কোচিং ডিগ্রি এএফসি প্রো লাইসেন্স। বাংলাদেশে এখনো কোনো এএফসি প্রো কোচ নেই। দেশের অন্যতম শীর্ষ কোচ সাইফুল বারী টিটু ২০১৪ সালের দিকে এএফসি প্রো শুরু করেও সম্পূর্ণ করতে পারেননি। আরেক শীর্ষ কোচ মারুফুল হকের উয়েফা এ লাইসেন্স থাকলেও এএফসির প্রো সার্টিফিকেট নেই। তারকা দুই কোচসহ আরও কয়েকজন এ লাইসেন্সধারী কোচ বাংলাদেশেই প্রো কোর্সে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। 

ফুটবলের উন্নয়নের অন্যতম দুই মাধ্যম কোচিং এডুকেশন ও গ্রাসরুট। জাতীয় দলের ক্রমাগত ব্যর্থতার পর বাফুফে অবশেষে এই দুই দিকে নজর দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কোচিং কোর্স হয়েছে। সার্টিফিকেটধারী কোচের সংখ্যা অনেক বাড়লেও কার্যত এদের জ্ঞান নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন রয়েছে। 

এরপরও ফেডারেশন তাদের কোচিং এডুকেশনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। আগামী জুনে যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ নিচ্ছে বাফুফের কোচিং এডুকেশ বিভাগ। প্রথমবারের মতো এএফসি ‘প্রো’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স বাংলাদেশেই হবে। এশিয়ার ফুটবলে এটাই সর্বোচ্চ কোচিং সনদ। 

মারুফুল হক ইংল্যান্ড থেকে অনেক খরচ করে উয়েফা এ লাইসেন্স ডিগ্রি নিয়েছেন। দেশের বাইরে এএফসি প্রো করাও অনেক ব্যয়বহুল। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কোর্সের ফি দেশিদের জন্য ৫ হাজার ও বিদেশিদের জন্য ৭ হাজার মার্কিন ডলার। 

বাফুফের এই কোর্স আয়োজনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মারুফ, ‘দেরি হলেও বাফুফে শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগ নিয়েছে এটা অবশ্যই সাধুবাদ পাবার মতো। প্রো লাইসেন্সধারী কোচের সংখ্যা বাড়লে ফুটবলের জন্যই ভালো হবে।’ সাইফুল বারী টিটু এবার কোর্স সম্পন্ন করতে চান, ‘এটা আমাদের জন্য ভালো সুযোগ। এবার অবশ্যই কোর্স শেষ করব।’ 

ছয়টি মডিউলে হবে প্রো কোর্স৷ প্রায় ২ বছর ব্যাপ্তি। প্রথম মডিউল জুনের ২৮ থেকে জুলাইয়ের ৪ পর্যন্ত। বাংলাদেশে এএফসি এ লাইসেন্সধারী কোচ রয়েছেন ৪৪ জন। এর মধ্যে আবেদন করেছেন প্রায় চল্লিশ শতাংশ। কোর্সে আবেদনকৃত অনেকেই প্রিমিয়ার লিগে কোচিংয়ের সাথে যুক্ত। 

দল সামলানো ও কোর্স সমন্বয় করা কঠিন হবে তাদের জন্য। বাফুফের ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি এই বিষয়ে কাজ করছেন, ‘মারুফ, টিটু, মিন্টু, জাকারিয়া বাবুদের প্রিমিয়ারে কোচিং থাকবে সেই সময়। আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চভাবে সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।’ 

বাংলাদেশে এই কোর্স করতে আসছেন বিদেশি কোচরাও, ‘মালদ্বীপ, ভুটান, ছাড়াও আফ্রিকা, ইউরোপের অনেকে আবেদন করেছে। আমরা অনেক আবেদন পেয়েছি। সবাইকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব না। আমার ব্যক্তিগত অভিমত বাংলাদেশি কোচ থাকবে ৭০-৭৫ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার ১৫ শতাংশ বাকি ১০ শতাংশ অন্য মহাদেশের। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে টেকনিক্যাল কমিটির সভায়।’ বলেন পল স্মলি।  

টেকনিক্যাল কমিটি এই সপ্তাহের মধ্যে সভা করে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা চূড়ান্ত করবে। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সংখ্যাটা ৩০ এর নিচেই থাকবে। ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান কোচদের এএফসি প্রো করার কারণ সম্পর্কে পলের অভিমত, ‘তাদের অনেকের উয়েফা লাইসেন্স থাকলেও এশিয়ায় কোচিংয়ের বড় ক্ষেত্র। এশিয়াতে সামনে এএফসি কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও জাতীয় দলে কোচিং করাতে প্রো সনদ লাগবে। এজন্য হয়তো তারা এই সনদে আগ্রহী।’ 

বাংলাদেশের এই কোর্সের স্বাগতিক হওয়া এবং প্রো কোর্স ইন্সট্রাক্টরদের সম্পর্কে পল বলেন, ‘বাংলাদেশ এএফসি কোচিং এডুকেশন স্কিমের মধ্যে রয়েছে। এএফসি দেখেছে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে কোর্স আয়োজন করছে। এজন্য তারা প্রো আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে। কোর্সে বিভিন্ন টপিকস থাকবে। প্রতি টপিকসে এএফসির সেরা ইন্সট্রাক্টররাই থাকবে।’ 

এজেড/এমএইচ