প্রীতম ও তার হবু স্ত্রী সুলেতা পাল

গোটা বিশ্বের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক ভারতে। গত দুই সপ্তাহ পশ্চিম বাংলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ও মৃতের হার উভয় বেড়েছে হু হু করে। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই জাতীয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার নবীব নেওয়াজ জীবন কলকাতায় পায়ের অপারেশন করান।

ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু সঙ্গে একজন নিয়ে যেতে বললেও জীবন একাই গিয়েছেন। জীবন যে ভিন দেশে একা, এটা মোটেও বুঝতে দেননি ভারতের জাতীয় ফুটবল দল ও মোহনবাগানের ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সব সময় জীবনের পাশেই ছিলেন ভারতের এই ফুটবলার।

জীবনকে দেখতে কখনো হাসপাতালে, আবার কখনো হোটেলে ছুটেছেন প্রীতম। যদিও জীবনের সাথে এবারের আগে খুব একটা পরিচয় ছিল না কলকাতার এই ফুটবলারের, ‘বাংলাদেশের মধ্যে মামুনুল ভাই আর রায়হানের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। ওরা বলেছিল, জীবন যাচ্ছে কলকাতায় ওকে একটু দেখো। তাই জীবনের পাশে সব সময় ছিলাম।’ বলেন প্রীতম। 

অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে জীবন এখন বেনাপোলে হোটেল কোয়ারেন্টাইনে। অলস সময়ে প্রীতমের কথাই মনে হচ্ছে তার বারবার, ‘বন্ধুত্ব কি জিনিস সেটা প্রীতম দেখিয়েছে। বন্ধুত্বের প্রতিদান হয় না। যদি কখনো সুযোগ পাই, প্রীতিমের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলে নিজেকে ধন্য মনে করব।’ জীবনের এই মন্তব্যের সাথে মোটেও একমত নন প্রীতম, ‘ধুর, কি আর করেছি। আরও কিছু করা প্রয়োজন ছিল। করোনা পরিস্থিতি খারাপ না হলে ওকে আমার বাড়ি রেখে সেবা যত্ন করতাম। হোটেলে বরং ওর একটু কষ্টই হয়েছে।’

জীবন ছিলেন পার্ক স্ট্রিটের এক হোটেলে। প্রীতমের বাড়ি থেকে একটু দূরে। এরপরও দুই-একদিন পর পর গিয়ে দেখা করেছেন তার সঙ্গে। প্রীতমের বান্ধবী (হবু স্ত্রী ) সুলেতা পালও পাশে ছিলেন জীবনের। সেও স্কুল কলেজ পর্যায়ে অ্যাথলেট ছিলেন। যে দিন প্রীতম দেখতে যেতে পারতেন না সেদিন সুলেতা দেখতে যেতেন জীবনকে। এমনকি অপারেশনের পর সুলেতাই জীবনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, ‘গত কয়েক দিন যাবৎ আমার বাড়ির আশে পাশে করোনা রোগী অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য আর আমি বের হতে পারি না। শেষ কয়েক দিন তাই সুলেতাই জীবনকে দেখাশোনা করেছে।’

 

সুলেতা দেখাশোনা করলেও প্রীতমের সহায়তা ছিল সার্বক্ষণিক। প্রীতম শেষ কয়েকদিন বের হননি। তার ব্যক্তিগত গাড়িটি জীবনের জন্যই বরাদ্দ ছিল। জীবন গতকাল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এসেছেন প্রীতমের গাড়িতে করেই। 

সীমান্ত বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গতকাল সকাল থেকে বিকেল অব্দি অপেক্ষা করতে হয়েছিল জীবনকে। ঢাকা, কলকাতা, দিল্লি নানা জায়গায় যোগাযোগ চলছিল হরদম বিশেষ অনুমতির জন্য। সুলেতা পাল সেই কঠিন সময় জীবনের পাশে এভাবেই আশ্বস্ত করছিলেন, ‘দাদা, চিন্তা করো  না দেশে পৌঁছাতে পারবে।’

প্রীতমও বাড়িতে বসে ছিলেন না জীবনকে সীমান্তে পাঠিয়ে। তিনিও তার পরিচিত কাস্টমস অফিসারদের বলছিলেন বিশেষ ব্যবস্থায় জীবনকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার একটু আগে একমাত্র জীবনই গতকাল ওপার থেকে এপারে আসতে পেরেছেন। জীবনকে এপারে পাঠানোর পরই সুলেতা গাড়ি নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। আর প্রীতমও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। 

১৪ মে থেকে শুরু হবে এএফসি কাপের দক্ষিণ এশিয়ান জোনের মূল পর্ব। বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে মোহনবাগান খেলবে সেখানে। আবার জুনে জাতীয় দলে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই হবে। ক্লাব ও জাতীয় দল উভয় ক্ষেত্রেই জীবনদের হারাতে চান প্রীতম, ‘মোহনবাগান আশা করি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। আর কলকাতায় আমরা ড্র করেছিলাম। আশা করি কাতারে জিতব।’

নব্বইয়ের দশকে আসলাম-মুন্নাদের সময়ে দুই বাংলার ফুটবলারদের মধ্যে একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এরপর খানিকটা ছেদ পড়েছিল। প্রীতম-জীবন সেই পুরনো সম্পর্ক আবার নতুন করে পথ দেখাচ্ছে দুই বাংলার ফুটবলে। 

এজেড/এটি/টিআইএস